চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বই পড়ি কেন পড়ি

আরিফ ইকবাল নূর

৫ জুলাই, ২০১৯ | ১:০০ পূর্বাহ্ণ

‘ভালো খাদ্য পেট ভরে কিন্তু ভালো বই মানুষের আত্মাকে পরিতৃপ্ত করে।’ স্পিনোজারের এই বিখ্যাত উক্তির মর্মার্থ তারাই বুঝতে পারে যারা নিয়মিত বই পড়ে। একটি সুন্দর বই হচ্ছে একটি রহস্যময় সুন্দর ভুবনের দরজা। প্রতিটি পৃষ্ঠা মানুষকে সাহায্য করে রহস্যের জট খুলে কাহিনীর গভীরতায় টুকতে, শেখায় জীবনবোধ, সংগ্রাম, অনুপ্রেরণা।
বই মানুষকে নিয়ে যায় সুদূর অতীতে এবং টাইম মেশিন ছাড়াই হাজার হাজার বছর সামনের ভবিষ্যতে। মানুষ বইয়ের মাধ্যমে অতীত পূর্বপুরুষের কাছাকাছি চলে যেতে সক্ষম হয়। তাদের জীবন-যাপন,
আচার-আচরণ, ইতিহাস, সংগ্রাম ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারে। আর বই শুধুমাত্র জ্ঞান অর্জনের জন্য অথবা তথ্য আহোরণের উপায় তা কিন্তু নয়।
একটা ভালো গল্পের বই বা উপন্যাস মানুষকে হাসতেও পারে আবার কাদাঁতেও পারে। মোটকথা একটা চমৎকার বই মানুষের অনুভূতিগুলো নিয়ে দারুণভাবে খেলা করতে পারে। সিইও জিগ্গি জর্জ বলেন, ‘মানুষ যখন বই পড়ে তখন সে তার উন্নয়নটা চোখের সামনে দেখতে পায় না। কিন্তু অনেকটা ভিডিও চিত্রের মতো অনেক কিছুই মানুষের মনে গেথেঁ বসে যায়। আর সেটাই তার মনের বিকাশে সহায়তা করে।’
বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির যোগে আমরা দিন দিন বই পড়া থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। আমরা যারা শিক্ষার্থী আমাদের তো বই পড়ার সমান্য সময়টুকুও থাকে না।
আমরা দিন বই পড়া থেকে দূরে সরে গিয়ে নিজেরা নিজেদের ক্ষতি করতেছি।
আমাদের বইয়ের সাথে গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলা প্রয়োজন। নেপোলিয়নের একটা উক্তি আমাকে সবসময় নাড়া দিতে থাকে। তিনি বলেছিলেন, ‘অন্তত ষাট হাজার বই সঙ্গে না থাকলে জীবন অচর’। আমরা এখন একটু চিন্তা করে দেখি আমাদের কার কতটা বই সঙ্গে রয়েছে।
দের্কাতে বলেছিলেন, ‘ভালো বই পড়া মানে শতাব্দীর সেরা মানুষের সাথে কথা বলা’। অতীতে যারা সফলতার শিখরে পৌছতে সক্ষম হয়েছিলেন, আমরাও তাদের জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে সফলতার শিখরে আরোহণ করতে পারি। আরেকজন বিখ্যাত মনীষী জন মেকলের উক্তি মনে পড়লে শরীরের লোম খাড়া হয়ে যায়। তিনি বলেছিলেন, ‘প্রচুর বই নিয়ে গরীব অনাহারে চিলোকোঠায় থাকবো। তবুও এমন রাজা হতে চাইনা, যে বই পড়তে ভালোবাসে না।
আরেকটা বিষয়ে আমাদের সজাগ থাকা দরকার। সেটা হল বর্তমানে বাজারে হরেক রকমের বই পাওয়া যায়। কিন্তু সব বই আমাদের আত্মাকে পরিতৃপ্ত করতে পারে না। তাই আমাদের ভালো পড়া উচিত। (ইড়ড়শং ধহফ ভৎরবহফং ংযড়ঁষফ নব পযড়ংবহ ধহফ ভব)ি এটা একটি শত বছর সগৌরবে বেঁচে থাকার মত কথা। যে বইটি তিনবার পড়তে ইচ্ছা করবে না, সে বইটি ক্রয় করবেন না, বা পড়বেন না। আমার ছোটবেলা শিরোনামে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ’র একটি প্রবন্ধ পড়েছিলাম। তিনি বলেছেন, আমার ছোটবেলা থেকে বটতলার বাজে উপন্যাস পড়তে ইচ্ছা করত না। কারণ বটতলার বাজে উপন্যাস বা বই মানুষের কোন উপকার সাধন হয় না। বর্তমানেও অনেক বটতলার বাজে বই রয়েছে, যা পড়লে পাঠকের মনের অনুভূতির বিকাশ ঘটায় না। তাই ভালো বই পড়া দরকার।
বই পড়লে জ্ঞান বৃদ্ধি পাবে সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু আপনার কি জানা আছে শরীর সুস্থ রাখতেও বই পড়ার অভ্যাস দারুণভাবে সাহায্য করে। তাই তো সুচিকিৎসকরা নিয়মিত ১ঘণ্টা বই পড়তে পরামর্শ দিয়ে থাকে।
এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, আজকের যুগে যেসব রোগে নতুন প্রজন্ম বেশি মাত্রায় ভুগছে তার বেশিরভাগের সাথে মানসিক চাপের সরাসরি যোগ রয়েছে।
আর বই পড়ার অভ্যাস এমন ধরনের সমস্যাকে দূর করতে সহায়তা করে। সেই সাথে হার্টের রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়বেটিস, স্ট্রোক প্রভৃতি রোগে আক্রান্ত হওয়াের আশঙ্কাও হ্রাস করে।
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস করলে ব্রেনের কর্মক্ষমতা বাড়তে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবে মস্তিস্কের একটি বিশাল অংশের ক্ষমতা এতটাা বৃদ্ধি পায় যে বুদ্ধির ধারও বাড়তে শুরু করে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট