চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

মাতৃদুগ্ধেই শিশুর পুষ্টি ও নিরাপত্তা

১৩ জুন, ২০১৯ | ১২:৪১ পূর্বাহ্ণ

মা তৃ দুগ্ধই শিশু দের সব চেয়ে ভাল খাবার। বর্তমানে সারা পৃথিবীতে সর্বাধিক প্রচারিত স্লোগান হল – ‘ব্রেস্ট ইজ দা বেস্ট ফিডিং’। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা এই স্লোগান দেশে দেশে প্রচার করছেন। এখন দেখা প্রয়োজন কেন শিশুদের পক্ষে সবচেয়ে ভাল খাবার এই মাতৃদুগ্ধ। খুবই সৌভাগ্যের কথা আমাদের দেশের মায়েরা শিশুদের বুকের দুধ খাওয়াতেই বেশি অভ্যস্ত বিদেশি মহিলাদের তুলনায়।
মাতৃদুগ্ধ কেন অপরিহার্য : ১) সঠিক পুষ্টি, জৈবিক নিয়ম অনুযায়ী তৈরি, খুব সহজেই হজম হয়। ২) বটল ফিডিং এর মতো খরচবহুল তো নয়ই, বটল ফিডিংয়ের খারাপ প্রভাবও নেই। গরম করার ঝামেলাও নেই। ৩) মা ও শিশুর মধ্যে মাতৃত্বের বন্ধন তৈরি করে। ৪) মাতৃদুগ্ধে শিশুর শরীর ভাল হয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং অন্যান্য অনেক আক্রমণ থেকেও শিশুকে রক্ষা করে। ৫) যে সব মা শিশুকে মাতৃদুগ্ধ পান করান তুলনামূলকভাবে তাদের পরবর্তী বাচ্চা আসতে দেরি হয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই গর্ভনিরোধকের কাজ করে। ৬) মায়েদের স্তনে ও ডিম্বাশয়ে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। ৭) অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া খুবই কম হয়। ৮) বটল ফিডিংয়ের বাচ্চাদের পেটের যন্ত্রণা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশিই হয়। ৯) স্কার্ভি নামক অসুখের ভয় কমে যায়। রিকেট জাতীয় অসুখ কম হয়। অতএব বোঝাই যাচ্ছে মায়ের দুধের কী অপরিসীম ক্ষমতা। মাতৃদুগ্ধ শুধু শিশুকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি দিয়ে নয়, রোগমুক্ত রাখতে, সুস্থ ও সবল হতে সাহায্য করে। অতএব আমাদের সকলের লক্ষ্য হওয়া উচিত কীভাবে নবজাত শিশুদের অতি যতেœ মাতৃদুগ্ধ পান করানো যায়। সুতরাং পেটে বাচ্চা জন্মানোর পর মায়েদের স্তনের যত্ন নেওয়া খুবই দরকার।
যত্ন নেবেন কীভাবে : স্তনবৃন্ত এবং বৃন্তের চারপাশে কালো অংশে – নিয়মিত সাবান ও জল দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। অন্যথায় একটা শক্ত আবরণ তৈরি হয়ে যায়। এই শক্ত আবরণটি দূর করতে হয় – বাচ্চা জন্মানোর আগেই। বাচ্চা জন্মানোর দুমাস আগে থেকেই স্তনবৃন্তে মালিশ করতে হয়, যাতে সহজেই দুধ বের হয়। এরকম না করলে দুধ বের হওয়া নালিগুলো অনেক সময় শক্ত আবরণে বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়া স্তনবৃন্তের রকমভেদ আছে। ফলে শিশুর দুগ্ধ পান করতে অনেক সময় অসুবিধে হয়। যেমন ঋখঅঞ ঘওচচখঊ হলে আঙুল দিয়ে তুলতে হয় এবং রোজই অলিভ তেল দিয়ে ম্যাসাজ করা দরকার। অনেকের স্তনবৃন্ত ভিতরের দিকে থাকে। এরকম হলে ব্রেস্ট পাম্প অথবা প্লাস্টিক শেল ব্যবহার করতে বলেছেন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞরা।
চাকুরিরতা মায়েদের প্রতি : যতটা সম্ভব বেশি মেটারনিটি লিভ নিতে হবে। অন্ততপক্ষে চারমাস বাচ্চাদের দুধ খাওয়ানোর দরকার। তবে আরও বেশি হলে খুব ভাল হয়। এই সব কারণে ডঐঙ/টঘওঈঊঋ মেটারনিটি লিভের ব্যবস্থা করেছেন। যদি অফিস কার্যালয় বাড়ির কাছাকাছি হয় তাহলে দু ঘণ্টা অন্তর অন্তর এসে বাচ্চাকে দুধ খাইয়ে যাওয়া ভাল। আর এটা সম্ভব না হলে অফিস যাওয়ার আগে বুকের দুধটা কিছুটা বের করে ঘরের তাপমাত্রায় ৮ ঘণ্টা এবং রেফ্রিজারেটরে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত রাখা যায়। ওই দুধ চামচে করে খাওয়ানো যায়।
বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর পদ্ধতি : বাচ্চাকে খাওয়ানোর আগে মায়ের হাত ও স্তন গরম জলে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিতে হবে। তারপর বাচ্চাকে কোলে নিয়ে নিজের হাতের ওপর একটু উঁচু করে বাচ্চার মাথা রেখে স্তনবৃন্তকে নিজের মধ্য দুই আঙুলের সাহায্যে ধরে আস্তে আস্তে বাচ্চার মুখের কাছে রাখতে হবে এবং মৃদুভাবে বাচ্চার গালে টোকা মারলেই দেখা যাবে বাচ্চা স্তনবৃন্তকে মুখে নিয়ে চুষতে থাকবে। তবে খাওয়ানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে বাচ্চার নাক মায়ের স্তনের মধ্যে যেন চাপা না পড়ে। নাক চাপা থাকলে বাচ্চার শ^াস-প্রশ^াসের কষ্ট হবে। দুগ্ধপানের পরে কখনই বাচ্চার মুখ থেকে জোর করে স্তনবৃন্তকে টেনে বার করবেন না। সাধারণত বাচ্চা ঘুমিয়ে পড়লে আপনা-আপনি বাচ্চার মুখ থেকে স্তনবৃন্ত বেরিয়ে আসে। তবে যদি কোন কারণে বার করতে হয় তাহলে নিজের কড়ে আঙুল আস্তে আস্তে দুটো মাড়ির মধ্যে ঢোকাতে হবে, কিংবা শিশুর নাকের ডগাটা মৃদুভাবে চেপে ধরে একটু ওপরের দিকে ধরলেই স্তনবৃন্তটি বেরিয়ে আসবে।
প্রসবের পরে প্রথম কয়েকদিন মায়ের স্তন থেকে হলুদ রঙের গাঢ় দুধ (ঈঙখঙঝঞজটগ) বের হয়। এটা অনেকেই ফেলে দেন। এই গাঢ় দুধের মধ্যে প্রচুর অঘঞওইঙউওঊঝ থাকে যা বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে শিশুর প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট