চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

বিশ^ায়ন ও বাংলাদেশ

শাহাবউদদীন আহমদ

৪ জুলাই, ২০১৯ | ১:০৬ পূর্বাহ্ণ

বর্তমান সময়ে বিশ^ায়ন একটি আলোচিত বিষয়। অর্থনীতিবিদ থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদসহ প্রায় সকলে বলেন, বিশ^ায়নের অমোঘ নিয়মের সাথে বাংলাদেশও যুক্ত হওয়ার কথা। আমরা প্রায়ই শুনি আজকের পৃথিবী বিশ^ায়ন দ্বারা পরিচালিত। বিশ^ায়নের প্রেক্ষাপটে আমাদের দেশে অর্থনীতিতে কি প্রভাব পড়েছে তার একটা সমীক্ষা দেখা যাক। বাংলাদেশ বিশ^ায়ন প্রক্রিয়ায় বর্তমান পর্যায়ের সাথে যুক্ত হয় ৮০.০ দশকের মাঝামাঝি। এরশাদের সামরিক শাসনকালে এসে বাংলাদেশ পুরোপুরি মুক্তবাজার অর্থনীতিক নীতি গ্রহণ করে। ১৯৮৫-৮৬ সালে বাংলাদেশ বিশ^ব্যাংকের কাঠামোগত সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করে যার মূল বিষয় ছিল বিরাষ্ট্রীয়করণ অর্থাৎ রাষ্ট্রায়ত্ত্ব খাতকে ক্রমাগত সংকুচিত করা, ব্যক্তিগতায়নকে উৎসাহিত করা, দ্বিতীয়, উদারীকরণ যার মাধ্যমে বাজারকে মুক্ত করে দেয়া, তৃতীয় সরকারি আয়-ব্যয়ের সামঞ্জস্যে বিধান, যার মূল দিকগুলো ছিল ভর্তুকি প্রত্যাহার, উন্নয়ন ব্যয় কামানো এবং সামাজিক খাতে ব্যয় সংকোচন করা। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের গড় শুল্ক ছিল ৫৭.৩ শতাংশ। ১৯৯৩-৯৪ সালে সে শুল্ক হার কমিয়ে ৩৬ শতাংশে আনা হয়। এভাবে বাংলাদেশের বাজার বিশে^র জন্য উন্মুক্ত হয়ে যায়। এর ফলে দেশীয় শিল্পগুলো তীব্র প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হয় এবং বিপুল শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রায় অচল হয়ে পড়ে পরবর্তীতে বন্ধ হয়ে যায়। কেউ কেউ বলে বেড়ান আমাদের গার্মেন্টস শিল্প বিশ^ায়নের সুফল। তাদের উদ্দেশ্য বলি, গার্মেন্টস আমাদের রপ্তানী আয়ের যে ৭৬ শতাংশ ভাগ দিচ্ছে সেটা মোট মূল্য। এর দুই তৃতীয়াংশই ব্যয়িত হয় প্রয়োজনীয় কাঁচামাল কিনতে। বাংলাদেশে গার্মেন্টস শিল্প মাত্র ২৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন হয়ে থাকে। পশ্চাৎ সংযোগের মাধ্যমে এমূল্য সংযোজন বৃদ্ধির কথা বলা হলেও সেটা হয়েছে কম। বিশ^ায়ন প্রক্রিয়ায় এই গার্মেন্টস শিল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের নারীদের সামনে নিয়ে এসেছে। কিন্তু একই সালে বিশ^ায়ন প্রক্রিয়া নারীদের অবমাননাও করেছে। তৃতীয় বিশে^র অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশের অনেক নারীও আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী ও দেহ ব্যবসায়ী চক্রের শিকার হচ্ছে।
বিশ^ায়ন প্রক্রিয়া বাংলাদেশের মানুষকে বহির্গমনমুখী করে তুলেছে। উন্নত জীবন ও কর্মসংস্থানের আশায় বাংলাদেশের গ্রাম-গ্রামান্তরের মানুষ বেড়িয়ে পড়ছে বিশে^র বিভিন্ন দেশের উদ্দেশ্যে। এদের একটা বড় অংশ অভিবাসন হয়ে লোক যাচ্ছে বিদেশে। বিশ^ায়নের ফলে সবচেয়ে যেটি উদ্বেগজনক বিষয় তা হল, ধনী দরিদ্রের আয়ের ক্ষেত্রে বৈষম্য। আমেরিকার ধনী ১০ শতাংশ জনগণের আয় বিশে^র ৪৩ শতাংশ দরিদ্র জনগণের আয়ের সমান। পৃথিবীর ধনী ৫ শতাংশ মানুষের আয় দরিদ্র ৫ শতাংশের ১১৪ গুণ। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও কথাটি সত্য। যখন বিশ^ায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয় তখন বাংলাদেশের দরিদ্রতম ২০% জনগণের মাথাপিছু আয় ছিল ১৫৩১ টাকা আর ধনী ২০% জনগণের মাথাপিছু আয় দাঁড়ায় ছিল ১০,০৮৫ টাকা। ১৯৯৫-৯৬ সালে দরিদ্রতম ২০% মানুষের আয় দাড়ায় ১৫৭১ টাকা। আর ধনী ২০% জনগণের আয় দাড়ায় ১৩,৭৮২ টাকা। এখন আয় বৈষম্য আরো বেড়েছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও বিশ^ায়নের সুবিধা ভোগ করছে মূলত ধনীরাই।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট