চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

বই পড়ার আনন্দ

অধ্যক্ষ এম সোলাইমান কাসেমী

৬ জুলাই, ২০১৯ | ১২:৫৫ পূর্বাহ্ণ

ব ই মান ব সভ্য তার শ্রেষ্ঠ প্রকাশ মাধ্যম। যুগ যুগ ধরে জ্ঞানপিপাসু মানবগোষ্ঠী তার যাত্রাপথে যে বিচিত্র অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছে তারই লিখিত রূপ বই। মানবজীবনে অনেক পেয়েছে এবং হারিয়েছে আরও বেশি। মানুষ অনেক স্বপ্ন দেখেছে কিন্তু তার অনেক স্বপ্নই থেকে গেছে অপূর্ণ। মানুষের এ প্রাপ্তি ও বঞ্চনা, সফলতা ও ব্যর্থতা, আশা ও আকাক্সক্ষার একত্র প্রকাশ বই। বই মানুষকে চিরকাল দান করেছে সম্মুখে এগিয়ে চলার প্রেরণা। তাই বই রচনা ও বই পাঠ মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় আকাক্সক্ষা। সুধী ব্যক্তিরা বলেন, “জবধফরহম সধশবং ধ সধহ ঢ়বৎভবপঃ” কেবলমাত্র অধ্যয়নই মানুষের জীবনে পরিপূর্ণতা দান করতে সক্ষম।
বলা বাহুল্য, বাস্তব জীবনের প্রতিটি মানুষই অপূর্ণতার বেদনায় আক্রান্ত। তাই বাস্তবে অপূর্ণ মানুষ বইয়ের মাঝে পূর্ণতার স্বাদ পেতে চায়। শুধু তাই নয়, বিশাল ব্রহ্মান্ডের পরিপ্রেক্ষিতে মানুষের ব্যাপক অভিজ্ঞতা লাভের একান্ত প্রয়োজন।
তাই বই পাঠ মানুষের অস্তিত্ব রক্ষার প্রয়োজনে অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মানুষ কেবলমাত্র খেয়ে পরে বেঁচে থাকার জন্যই পৃথিবীতে আসেনি। তার অনেক সাধ, অনেক স্বপ্ন। মানুষ পেতে চায় অনিকেত জগতের অফুরন্ত আনন্দ। এ আনন্দ পবিত্র, এ আনন্দ শাশ^ত প্রেরণার উৎস। মানুষের তাই সাংসারিক জগতের বাইরে কোন না কোন বাড়তি শখ থাকে। তার মধ্যে বই পড়া অতি উন্নত শখ। বই পড়লে আমরা কেবল নানা বিষয়ে জ্ঞান লাভ করি না, পাই অনন্ত আনন্দধারা। কবি ওমর খৈয়াম দুঃখ কষ্টময় বাস্তব সংসারের নিষ্কলুষ আনন্দের রোমান্টিক পরিবেশ কল্পনা করেছেন। তাঁর সেই কাল্পনিক জগতে রয়েছে প্রিয়সী, রুটি, মদ, নির্জন বনভূমি এবং একটি মহৎ বই। কবির উল্লিখিত জিনিসগুলোর মধ্যে কেবলমাত্র বই চির নবীন, চির অমর আনন্দ সাথী হিসেবে টিকে থাকতে পারে। এখানে বইয়ের শ্রেষ্ঠত্ব অনস্বীকার্য। আনন্দ বেঁচে থাকার স্বার্থেই প্রয়োজন। কিন্তু বাস্তব সংসারে নিঃস্বার্থ, নিঃশর্ত এবং নিষ্কলুষ আনন্দ খুঁজে পাওয়া বড় কঠিন।
আমরা দেশ ভ্রমণ করে আনন্দ পেতে পারি। কিন্তু সেখানে অটুট স্বাস্থ্য ও অঢেল পয়সার প্রয়োজন। তা অনেকেরই নেই। আমরা বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনের সাথে মেলামেশা করেও আনন্দ লাভ করতে পারি। কিন্তু কোন মানুষই নিঃস্বার্থ নয়। তাই মানুষের সঙ্গে বেশি মেলামেশাতে অনেক সময় স্বার্থের দ্বন্দ্ব বেঁধে যেতে পারে। আমরা ধন সঞ্চয় করে মানসিক তৃপ্তি পেতে পারি। কিন্তু ধন সঞ্চয়ে রয়েছে এক প্রচ- নেশা এবং এই নেশা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষকে করে চরম স্বার্থপর এবং বিপথগামী। আমরা তীর্থ ক্ষেত্র পরিভ্রমণ করে, ধর্ম-কর্ম পালন করে, লোকসেবা করে, ছবি এঁকে, কবিতা লিখে, গান গেয়ে আনন্দ পেতে পারি। কিন্তু এসব উৎস থেকে আহরিত আনন্দ সকলে সব সময়ে সমানভাবে পেতে পারে না। এ সবের তুলনায় বই সর্বশ্রেষ্ঠ আনন্দ মাধ্যম। কারণ বই একটি, দুটি নয় নানা বিষয়ে ও নানা রুচির ওপর অগণিত বই রচিত হয়েছে এবং হচ্ছে। কাজেই আমরা প্রত্যেকেই স্ব স্ব রুচিমাফিক বই বেছে নিতে পারি এবং আমাদের বাছাই করা বইয়ে চিরকালের আনন্দ খুঁজে পেতে সক্ষম হই।
আমরা বাস্তবে সংসারে অনেক সময়েই বিপদগ্রস্থ হই। বিপদ আসে বাইরে থেকে, বিপদ আসে মনের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব থেকেও। আর সেই বিপদ মুহূর্তে অন্য মানুষের কাছে পরামর্শ নিতে গেলে অনেক সময়েই বিভ্রান্ত হই। কিন্তু প্রকৃত বইটি বিপদের সময়ে যথার্থ বন্ধুর মতো আমাদের সঠিক পরামর্শ দান করে।
মানুষ যখন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে, বার্ধক্যে-জরা-ব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে যায়, তখন সে বড্ড নিঃসঙ্গ মুহূর্তে কেবলমাত্র একটি সুন্দর বই-ই প্রকৃত আনন্দ দিতে পারে।
তাই মানুষের অনেক আনন্দের মাঝে বই পড়ার আনন্দ সর্বোৎকৃষ্ট। কারণ, বই তাকে নরকের প্রজ¦লিত অগ্নির মাঝে ফুলের হাসি ফোটানোর দুঃসাহস দান করে।

লেখক : শিক্ষক, কলামিস্ট।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট