চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

১৯শ’ কোটি টাকার প্রজেক্ট মৎস্য অধিদপ্তরের মৎস্য

উন্নয়নে মেগাপ্রকল্প

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

১৭ জুন, ২০১৯ | ২:৪০ পূর্বাহ্ণ

মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি ও প্রান্তিক জেলেদের জীবনমানের উন্নয়নে প্রায় ১৯শ কোটি টাকার মেগাপ্রকল্প হাতে নিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর। ৫৪ হাজার জেলে সরাসরি প্রকল্পের সুবিধা ভোগ করবেন। প্রকল্পের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন, পুষ্টির ঘাটতি পূরণ, সাগরের জীববৈচিত্র্য রক্ষা, প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট স্থাপন, খাল খনন, মাছ ধরার যান্ত্রিক-অযান্ত্রিক বোট মনিটরিং করে জলবায়ু সহনশীল প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মৎস্য সম্পদের উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে মৎস্য অধিদপ্তর।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রইছউল আলম ম-ল বলেন, ‘এই প্রকল্পটি হচ্ছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। মৎস্যজীবীদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষে প্রকল্পটি নেয়া হয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক হাসান আহম্মেদ চৌধুরী জানান, ১৮শ ৯২ কোটি এক লাখ টাকা ব্যয়ে ‘সাসটেইনেবল কোস্টাল এন্ড মেরিন ফিশারিজ’ প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। বরাদ্দের ১৫শ ৫৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকা সহায়তা দেবে বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশ সরকার দেবে ৩০৩ কোটি ৬২ লাখ টাকা। প্রকল্পটি দেশের উপকূলীয় এলাকার ১৬ জেলার ৭৫ উপজেলার ৭৫০ ইউনিয়নে বাস্তবায়ন করা হবে।
প্রকল্পের মাধ্যমে একশ’ বাণিজ্যিক ট্রলারে ভ্যাসেল মনিটরিং সিস্টেম স্থাপন করে সাগরে জাহাজের অবস্থান মনিটরিং করা হবে। এছাড়াও ১০ হাজার যান্ত্রিক নৌকায় এআইএস(অটোমেটিক আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম) সংযোগ করে জেলেদের জীবন ও সম্পদের ঝুঁকি কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে। প্রকল্পের মাধ্যমে ১৬টি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পেট্রোল বোট কেনা হবে। হাইড্রোলজিক্যাল সার্ভে, স্যালানাইজেশন ম্যাপিং ও খাল পুনর্বাসনের পরিকল্পনাও নেয়া হয়েছে।
চিংড়ি উৎপাদনে বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রকল্পে ৬শ ক্লাস্টারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যার মাধ্য ১৫ হাজার প্রান্তিক চিংড়ি চাষি বিজনেজ প্ল্যান তৈরি ও ই-ট্রেসিবিলিটি উন্নয়ন, ডাটা বেইজ তৈরি ও আইডি কার্ড প্রদান করা হবে। ৬শ ক্লাস্টার কন্ডিশনাল ম্যাচিং গ্রান্ট প্রদানে প্রাথমিক অবস্থায় গড়ে ২০ শতাংশের বেশি চিংড়ি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার লক্ষ্যে হ্যাচারি সিস্টেম উন্নয়ন করা হবে।
প্রকল্পে ১৬টি মেরিন ফিশারিজ সার্ভিল্যান্স চেকপোস্ট নির্মাণ ও পন্টুন স্থাপন, ১৮টি ফিশ ল্যান্ডিং সেন্টার নির্মাণ, ফিশ মার্কেট পুনর্বাসন ও আধুনিকায়ন, হার্ভেস্ট লস কমানো ও ৩টি ফিশ কোয়ারেন্টাইম ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হবে। এছাড়াও ৩টি ফিশ ডায়াগনস্টিক ল্যাব প্রতিষ্ঠা, ৩টি পিসিআর ল্যাব আধুনিকায়ন, ১টি রেফারেন্স ল্যাব প্রতিষ্ঠা, ম্যানেজম্যান্ট সেন্টার (বিএমসি) স্থাপন করা হবে। মৎস্য সম্পদের উন্নয়নে ১২৯ টি উপকূলীয় খাল খনন করা হবে।
উপকূলীয় ৪৫০টি মৎস্য গ্রামে কমিনিউটি সেভিংস গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করা করা হবে। এরমধ্যে একটি মডেল জেলে গ্রাম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ৬০ শতাংশ সুবিধাভোগীকে অর্থ সহায়তা প্রদান করা হবে। মডেল গ্রামের ১৮শ যুবক-যুবতীকে ভোকেশনাল ও দক্ষতার উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। একশ প্রডিউসার গ্রুপ তৈরি এবং নিবন্ধনের আওতায় আনা হবে। ৯০টি ইয়ুথ ফেস্টিভাল প্রোগ্রাম ও ৬টি জব ফেয়ারের আয়োজন করা হবে। এর মাধ্যমে ৪৫টি উপজেলায় জেলে ফেডারেশন প্রতিষ্ঠা করা হবে। যার মাধ্যমে দেশের ৫৪ হাজার জেলে সরাসরি সুবিধা ভোগ করবে। উপকূলীয় এলাকায় ৩টি আঞ্চলিক, ১৬ জেলার ৭৫টি উপজেলা অফিস স্থাপন করে প্রকল্পের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে মৎস্য অধিদপ্তর।
মৎস্য অধিদপ্তরের এই মেগা প্রকল্পে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ফেনী ও নোয়াখালী জেলার উপকূলীয় জলাশয়ে ক্লাস্টার ফার্মিং পদ্ধতিতে সামুদ্রিক মাছ চাষ প্রবর্তন ও চিংড়ি উৎপাদন বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়াও মৎস্যজীবীদের জীবনমান উন্নয়নে প্রশিক্ষণ ও বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা গ্রহণ ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে। আদর্শ মৎস্য গ্রাম প্রতিষ্ঠা, সঞ্চয়ের ব্যবস্থা করা ও আইডি কার্ড প্রদান করা হবে।
চট্টগ্রাম বিভাগে ৭ টি মেরিন ফিশারিজ সার্ভিল্যান্স চেকপোস্ট স্থাপন করা হবে। এর মধ্যে কক্সবাজারে ৩ টি, চট্টগ্রামে ২টি, নোয়াখালীতে একটি ও লক্ষ্মীপুরে একটি। এছাড়াও মিরসরাই উপজেলায় ফিশ হেল্থ ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরি নির্মাণ এবং কক্সবাজারের টেকনাফ ও নগরীতে ফিশারিজ কোয়ারেন্টাইন ল্যাবরেটরি নির্মাণ করা হবে। বিএফডিসি চট্টগ্রাম এর বেসিন সংস্কার করা হবে।
কক্সবাজারে একটি এসপিএফ চিংড়ি ব্রুড ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র (বিএমসি) ও একটি পিসিআর ল্যাব স্থাপন, সামুদ্রিক শৈবাল, ভেটকি, বাটা মাছ চাষ, খাঁচায় মাছ, কাঁকড়া, ঝিনুক চাষের জন্য মেরিকালচার প্রতিষ্ঠা করা হবে।
উল্লেখ্য, দেশে ৭১০ কিলোমিটার উপকূলীয় অঞ্চল, সামুদ্রিক জলসীমার পরিমাণ এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার। সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা ৬৯৮ বর্গ কিলোমিটার, জেলে সংখ্যা ৫ কোটি ১৬ লাখ। সামুদ্রিক মৎস্য উৎপাদন (২০১৭-১৮) সালে ৬ লাখ ৫৪ হাজার ৬৮৭ মে. টন। এর মধ্যে বাণিজ্যিক ট্রলারের আহরণ এক লাখ ২০ হাজার ৮৭ মে. টন। আর্টিসেনাল ট্রলারে আহরণ ৫ লাখ ৩৪ হাজার ৬শ মে. টন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট