চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

প্রসঙ্গ ভিক্ষাবৃত্তি ও কর্মসংস্থান

জুবায়ের আহমেদ

৩ জুলাই, ২০১৯ | ১:০১ পূর্বাহ্ণ

পরিশ্রম সৌভাগ্য আনে, অলসতা আনে দরিদ্রতা। অলস মানুষের সংখ্যা নেহাতই কম নয়। শারীরিক ভাবে সক্ষম মানুষের ভিক্ষা প্রার্থনাকে ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় ভাবে নিরুৎসাহিত করা হলেও এসব মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছেই। ব্যস্ত সড়কের মোড়ে, অফিস আদালতের পাশে কিংবা জনবহুল প্রতিটি স্থানেই ভিক্ষা প্রার্থীর আনাগুণা। যেখানে শারীরিক ভাবে উপার্জনক্ষম মানুষের চেয়েও সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের সংখ্যা বেশি। যাদের মধ্যে দশ বছর বয়সের কম শিশু থেকে শুরু করে পঞ্চাশোর্ধ বহু মানুষ আছে। আবার অনেক সময় দেখা যায় দেখতে শুনতে অনেক সুদর্শন, কিন্তু মুখ লুকিয়ে হাত পেতে সাহায্য নিচ্ছেন রাস্তার দু’পাশে বসে। এদের মধ্যে অনেকেই চুরি, ছিনতাই, মাদক বহনসহ নানা প্রকার অপরাধজনক কর্মকা-ে লিপ্ত হচ্ছেন।
শিক্ষিত বেকারদের জন্য পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান এখনো নেই বাংলাদেশে, তা যেমন সত্য তেমনি যারা লেখাপড়া করেনি বা স্বল্পশিক্ষিত, তাদের কাজের মাধ্যমের অভাব নেই বাংলাদেশে। দৈনিক ভিত্তিতে বহু কাজের মাধ্যম থাকার পাশাপাশি গার্মেন্টস, মিল, কারখানাসহ বহু বেসরকারী প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে এলাকাভিত্তিক ছোট বড় দোকান, হোটেলসহ দুটো খাবার জোগাড় ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করার মতো পর্যাপ্ত কাজ আছে তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কিন্তু তারপরও দু’হাত পেতে ভিক্ষা প্রার্থনাকারীর সংখ্যা কমছে না বরং দিন দিন বাড়ছেই, যেখানে শারীরিক ভাবে সামর্থ্যবান মানুষের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি।
যারা সত্যিই উপার্জনক্ষম এবং পরিবারে কেউ উপার্জন করার মতো কেউ নেই, তাদের ভিক্ষা প্রার্থনা স্বাভাবিক হলেও সুস্থ সবল মানুষের ভিক্ষা প্রার্থনা কাম্য নয়। কাজ যতই ছোট হোক তাকে ছোট মনে করতে নেই বরং সৎপথে ইনকামের যৎসামান্য অর্থও মহামূল্যবান কিন্তু সুস্থ সবল মানুষগুলো কেনো ভিক্ষাবৃত্তিতে আকৃষ্ট হচ্ছে তার একটা দৃশ্যমান কারণ, মানুষের কাছে হাত পাতলেও এখানে কোন ঝামেলা নেই বরং ভালোই আয় হয়, এ ভাবনা থেকে মানুষগুলো ভিক্ষাবৃত্তিতে নামলেও তা কাম্য নয়।
যারা ভিক্ষাবৃত্তিতে লিপ্ত হয়, তাদের মধ্যে সুস্থ স্বাভাবিক নারী পুরুষেরা কেনো কাজের ব্যবস্থা না করে মানুষের কাছে হাত পেতে টাকা নিচ্ছে। এর কোন সুনির্দিষ্ট কারণ নেই। মহিলাদের বাসা বাড়ীতে কাজ করতে গেলে নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হলেও গৃহস্থলীর কাজ ছাড়াও গার্মেন্টসসহ বহু বেসরকারী প্রতিষ্ঠান আছে যেখানে কাজ করার সুযোগ থাকে। অধিকন্তু বহু নির্মাণশ্রমিকও আছে যারা নারী, কায়িক পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করছেন, তবুও কারো কাছে হাত পাততে রাজী নন তারা। পুরুষদের জন্য আছে আরো বহু কাজের সুযোগ, তারাও সেদিকে না গিয়ে সহজ আয়ের রাস্তা হিসেবে ভিক্ষাবৃত্তিকে বেছে নিয়েছেন অথচ বহু মধ্যবয়স্ক ও বৃদ্ধ ব্যক্তিরা রিক্সা চালানো, নির্মাণশ্রমিক, নিরাপত্তাকর্মী, ছোটখাটো বহু ব্যবসা, দৈনন্দিন ভিত্তিতে বহু কাজসহ কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
রাষ্ট্রের সার্বিক কল্যাণ ও উন্নতি করার দায়িত্ব সরকারের উপর হলেও নাগরিকদেরও থাকে কিছু দায়িত্ব। শিক্ষিত নাগরিকদের জন্য পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান না থাকলেও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার নাগরিকদের যোগ্যতানুসারে বিভিন্ন কমংসংস্থান বৃদ্ধির চেষ্টা করছেন। তবে লেখাপড়া না জানা নারী পুরুষদের জন্য বহু কর্মসংস্থান থাকলেও তাদের মধ্যে যারা ভিক্ষাবৃত্তিকে বেছে নিয়েছেন তা নিঃসন্দেহে গর্হিত কাজ, এর দায় একান্তই ব্যক্তির উপর, ব্যক্তির অনিচ্ছা ও সদইচ্ছা না থাকার কারণেই কর্মের দিকে ছুটে না গিয়ে সহজ পন্থায় আয় করার পথ হিসেবে ভিক্ষাবৃত্তিকে বেছে নিয়েছেন যা কাম্য নয়। এই শ্রেণীর মানুষদের কর্মে আগ্রহী করার জন্য জেলা উপজেলা শহরগুলোতে ব্যক্তি উদ্যোগে কিংবা রাষ্ট্রীয়ভাবে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা যেতে পারে। প্রত্যেকটি নাগরিক, তার উপর অর্পিত নাগরিক দায়িত্ব পালন করলে এবং সুস্থ সবল মানুষদের মধ্যে যারা ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত তাদেরকে কর্মে আগ্রহী করে তোলার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে সমাজ ও দেশ থেকে বহুলাংশে কমে যাবে ভিক্ষাবৃত্তি, কমে যাবে চুরি ছিনতাই, মাদক বহন সহ বহু অপরাধজনক কর্মকা-।
রাষ্ট্রের এই অলস ও কর্মে অনাগ্রহী নাগরিকদের কর্মমুখী করার জন্য সরকার ও সচেতন নাগরিকদেরই দায়িত্ব নিতে হবে।

লেখক : শিক্ষার্থী, ডিপ্লোমা ইন জার্নালিজম বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব জার্নালিজম এন্ড ইলেকট্রনিক মিডিয়া

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট