চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

রিফাত হত্যা মামলা : আলোচনায় ‘ভিক্টিম না ভিলেন’

স্ত্রী মিন্নি ৫ দিনের রিমান্ডে

নিজস্ব প্রতিবেদক , ঢাকা অফিস

১৮ জুলাই, ২০১৯ | ১:৪৮ পূর্বাহ্ণ

বহুল আলোচিত বরগুনার রিফাত হত্যার ঘটনায় তার স্ত্রী মিন্নির গ্রেফতার ও গতকাল বুধবার রিমান্ডে নেয়া নিয়ে আলোচনা এখন সবখানে। আলোচনা যতটা রিফাতের খুনিদের নিয়ে, তার চেয়ে অনেক বেশি রিফাতের স্ত্রী মিন্নিকে নিয়ে। পুলিশ মঙ্গলবার সকালে একটি আসামিকে শনাক্তের কথা বলে মিন্নিকে তার নিজ বাসা থেকে পুলিশ লাইনে নিয়ে যায়। দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাতে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। রাত সাড়ে ৯টায় পুলিশ সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, আয়শা আক্তার মিন্নি তার স্বামী রিফাত হত্যায় জড়িত। অন্যদিকে পুলিশের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে মিন্নির বাবা বলেছেন, আমার মেয়েকে সারাদিন জিজ্ঞাসাবাদের নামে মানসিক নির্যাতন করে বিপর্যস্ত করা হয়েছে, এই অবস্থায় তার কোনো কথার সূত্র ধরে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা উচিত নয়। বিষয়টি সংসদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় সংক্রান্ত কমিটির গতকালের বৈঠকে পর্যন্ত উঠেছে। এ অবস্থায় মানুষ কোনটা বিশ্বাস করবে? কোন দিকে যাবে? এখন সবার একটাই জিজ্ঞাসা- রিফাত হত্যার ঘটনায় মিন্নি কি ভিক্টিম না ভিলেন, তিনি কি স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের ষড়যন্ত্রের শিকার নাকি সত্যিই তিনি রিফাত হত্যার পরিকল্পনাকারীদের একজন। এসব বিষয়ে পরিষ্কার জানা যাবে পুরো তদন্ত শেষ হওয়ার পর। তবে গতকাল বুধবার দুপুরে মিন্নিকে আদালতে নেওয়া

হলে পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। এর আগে, মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মামলার সাক্ষী মিন্নিকে জেলা পুলিশ লাইনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে হত্যাকা-ের ঘটনার সঙ্গে মিন্নির সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় তাকে এই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন রাতে এক সংবাদ সম্মেলন করে মিন্নিকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এ সময় পুলিশ সুপার জানান, রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তারা ১৪ জনকে জীবিত গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড গত ২ জুলাই পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছেন। গ্রেফতারকৃত আসামিদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১০ জন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। বাকি ৩ জন এখনো রিমান্ডে রয়েছে।
বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন জানিয়েছেন, তদন্তের পর ওই হত্যাকা-ের সাথে ‘মিন্নির সংশ্লিষ্টতার’ তথ্য পেয়েই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মারুফ হোসেন আরো বলেন, ”এ পর্যন্ত আমরা যা পেয়েছি, সার্বিক তথ্যাদি বিশ্লেষণ করে আমরা সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি তার সংশ্লিষ্টতা প্রাথমিকভাবে আমাদের কাছে সত্য বলে প্রতীয়মান হয়েছে।”
এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির সদস্য ও জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান রিফাত হত্যার প্রধান সাক্ষী তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে গ্রেফতারের প্রসঙ্গ তোলেন। তিনি বলেন, ‘কেউ দোষী হলে তার শাস্তি হোক, সেটা আমরা চাই। কিন্তু কারও প্ররোচনায় মিন্নিকে গ্রেফতার করা হয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা দরকার।’
জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, বরগুনার আলোচিত রিফাত হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত চলছে। ‘এই ঘটনার গুড অ্যান্ড বেটার তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ হওয়ার আগে কোনও উপসংহার টানা যাবে না।’
রিফাত শরীফ হত্যার ঘটনায় রিফাতের স্ত্রী মিন্নিকে আইনের আওতায় আনার দাবি করে শনিবার (১৩ জুলাই) রাত আটটায় বরগুনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন নিহত রিফাতের পিতা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ। মিন্নি এ হত্যা মামলার ১ নম্বর সাক্ষী। সম্মেলনে এই হত্যাকা-ে মিন্নি জড়িত ছিল এমন সন্দেহে তিনি ১০টি যুক্তি তুলে ধরে লিখিত বক্তব্য রাখেন।
এদিকে, মিন্নি তাকে জড়িয়ে শ্বশুরের দেওয়া বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। স্বামী রিফাত হত্যায় তার সম্পৃক্ততা আছে দাবি করে শ্বশুর দুলাল শরীফের দেওয়া বক্তব্যকে ‘বানোয়াট ও মনগড়া’ বলেন মিন্নি। রবিবার (১৪ জুলাই) দুপুরে মিন্নি তার বাবার বাড়িতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট