চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

শিল্পে ৫% কর্মঘণ্টা হারাবে বাংলাদেশ : আইএলও

নিজস্ব প্রতিবেদক

৩ জুলাই, ২০১৯ | ১০:৫১ অপরাহ্ণ

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ছে ক্রমাগত। গবেষণা বলছে, ২০৩০ সাল নাগাদ বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে, যার প্রভাব পড়বে কর্মক্ষেত্রে। তীব্র দাবদাহে কর্মঘণ্টা নষ্ট হবে কৃষি, শিল্প, নির্মাণ, সেবাসহ অন্যান্য খাতে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দাবদাহের ফলে ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের শিল্প খাতে নষ্ট হবে ৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ কর্মঘণ্টা।

ওয়ার্কিং অন আ ওয়ার্মার প্লানেট: দি ইম্প্যাক্ট অব হিট স্ট্রেস অন লেবার প্রডাক্টিভিটি এন্ড ডিসেন্ট ওয়ার্ক শীর্ষক একটি প্রতিবেদন  সোমবার প্রকাশ করে আইএলও। আফ্রিকা, আমেরিকা, আরব দেশগুলো, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল এবং ইউরোপ ও মধ্য এশিয়ার ছয়টি অঞ্চলে ভাগ করে কর্মক্ষেত্রে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির সম্ভাব্য প্রভাব তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে। এ প্রতিবেদনের দক্ষিণ এশিয়া অংশে বাংলাদেশের পাশাপাশি আফগানিস্তান, ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলংকায় ১৯৯৫ সালে কর্মঘণ্টা নষ্টের হার ও ২০৩০ সাল নাগাদ কর্মঘণ্টা নষ্টের সম্ভাব্য হার উল্লেখ করা হয়েছে।

আইএলও বলছে, ২০৩০ সাল নাগাদ কৃষি, উৎপাদনসহ সব খাতেই বাংলাদেশে দাবদাহের প্রভাব আরো বিরূপ হবে। এ সময় দাবদাহে বাংলাদেশের কৃষি খাতে কর্মঘণ্টার ৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ নষ্ট হবে। শিল্প বা উৎপাদন খাতে নষ্ট হবে কর্মঘণ্টার ৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ। একইভাবে নির্মাণ ও সেবা খাতে নষ্ট হবে যথাক্রমে ৯ দশমিক ৫৮ ও শূন্য দশমিক ৭২ শতাংশ। সব মিলিয়ে মোট কর্মঘণ্টার ৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ নষ্ট হবে বাংলাদেশে।

পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহ-সভাপতি মো. মশিউল আজম এ প্রসঙ্গে জানান, বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প নিয়ে যদি বলা হয়, তবে আমরা বলব, আমরা এখন পরিবেশ নিয়ে অনেক বেশি সচেতন। এ কারণে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গ্রিন ফ্যাক্টরি এখন বাংলাদেশে। ১৯৯৫ সালে একটি কারখানায় যে পরিমাণ উষ্ণ পরিবেশ ছিল, এখন তা অনেক কম। বিশ্বের সবচেয়ে সৃজনশীল যন্ত্রের ক্রেতা দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষ দশে আছে বাংলাদেশ। এ চিত্র শুধু পোশাক খাত নয়, সব শিল্পের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কাজেই ২০৩০ সাল নাগাদ শিল্পে হিট স্ট্রেসের চিত্রটি খুব সামঞ্জস্যপূর্ণ মনে করছি না।

কর্মঘণ্টা নষ্ট হওয়ার বিষয়ে নেতিবাচক বিশ্লেষণ দেখালেও মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অংশ হিসেবে ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের পরিস্থিতি ইতিবাচক হবে বলে মত প্রকাশ করেছে আইএলও।

বাংলাদেশের কর্মক্ষেত্রগুলোয় পেশাগত ও স্বাস্থ্যনিরাপত্তা ব্যবস্থা নজরদারি ও তদারকির কাজ করে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই)। সংস্থাটিও আইএলওর এমন পূর্বাভাসের সঙ্গে একমত নয় জানিয়ে ডিআইএফই মহাপরিদর্শক শিবনাথ রায় জানান, অতিরিক্ত তাপে বাংলাদেশের শিল্প খাতে কর্মঘণ্টা নষ্টের ঝুঁকির বিষয়টির সঙ্গে একমত হতে পারছি না। যদি দেশের সবচেয়ে বড় শ্রমঘন শিল্প পোশাক খাতকে বিবেচনায় নিই, তাহলে সেখানে গত কয়েক বছরে পেশাগত ও স্বাস্থ্যনিরাপত্তাজনিত ব্যবস্থার অনেক উন্নয়ন হয়েছে। মালিক ও শ্রমিক উভয় পক্ষই সচেতন হয়েছে। সার্বিকভাবে কর্মপরিবেশের উন্নয়ন ঘটেছে। অন্য শিল্প যেগুলোয় তাপের ব্যবহার বেশি, সেই শিল্পগুলোও এখন কর্মপরিবেশের বিষয়ে সচেতন হতে শুরু করেছে। সব দিক বিবেচনায় ২০৩০ সাল নাগাদ শিল্পে কর্মঘণ্টা বেশি নষ্ট হবে, এমন পূর্বাভাস বাস্তবে রূপ নেয়ার আশঙ্কা নেই বলে আমি মনে করি।

আইএলওর প্রতিবেদন অনুযায়ী, গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিলভুক্ত (জিসিসি) দেশগুলোর মোট কর্মসংস্থানের ২৩ শতাংশ নির্মাণ খাতে। এ খাতে নিয়োজিত শ্রমিকদের বড় অংশই দাবদাহের ঝুঁকির মধ্যে আছে, যাদের বেশির ভাগই আবার অভিবাসী শ্রমিক। জিসিসি দেশগুলোর নির্মাণ খাতের শ্রমিকদের ৯৫ শতাংশই পাকিস্তান, ভারত, ফিলিপাইন, বাংলাদেশ ও নেপাল থেকে যাওয়া।

পূর্বকোণ/রাশেদ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট