চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

শ্রমজীবী মানুষের অধিকার এবং বাস্তব চিত্র

কাজী আবু মোহাম্মদ খালেদ নিজাম

১৫ জুন, ২০১৯ | ১:২৩ পূর্বাহ্ণ

শ্র মি কে র ঘা মে ঘুরছে দেশ-বিদেশের উন্নয়নের চাকা। উন্নতির ধাপে ধাপে শ্রমিকের অবদান অস্বীকার করার কোন উপায় নেই।দেশের বিপুল সংখ্যক শ্রমজীবী মানুষের কারণেই বিশ্বে বাংলাদেশের তৈরি পোষাক শিল্প সুনাম অর্জন করেছে। আয় হচ্ছে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা।
প্রতি বছর আমরা শ্রমিক দিবস পালন করি, তাদের স্বপড়ব দেখাই, জীবনমান উন্ননের জন্য নানা কথা বলি। অথচ বাস্তবতা অনেক দূরে। মানসম্মত জীবনযাপন, প্রাপ্ত মজুরি এখনো আশানুরূপ নয়। নানা উৎসব-পার্বনে মজুরি ও ভাতার দাবিতে শ্রমিকদের আন্দোলনে নামতে হয়। করতে হয় বিক্ষোভ, অবরোধ।
ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যায়, শ্রমিকেরাই তাদের অধিকার আদায়ের জন্য লড়েছে, প্রাণ উৎসর্গ করেছে। এক সময় শ্রমিকদের দৈনিক ১৫/১৬ ঘণ্টা কাজ করতে হতো। দীর্ঘকাল ধরে সংগ্রাম ও শ্রমিকদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অবশেষে আটঘণ্টা শ্রমের দাবি বাস্তবায়িত হয়।
বর্তমানে পৃথিবীর অনেক দেশেই ‘পয়লা মে’ আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে পালিত হয়। আমাদের দেশেও অন্যান্য দেশের ন্যায় ঐদিন শ্রমজীবী মানুষ এবং শ্রমিক সংগঠনসমূহ রাজপথে সংগঠিতভাবে মিছিল ও শোভাযাত্রার মাধ্যমে এ দিবসটি পালন করে শ্রমিকদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে থাকে।
১৮৮৬ সালের এপ্রিল মাসে বিশ্বের সব শ্রমিকের দাবি আদায়ের লক্ষে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল তাতে আড়াই লক্ষ শ্রমিক অংশগ্রহণ করে। এই আন্দোলনের কেন্দ্র ছিল যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহর। আন্তর্জাতিক শ্রমিক সমিতি এই আন্দোলনের সূত্রপাত করে। এই আন্দোলনের এক পর্যায়ে ১লা মে শিকাগো শহরের হে মার্কেটে আন্দোলনরত শ্রমিকদের উপর পুলিশ গুলি চালালে ১১ জন শ্রমিক নিহত হয় এবং এতে আহত হয় আরো অনেকে। এতদসত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের সব দেশ শ্রমিকের কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টার দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়। যে শ্রমিকের শ্রমে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। এগিয়ে যাচ্ছে পৃথিবী সে শ্রমিকের জীবনযাপন, সুস্থভাবে বেঁচে থাকার অধিকারের ব্যাপারে আমরা কতটুকু সচেতন? তাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে আমরা উদাসীন। কলে-কারখানায় কাজ করতে গিয়ে অনেক শ্রমিক দুর্ঘটনায় আহত, নিহত হয়। বিভিন্ন সময় গার্মেন্ট দুর্ঘটনায় খোঁজ পাওয়া যায় না কত শ্রমিকের! অনেক মালিক মাসের পর মাস বেতন বন্ধ রেখে কাজ করতে বাধ্য করে। অনেক শ্রমিকতো বেতনই পায় না। কারখানা বন্ধ হয়ে যায়, পথে বসে শ্রমজীবী মানুষ।
কারখানায় কাজ করতে গিয়ে শ্রমের যথাযথ মূল্য পায় না তারা। মজুরি বৃদ্ধির দাবি তুললে নানা অজুহাত দেখায় কর্তৃপক্ষ থাকার বাসস্থানের ভাড়া কিংবা জীবনযাপন প্রাপ্ত মজুরির সাথে মিলে না।
এগুলো নিয়ে আমরা কি কখনো ভেবেছি? নিজেদের স্বার্থটুকুই দেখেছি সবসময়।
কলকারখানার বাইরে অন্যান্য স্থানে যারা শ্রম দেয় তারাও একই সমস্যার সম্মুখীন। প্রাপ্ত মজুরি আর জীবনের নিরাপত্তা কোনটিই যথোপযুক্ত নয়।
এসব বিষয়ে মালিক কিংবা কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। দিতে হবে শ্রমের উপযুক্ত মূল্য ও যথাযথ অধিকার।
দিতে হবে পূর্ণ নিরাপত্তার গ্যারান্টি। মালিক এবং শ্রমিকের যৌথ প্রচেষ্টায় গড়ে উঠতে পারে একটি সুন্দর প্রতিষ্ঠান। যা থেকে দেশ উপকৃত হবে।
বিশ্বব্যাপী শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থ সংশিষ্ট সকল ইস্যুকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে উপলব্ধি ও কল্যাণমুখী সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে স্ব স্ব দেশের সরকার এবং মালিক কর্তৃপক্ষকে জোরোলা ভূমিকা পালন করতে হবে। কোনভাবেই যেন কোন শ্রমিক তার অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

লেখক : শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট