চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

চট্টগ্রাম নগরীতে জলাবদ্ধতা

সাইমুম চৌধুরী

১৪ জুন, ২০১৯ | ১:০০ পূর্বাহ্ণ

বর্ষা কাল সমাগত প্রায়। প্রতি বর্ষা মৌসুমে অতি বৃষ্টির ফলে চট্টগ্রাম নগরীর কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এই জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে সরকার থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের পরও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে অনেকটাই ব্যর্থ। একটি জাতীয় দৈনিকের ৯ জুন সংখ্যায় “বরাদ্দ পেয়েও খরচ নেই” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন নজরে এলো। তাতে জানা যায়, চলতি অর্থ বছরে নগরীর আলোচিত জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে ৮৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। কিন্তু বড়ই দুঃখজনক হলো সিডিএ কর্তৃপক্ষ বরাদ্দকৃত অর্থের অর্ধেক (৪২৫ কোটি টাকা) খরচ করেছে। স্বাভাবিকভাবে বরাদ্দকৃত অর্থের বাকী অর্ধেক ৪২৫ কোটি টাকা ফেরত যাচ্ছে সরকারি কোষাগারে। গত অর্থবছরে ও ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দের মধ্যে খরচ হয়েছিল দেড়শ কোটি টাকা। সঠিক সময়ে পরিকল্পনা মাফিক কাজ না হওয়ায় এখনো একটু ভারি বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় এতে কোথাও কোথাও হাঁটুপানি জমে যায়। এতে পথচারীদের বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। অতি সম্প্রতি ২ এপ্রিল ও ২৪ মে’র বৃষ্টিতে পথচারী এবং এলাকাবাসী জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছিল। এ আর বলার অপেক্ষা রাখে না সিডিএ অর্থ বরাদ্দ পেয়েও সময়মত শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। অন্যদিকে নতুন খাল খননের জন্য বিগত পাঁচ বছর যাবৎ প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ পাচ্ছে না চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এমন খবর এসেছে পত্রিকা। উল্লেখ্য, নগরের বহদ্দারহাটের বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত উল্লেখিত খাল খননের অনুমোদন দেয়া হয়েছিল ২০১৪ সালের জুনে। সিডিএ পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই প্রকল্প নেয়ায় এ জটিলতা দেখা দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রকৌশলী ও নগর পরিকল্পনাবিদেরা। তাদের মতে, নির্ধারিত অর্থ সঠিক সময়ে খরচ করতে না পারার অর্থ হলো, নির্দিষ্ট কাজ হয় নি। ফলে, পরবর্তীতে আবার করতে হবে। তখন মেয়াদ বাড়বে খরচও বাড়বে। সাথে সাথে নগরবাসীর দুর্ভোগও বাড়বে। ২০১৭ এর আগষ্টে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সিডিও নগরীর জলাবদ্ধ নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়নে একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয় একনেক। ২৮ এপ্রিল থেকে কাজ শুরু হয় এবং কাজ শেষের সময় হলো ২০২০-এর জুনে। সেনাবাহিনীর মাধ্যমে প্রকল্পটি সম্পন্ন হবে।
বরাদ্দ থাকার পরও সঠিক সময়ে উন্নয়ন কাজ শুরু করতেই সময় লেগে যায় অনেক। নতুনভাবে খাল খনন করতে জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন। এছাড়া যন্ত্রপাতি ক্রয়, খালের নকশা প্রস্তুত ও পাশ, অর্থের জোগান এসব করতেই অনেক সময় নষ্ট হয়। এসব করতে গিয়ে দেখা গিয়েছে একটি খালের খনন কাজ সম্পন্নের জন্য নির্ধারিত সময়ের আর বাকি আছে মাত্র দু’মাস। এই দুই মাস শেষ হলে সরকারি নিয়মে আবার অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। এছাড়াও রয়েছে ঘাটে ঘাটে দুর্নীতি।
বখরা না দিলে ফাইল নড়তেই চায় না। আর, এভাবে কালক্ষেপণের ফলে পথচারী নগরবাসীদের দুর্ভোগের সীমা থাকে না। এখন আবার নতুন সমস্যা দেখা দিয়েছে। তা হোলো, জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর্যায়ে সিডিএ’র চেয়ারম্যান পদে পরিবর্তন এসেছে। পূর্বের চেয়ারম্যান এর সময় সিডিএ নিজেরাই জমি অধিগ্রহণ করত। নতুন চেয়ারম্যান আসার পর জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। তাই, নতুন করে জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। এতে লাভের লাভ কি হবে জানি না। তবে নগরবাসীদের দুর্ভোগ বাড়বে বৈ কমবে না।
সাধারণ নগরবাসী জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি চায়। তাই, নগরবাসীকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তির জন্য খাল খনন এবং বিদ্যমান খাল পরিষ্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করার অনুরোধ রইল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট