চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

আবৃত্তিশিল্পে পেশাদারিত্ব : সংকট ও সম্ভাবনা

তারুণ্যের উচ্ছ্বাসের সেমিনার

রাতুল হাসান

১৫ জুন, ২০১৯ | ১:৪৭ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের অন্যতম আবৃত্তি সংগঠন ‘তারুণ্যের উচ্ছ্বাস’ এবছর পথচলার একযুগ পূর্ণ করছে। প্রতিষ্ঠার যুগপূর্তির বছরটিকে স্মরণীয় করে রাখতে বছরব্যাপী যুগপূর্তি অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করছে ২০০৭ সালে যাত্রা শুরু করা সংগঠনটি।
বছরব্যাপী যুগপূর্তি অনুষ্ঠানমালার পঞ্চম আয়োজন ‘আবৃত্তিশিল্পে পেশাদারিত্ব: সংকট ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনার ২৪ মে ২০১৯ ৩ টায় চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমি গ্যালারি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আবৃত্তিশিল্পী ও সংগঠক ফারুক তাহের। তারুণ্যের উচ্ছ্বাস সভাপতি ভাগ্যধন বড়–য়ার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মো. মুজাহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় প্রবন্ধের উপর আলোচনা করেন, দৈনিক প্রথম আলোর সহকারী বার্তা সম্পাদক কবি ওমর কায়সার, নাট্যজন ও আবৃত্তিশিল্পী শান্তনু বিশ্বাস, কবি ও সাংবাদিক কামরুল হাসান বাদল, সম্মিলিত আবৃত্তি জোটের সভাপতি অঞ্চল চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক ড. কুন্তল বড়–য়া এবং আবৃত্তিশিল্পী মিলি চৌধুরী।
সেমিনারে আবৃত্তিশিল্প নিয়ে বক্তারা বলেন, ‘একটা সময়ে আবৃত্তি চর্চা ছিল শৌখিন কিংবা আধা শৌখিন সংস্কৃতি চর্চা। বড় কোন সাংস্কৃতিক আয়োজনে গান কিংবা নৃত্যের ফাঁকে কিয়ৎ বিরতকালে আবৃত্তিকার সুযোগ পেতেন পর্দার অন্তরালে থেকে আবৃত্তি করতে। ধীরে ধীরে শিক্ষিত-আধাশিক্ষিত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কর্ণকুহরে আবৃত্তিকারের কণ্ঠমাধুর্য আলোড়ন সৃষ্টি করতে থাকে। সমাজের একটা শ্রেণীর কাছে তা দিন দিন প্রিয় হয়ে ওঠতে থাকে। ফলে পর্দার অন্তরালে বা মঞ্চের আপসা অন্ধকার স্থান থেকে অচিরেই আবৃত্তিকারের স্থান হয়ে যায় জনসমক্ষে ও মঞ্চের আলোকোজ্জ্বল পরিবেশে। এতে আবৃত্তি চর্চার প্রসারতা যেমন বাড়তে লাগল, তেমনি আলাদা শিল্প হিসেবে তা শ্রোতাম-লীর কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠতে আর বেশি সময় লাগল না। নামী আবৃত্তিশিল্পীরা সম্মানীর বিনিময়ে মঞ্চের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এবং বেতার-টেলিভিশনে আবৃত্তি করার সম্মান অর্জন করেন। এতে আবৃত্তির একটি পৃথক শিল্পমূল্য তৈরি হয়েছে।’
আবৃত্তিচর্চার পেশাদারিত্বের সম্ভাবনা বিষয়ে বক্তারা বলেন, ‘ছোট পরিসরে হলেও আবৃত্তিশিল্পী সম্মানীর প্রচলন কিছু কিছু আয়োজনে হচ্ছে। প্রশিক্ষণে সম্মানি প্রদান, বেতার টেলিভিশনে আবৃত্তির অনুষ্ঠান বৃদ্ধি পাওয়া, অনুষ্ঠান ঘোষণা বা উপস্থাপনায় সম্মানির বিনিময়ে আবৃত্তিশিল্পীদের অংশগ্রহণ এটিকে উপপেশা হিসেবে গ্রহণের সম্ভাবনা তৈরী করছে। এছাড়া বহুমাত্রিক আঞ্চলিক ভাষার চর্চা থাকার কারণে আমাদের বাংলা ভাষার উচ্চারণ অঞ্চলভেদে ভিন্নতা দেখা যায় এবং তা বিদ্যমান থাকবে। এ অবস্থায় প্রমিত ভাষা বা মান ভাষা নির্ধারণ ও চর্চার জন্য আমাদের শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা থেকেই শুদ্ধ ভাষা চর্চার শিক্ষা দেওয়ার প্রস্তাবনা এসেছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শুদ্ধ উচ্চারণ ও আবৃত্তি প্রশিক্ষণের এই সরকারি প্রকল্প কার্যকর হলে হাজার হাজার আবৃত্তিকর্মী বা শিল্পী একে পেশা হিসেবে গ্রহণ করতে পারবে নির্দি¦ধায়।’
বছরব্যাপী যুগপূর্তি অনুষ্ঠানমালা প্রসঙ্গে তারুণ্যের উচ্ছ্বাস সাধারণ সম্পাদক আবৃত্তিশিল্পী মো. মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিষ্ঠার পর থেকে কবিতার বিশুদ্ধ কথামালাকে শক্তি করে বিগত একযুগ তারুণ্যের উচ্ছ্বাস সমৃদ্ধ হয়েছে নানা আয়োজন উৎসবে অভিজ্ঞতায়। তারুণ্যের উচ্ছ্বাস প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশের গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনে মঞ্চে ও প্রয়োজনে রাজপথে সোচ্চার ছিল। আমরা বিগত সময়ের অভিজ্ঞতাকে সঞ্চয় করে ২০১৯ সালে বছরব্যাপী আবৃত্তি অনুষ্ঠান, সেমিনার, প্রতিযোগিতা, প্রযোজনা ও উৎসব আয়োজনের মধ্য দিয়ে যুগপূর্তির বছরটিকে আরও সৃষ্টিমুখর করে স্মরণীয় করে রাখার উদ্যোগ নিয়েছি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট