চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বাচিক শিল্পের কিঙ্কিণী কঙ্কন দাশ

ফারমিনা বৃষ্টি

২৫ মে, ২০১৯ | ২:০১ পূর্বাহ্ণ

নৃত্যগুরু রুনু বিশ^াসের কাছে নৃত্যে হাতেখড়ি কঙ্কন দাশের। কিন্তু হয়ে গেলেন দুই বাংলার পরিচিত বাচিক শিল্পী! গ্রুপ থিয়েটার নাটকেরও এক অনিবার্য নাম কঙ্কন দাশ। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারিণী কঙ্কন দাশ প্রচার থেকে সব সময় দূরে সরিয়ে রাখেন নিজেকে। এই গুণী শিল্পীর কিছু কথা এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হলো।
আগেই বলেছি কঙ্কনের শুরুটা নাচ দিয়ে। মা মুকুল দাশের হাত ধরে পথ চলা। বাবা বিশে^শ^র দাশ অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। নৃত্যগুরু রুনু বিশ^াসের কাছে হাতেখড়ি হওয়ার পরবর্তীকালে নৃত্য প্রশিক্ষক অনীল মিত্রের পাশাপাশি অগ্রণী সংঘ ও প্রাচ্যছন্দ গীতিকায় অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত নাচের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। অগ্রণী সংঘ ও প্রাচ্যছন্দ গীতিকায় প্রায় অনুষ্ঠানে নিয়মিতভাবে নাচে অংশ নিতেন। আশি দশক থেকে নব্বুই দশক পর্যন্ত নাচ ও গান একই সঙ্গে চালিয়ে গেছেন।
অন্যদিকে, অমিতাভ বড়–য়ার কাছে গানে হাতেখড়ি। এসময় কঙ্কন সঙ্গীতময় হয়ে উঠতে চেয়েছিলেন। তাই প্রদীপ দাশ, সন্ধ্যা রানী পাল, প্রখ্যাত রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী আইরিন সাহা এবং অনীল বাবুর কাছে দীর্ঘদিন সঙ্গীতে তালিম নিয়েছেন।
’৮৬ সালে আবৃত্তি সংগঠন ‘শব্দ সড়ক’-এর সঙ্গে যুক্ত হন। নিয়মিত আবৃত্তি চর্চার শুরু এখান থেকেই। একাডেমিক কোন প্রশিক্ষণ ছাড়াই কঙ্কন দাশ আজকের শীর্ষে পর্যায়ের বাচিক শিল্পী হয়ে উঠেছেন-নিজের চর্চায়। পরবর্তীকালে অর্থাৎ ’৯০ সালে ‘প্রমা’ আবৃত্তি সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। বর্তমানে সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
১৯৮৮ সালে ‘প্রতিভাস’ নাট্যসম্প্রদায়ের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে নাট্যাঙ্গনেও আবির্ভূত হন তিনি। প্রতিভাসে ‘কিনু কাহারের থিয়েটার’ এর মাধ্যমে অভিনয় জগতে পা রাখা। এরপর আর তাকে পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। অনেকগুলো বিখ্যাত নাটকে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ ঘটে। এর মধ্যে ‘জায়া প্রজায়িনী’ ‘কোর্ট মার্শাল’, ‘শরতের মেঘ’ উল্লেখযোগ্য। এরপর, অরিন্দম-এর ‘দুতিয়ার চান’, ‘জনকল্যাণ’, নান্দীমুখের ‘বেলা শেষের গল্প’, লাল লণ্ঠন, ঊর্ণাজাল, উত্তরাধিকারের ‘সম্পাম নাইয়া’, ‘মন তার শঙ্খিনী’, ‘মৃত্যুপাখি’, এক্ট ওয়ানের ‘ভেতরে বাইরে’, চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় থিয়েটারের ‘আন্তিগোনে’, শিল্পকলা একাডেমি প্রযোজিত ‘বধ্যভূমি’ ‘কানার হাট-বাজার’, ‘মেহের জান’, ‘সোহরার রুস্তম’, একাডেমি অব পারফর্মিং, আর্টে’র ‘আগুন পাখি’, মঞ্চমুকুটের ‘পুতুল খেলা’। বিটাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ব্যানারে কঙ্কন দাশ ভারতসহ বিভিন্ন দেশে অভিনয় করেছেন।
প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের হয়ে কঙ্কন দাশ বিভিন্ন শ্রুতি নাটকের নির্দেশনাও দিয়েছেন। এর মধ্যে পল্লী কবি জসিমউদ্দীনের ‘সুজন বাদিয়ার ঘাট’, ‘মহুয়ার পালা’, হুমায়ুন আজাদের ‘ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও তিনি ‘রাম রাবণের ছড়া’, ‘রঙিন ফানুশ’, ‘পরিচয় আমি বাঙালি’র নির্দেশনা দিয়েছেন।
আবৃত্তি ও নাট্যশিল্পী কঙ্কন দাশ অনেকগুলো স্বল্পদৈর্ঘ্যরে চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। তারমধ্যে চলচ্চিত্র নির্মাণ মোরশেদ হিমাদ্রীর ‘হলুদ শিখরে স্বপ্নের কোলাজ’, হিন্দোল রায়ের ‘খোলা হাওয়া’, শৈবাল চৌধূরীর ‘ভূমিকম্পের পরে’, ইফতেখার আহমেদের ‘দৃশ্যছায়া’, এবং মোকাদ্দেম মোরশেদের ‘লরি’ অন্যতম।
শিল্পী কঙ্কন দাশ একক আবৃত্তি করেছেন, কলকাতার তারা টিভির ‘আজ সকালের আমন্ত্রণে’ (২০১৪ ও ২০১৯), ‘অবন মহল সিটিএল’ ঢাকুরিয়া কলকাতা, আগরতলার ‘কবিতা লোক’, আগরতলা, ত্রিপুরার ‘ভুবনেশ^রী টেলিভিশন’ (২০১৭-২০১৯), বাংলাদেশ হাইকমিশন আয়োজিত আগরতলায় ‘স্বাধীনতা দিবস ২০১৭’, আইসিসি আর ভারতীয় হাই কমিশন ঢাকা, বঙ্গীয় সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্মেলন, শান্তি নিকেতন (২০১৯) কলকাতার ‘চ্যানেল ওয়ার্ন’ উল্লেখযোগ্য।
শিক্ষাক্ষেত্রে কঙ্কন দাশ বিএ (অনার্স) এবং বাংলা সাহিত্যে এমএ ডিগ্রী অর্জন করেন। এছাড়াও এলএলবি’র প্রথম পর্ব সমাপ্ত করেছেন। বর্তমানে সরাইপাড়া সিটি কর্পোরেশন কিন্ডার গার্টেন-এর হেড মিস্ট্রেস হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি থিয়েটার বিষয়ক দেশি-বিদেশি অনেকগুলো কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন।
একাধারে, নৃত্য, সঙ্গীত, আবৃত্তি ও অভিনয় শিল্পী হিসেবে কঙ্কন দাশের ঝুলিতে রয়েছে বহু পুরস্কার। এরমধ্যে উত্তরাধিকার নাট্য সম্মাননা (২০১৪), অরিন্দম নাট্য সম্প্রদায় সম্মাননা (২০১৬), ত্রিপুরার ভুবনেশ^রী টেলিভিশনের সম্মাননা (২০১৫, ২০১৬, ২০১৭), আগরতলা ত্রিপুরার বাংলাদেশে হাই কমিশন সম্মাননা (২০১৬) এবং নান্দীমুখ নাট্য সম্মাননা (২০১৭) উল্লেখযোগ্য।
ব্যক্তিগত জীবনে কঙ্কন দাশ স্বামী আশীষ রায় চৌধুরী ও একমাত্র সন্তান কুশল রায় চৌধুরীকে নিয়ে সুখের সংসার করছেন।
পরিশ্রমী ও অত্যন্ত বন্ধুবৎসল এবং সদা হাসি-খুশির মনের কঙ্কন দাশ ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম শুধু নয়, দেশ ও দেশের বাইরেও নিজের কীর্তি তুলে ধরতে পেরেছেন। তার অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে এই প্রত্যাশা করছি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট