চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

নৈতিক চরিত্র মানুষের বড় সম্পদ

অধ্যক্ষ এম সোলাইমান কাসেমী

১ জুলাই, ২০১৯ | ১২:৩৪ পূর্বাহ্ণ

মানুষের জীবনে কাজে-কর্মে, কথায়-চিন্তায়, ওঠা-বসায়, আচার-আচরণে প্রতিটি ক্ষেত্রের পরিশুদ্ধ রূপকেই চরিত্র বলে। গুরুজনের প্রতি শ্রদ্ধা, সত্যনিষ্ঠা, দায়িত্বশীলতা ইত্যাদি গুণ যার মাঝে প্রকাশ পায় তাকে সচ্চরিত্রবান বলে মনে করা হয়। মানুষ জ্ঞানে ও কর্মে সকল প্রাণী থেকে শ্রেষ্ঠ। মানুষের এ শ্রেষ্ঠত্বের প্রধান সোপান হলো চরিত্র। চরিত্র মানুষের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। বস্তুত চরিত্র যদি একবার নষ্ট হয়ে যায়,তবে সমাজে তার আর কোনো মূল্য থাকে না। এ চরিত্রই মানুষকে সুন্দরভাবে বিকশিত করে। মানুষের বিদ্যা-বুদ্ধি, ধন-ধৌলত যত কিছুই থাকুক না কেন, চরিত্রবান না হলে তারা কখনও দেশ ও জাতির কল্যাণ করতে পারবে না। সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য চরিত্রহীন লোকগুলোই মূলত দায়ী। তাই আমাদের সকলকে চরিত্রবান হতে হবে।
মানবহৃদয়ে যখন নৈতিক চরিত্র সজীব থাকে তখন তা অন্তরের প্রতিটি প্রান্তকে আলোকিত করে সকল অন্ধকারকে দূরীভূত করে দেয় এবং সত্যের সোনালী সূর্যের আলোতে উদ্ভাসিত করে তোলে। আর এর প্রভাব গোমরাহীর তিমির-অন্ধকারকে তাড়িয়ে দেয়। আখলাক শব্দটি খুলুক-এর বহুবচন। অর্থ স্বভাব, চরিত্র, আচরণ। শরীয়তের পরিভাষায় মানুষের মানবিক ও নৈতিক গুণাবলীর সমন্বিত রূপকে হুসনুল খুলূক বা সৎ চরিত্র বলা হয়। আর নৈতিকতা বলতে অন্তরে বদ্ধমূল এমন অবস্থাকে বুঝায় যা মানব চরিত্রে পরিদৃষ্ট ও প্রতিফলিত হয়। যদি মানবপ্রকৃতির অবস্থা মন্দ হয় তবে তাকে অসৎ চরিত্র বলা হয, আচরণ সুন্দর হলে সৎ চরিত্র বলা হয়। তেমনিভাবে এটা স্বভাবগতভাবেই ভাল-মন্দ পরিচর্যার প্রভাবে প্রভাবিত হয়। তাই সত্যনিষ্ঠা, সততা, পরোপকারিতা সহনশীলতা, ন¤্রতা, ধৈর্য, উদারতা, সাহসিকতা, ন্যায় বিচার দয়া ও আত্মশুদ্ধি এসব ভাল কাজকে অগ্রাধিকার দেয়া ও বাস্তবায়ন করা এবং তা অভ্যাসে পরিণত করাই নৈতিক চরিত্র হিসেবে প্রকাশ পাবে।
পক্ষান্তরে চরিত্র গঠনের প্রতি অবহেলা করলে এবং প্রয়োজনীয় সংশোধন করা না হলে কথা ও কাজের মধ্যে বৈপরিত্য দেখা দেয় এবং মিথ্যা বলা, খিয়ানত করা, লোভ-লালসা, ধৈর্যহীনতা, অহমিকা, ক্রোধ, কঠোরতা, অশ্লীলতা ও হীনতা এসব মন্দ আচরণ প্রকাশ পায়। এ জন্য ইসলাম প্রতিটি মুসলিমের অন্তরে উত্তম চরিত্রকে লালন করার ও নিষ্ঠার সাথে তা চর্চা করার তাগিদ দিয়েছে। সূরা আল-কালামের ৪ আয়াতে রাববুল আলামীন প্রিয়নবী (সা.)-এর চারিত্রিক গুণাবলীর প্রশংসা করিতে গিয়ে বলেন, (হে নবী), নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রের আধার। উত্তম চরিত্র গঠনের নির্দেশ প্রদান করে মহান আল্লাহ সূরা হা-মীম সাজদার ৩৪ নং আয়াতে এরশাদ করেন- উত্তম পদ্ধতিতে তা (মন্দ) প্রতিহত কর, ফলে তোমার সাথে যার শত্রুতা আছে, সে তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধুর মতো হয়ে যাবে। সূরা আলে-ইমরান ১৩৪ আয়াতে উত্তম চরিত্রকে জান্নাত লাভের মাধ্যম ঘোষণা করে বলেন- তোমরা স্বীয় রবের ক্ষমা ও জান্নাতের দিকে প্রতিযোগিতার সঙ্গে অগ্রসর হও, যেই জান্নাতের প্রশস্ততা আসমান ও জমিন সমান। যা ঐসব মুত্তাকীদের জন্য প্রস্তত করা হয়েছে, যারা সচ্ছল-অসচ্ছল উভয় অবস্থাতেই আল্লাহর পথেই ব্যয় করে, ক্রোধ সংরক্ষণ করে এবং মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল। আর আল্লাহ সৎ কর্মশীলদের ভালবাসেন।
মহান আল্লাহ প্রিয়নবী (সা.) কে উত্তম চরিত্রের পূর্ণতা দেয়ার জন্য প্রেরণ করেছেন। এ সম্পর্কে রাসূলে করীম (সা.) নিজেই বলেছেন- যা বুখারী শরীফে এভাবে এসেছে- ‘নিশ্চয়ই আমি উত্তম চরিত্রের পূর্ণতা বিধানকল্পে প্রেরিত হয়েছি।’ আবু দাউদ ও আহমদ শরীফে এসেছে প্রিয়নবী (সা.) এরশাদ করেন- (কিয়ামতের দিন নেকী বদী ওজনের সময়) ‘মিযানের পাল্লায় উত্তম চরিত্রের চেয়ে আর কোন জিনিস ভারী হবে না।’ ইমাম বুখারী স্বীয় কিতাবে লিখেন প্রিয়নবী (সা.) বলেন- ‘আমার কাছে তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় এবং কিয়ামতের দিন সর্বাধিক নিকটবর্তী ঐ ব্যক্তি, যার চরিত্র সর্বাধিক সুন্দর।’ প্রিয়নবী (সা.) কে প্রশ্ন করা হলো কোন কাজের ফলে মানুষ অধিক পরিমাণে জান্নাতে প্রবেশ করবে? উত্তরে বলেন-আল্লাহ ভীতি ও উত্তম চরিত্র। রাসূলে আকরাম (সা.) অন্যত্র বলেন, পরিপূর্ণ মুমিন ঐ ব্যক্তি যার চরিত্র সর্বাধিক সুন্দর। তিবরানীতে এসেছে কিয়ামতের দিন সুন্দর চরিত্র দ্বারা বান্দা সম্মানজনক মর্যাদা লাভ করবে, যদিও সে ইবাদতে দুর্বল হয়। নৈতিক চরিত্র গঠনে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পূর্ণাঙ্গভাবে আনুগত্য ও অনুসরণ করতে হবে। আর সে জন্য প্রয়োজন কুরআনের আলোকে জীবন যাপন করা। মুসলিম শরীফে হযরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-কুরআনই হচ্ছে নবী (সা.)-এর চরিত্র। তাই আসুন, আমরা সকলে রীতিমতো অর্থ বুঝে কুরআন পড়ি এবং সে অনুযাযী নিজেদের জীবনে তার অনুশীলন ও আমল করি। তবেই নৈতিক চরিত্র গঠন করা সম্ভব। আল্লাহ আমাদেরকে চরিত্রবান হবার তাওফিক দান করুন। আমীন।

লেখক : কলামিস্ট ও ইসলামী গবেষক।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট