চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সুদান : ওমর আল বশিরের বিদায়

অধ্যাপক রতন কুমার তুরী

১৬ জুন, ২০১৯ | ১:২৪ পূর্বাহ্ণ

অ ব শেষে সুদা নের প্রতা প শালী এবং একরোখা সামরিক শাসক ক্ষমতা ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে। এটা যেমন একটা বড় ঘটনা তেমনি এর পরে স্বল্প সময়েই খার্তুমের সরকারের কা-ারী বদল কম তাৎপর্যপূর্ণ নয়। তবে উভয়েই সামরিক ব্যক্তি হওয়ায় জনগণ অসন্তুষ্ট। সুদানিরা এক স্বৈরশাসককে হটিয়ে আরেকজন একই ধরনের শাসনকর্তাকে গদিতে চায় না। তাদের কাম্য হলো গণতন্ত্র ও সুশাসন। এজন্য বেসামরিক ব্যক্তিত্ব শীর্ষ পদে থাকা প্রয়োজন বলে তারা মনে করে। অপরদিকে, যুক্তরাষ্ট্র এবং তার বশংবদ কোনো কোনো আরব রাষ্ট্র তাদের অধিকতর বিশ^স্তজনকে ক্ষমতার শীর্ষে বসাতেই খার্তুমের দ্রুত পরিবর্তন এনেছে বলে প্রতীয়মান। সুদানের জনসাধারণ অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে যে কোনো ধরনের বিদেশী হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করেছে। তাদের মিছিল সেনাসদর দফতরে এসে শেষ হয়। ২৫ এপ্রিলও একই ইস্যুতে বিক্ষোভ প্রদর্শিত হয়। খার্তুমে এখন যারা ক্ষমতাসীন, তারা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচি বা গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে দৃশ্যত বাধা দিচ্ছে না। হয়তো জনগণের প্রাধান্য দেখে অথবা ভবিষ্যতের কোনো কৌশল হিসেবেই এটি করা হচ্ছে। তদুপরি তাদের উপর এব্যাপারে বহিঃশক্তির চাপও রয়েছে। যেমন, পাশ্চাত্যশক্তি চায় এ মুহূর্তে কোনো দমন পীড়ন না করা এবং জনগণের দাবি দাওয়ার প্রতি যেনো শ্রদ্ধা দেখানো হয়। সুদান দেশটি ছিল আয়তনে আফ্রিকার বৃহত্তর রাষ্ট্র যার পরিমাণ ছিল ২৫ লাখ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা সে তুলনায় ছিল অনেক কম, মাত্র ৪ কোটি। তবে, ২০১১ সালের প্রথম দিকে এক গণভোটের মাধ্যমে সুদানের প্রায় এক-চতুর্থাংশ আলাদা হয়ে – ‘দক্ষিণ সুদান’ রাষ্ট্র গঠন করে। সুদান মুসলিম অধ্যুষিত এবং দক্ষিণ সুদানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক খ্রিস্টান থাকলেও সেখানকার বাসিন্দারা প্রধানত বিভিন্ন লোকধর্মের অনুসারী। উভয় সুদানে তেলসম্পদ রয়েছে। সুদানের আয়তন কমে গেলেও আরব ও মুসলিম বিশে^ এর গুরুত্ব কমেনি। সুদানিরা দেখতে অনেকটাই সোমালিয়া ও ইথিওপিয়ার মানুষের মতো কিছুটা কৃষ্ণবর্ণের এবং দীর্ঘদেহী। সুদানের রাজধানী খার্তুম বিশে^র একটি সুপরিচিত শহর। তিন দশক ক্ষমতায় থাকা – পাশ্চাত্যের কালো তালিকায় অন্তর্ভুক্তি এবং দারফুর গৃহযুদ্ধ এবং দক্ষিণ সুদান ইস্যুর সুবাদে সুদানের বিদায়ী শাসক ওপমর আল বশির ছিলেন আলোচিত ও বিতর্কিত। লোহিত সাগর সংলগ্ন সুদানের একদিকে মিসর ও শাদ। অপরদিকে ইথিওপিয়া। এমনকি লিবিয়ার সাথেও দেশটির সীমান্ত রয়েছে। ব্লু-নীল ও হোয়াইট-নীল নদের কারণে সুদানের বিশেষ পরিচিতি রয়েছে। ঊনবিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে মাদো সুদানি বিশে^ আলোচিত হয়ে উঠেছিলেন। আর নিকট অতীতে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে পরিচিত হয়ে ওঠেন আইনজ্ঞ ড. হাসান তুরাবি।
যদিও দৃশ্যত কয়েকটি সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়ে বশির সুদানি জনগণের মাঝে চমক সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন কিন্তু তার লাগামহীন স্বেচ্ছাচারিতায় জনগণ তার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। নয়া শাসকরা এই বাস্তবতা উপলব্ধি করে অবিলম্বে উদ্যোগী হতে ব্যর্থ হলে কিংবা দেশের স্বার্থকে গৌণ করে কোনো বহিঃশক্তি নীল নকশা বাস্তবায়নে লিপ্ত হলে জনগণ তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে। ওমর আল বশিরের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনে পাশ্চাত্যের আন্তর্জাতিক আদালত পরোয়ানা জারি করেছিল। তবে বশির এর তোয়াক্কা না করে তার শাসন ও দাপট অব্যাহত রেখেছিল। শেষ পর্যন্ত গত ১১ এপ্রিল সেনাবাহিনী তাকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে। এই বাহিনীর ওপর ভর করেই তিনি একসময় বেসামরিক সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। সেনাবাহিনী মিলিটারি ট্রানজিশনাল কাউন্সিল (এমটিসি) গঠন করে ২ বছরের মধ্যে নির্বাচিত বেসামরিক সরকার গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সুদানের জনগণ চায় অনতিবিলম্বে এটি করা হোক।
জানা গেছে, সুদানের ক্ষমতাসীন এমটিসি এবং বেসামরিক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলনকারীদের জোট ডিক্লারেশন অব ফ্রিডম অ্যান্ড চেঞ্জেস কোর্স (ডিএফসিএফ) এর মধ্যে এ মর্মে মতৈক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, নির্বাচন পর্যন্ত দেশ পরিচালনার জন্য একটি যৌথ পরিষদ গঠন করা হবে। এখন দেখার বিষয় সুদানে সামনের দিনগুলোতে কী ঘটতে যাচ্ছে!

লেখক : কলেজ শিক্ষক, প্রাবন্ধিক, মানবাধিকারকর্মী।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট