চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সম্পাদক নজরুল ও ধূমকেতু

অরুণ দাশগুপ্ত

২১ জুন, ২০১৯ | ১:৪১ পূর্বাহ্ণ

কাজী নজরুল ইসলাম প্রধানত ‘বিদ্রোহী কবি’ অভিধায় অভিহিত। অথচ তাঁর প্রতিভা বহুধাবিস্তৃত। তিনি একাধারে কথাকার, নাট্যকার গীতি-রচয়িতা, সুরকার, রাগ¯্রষ্টা। এছাড়াও তাঁর আরেকটি পরিচয় আছে, যা একালের প্রজন্মের অনেকেই অপেক্ষাকৃত কম অবগত। এ পরিচয়টি হলো,-নজরুল একজন নির্ভিক সাংবাদিক ও সম্পাদক। ‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা’, ‘দৈনিক নবযুগ’, ‘দৈনিক সেবক’, ‘মোসলেম ভারত’, ‘লঙ্গল,’ ‘গণবাণী’, ‘বিজলী’, ‘বৈতালিক, সঙ্গে তিনি সাংবাদিকতায় জড়িত ছিলেন। এসব পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কাজ করতে গিয়ে তিনি যে উদ্ভাবনী শক্তির পরিচয় দিয়েছিলেন তা বাংলা সংবাদপত্রের ইতিহাসে এক ভিন্নমাত্রা যোগ করেছিল। বিশেষ করে ভারতে কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা কমরেড মুজফফর আহমদের সঙ্গে তাঁর যুগ্ম সম্পাদনায় প্রকাশিত সান্ধ্য দৈনিক ‘নবযুগ’ বের হবার সঙ্গে সঙ্গে যে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল, সেটাও বাংলা সাংবাদপত্রের এর জগতে নতুন ইতিহাস। এই জনপ্রিয়তার মূলে ছিল নজরুলের অনলবর্ষী লেখা ও সংবাদ-শিরোনাম বা ‘হেডিং’-এর অভিনবত্ব। কেবল এটা নয়, পত্রিকাটি বাংলা সংবাদপত্রে নবযুগ প্রবর্তন করে। ‘নবযুগ’-এর আদর্শ ছিল ‘স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের’ প্রচার। ‘নবযুগ’ পত্রিকায় বিল্পবী সাংবাদিকতার সেই উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যই নজরুলকে আর একটি বিপ্লাত্মক পত্রিকা সম্পাদনা করতে প্রেরণা যোগায়। প্রধানত স্বাধীনতার তাঁর রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রকাশের জন্যই তিনি এই পত্রিকা প্রকাশে উদ্যোগী হন। পত্রিকাটি হলো-‘ধূমকেতু’। ধূমকেতু ছিল রবীন্দ্রনাথের আর্শীবাদধন্য। ১৯২২ খ্রিস্টীয় সালের ১১ আগস্ট পত্রিকাটির প্রথম প্রকাশ। প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই সন্ত্রাসবাদী বিপ্লবীদের কাছে পত্রিকাটি সর্বান্তকরণে গৃহীত হয়। তারা তাঁদেরই কাগজ বলে গ্রহণ করে। এতে প্রকাশিত হয় ‘সর্বপ্রথম পূর্ণ স্বাধীনতা’ দাবি তোলা, অনলবর্ষা রাজনৈতিক ভাষণে দীপ্র-সম্পাদকীয় নিবন্ধ।
।। দুই।।
সময়টা জুন মাসের প্রথম দিক, ১৯২২ সাল। লেখক ও সাংবাদিক মুহম্মদ ওয়াজিদ সাহেবের চিঠি পেয়ে নজরুল কুমিল্লা থেকে কোলকাতা ফিরে এলেন। ওয়াজিদ আলী সাহেব চিঠিটা দিয়েছিলেন নজরুলকে ‘দৈনিক সেবক’ পত্রিকায় যোগ দেওয়ার জন্য জানিয়ে। নজরুল কোলকাতা ফিরে এসেই ‘সেবকে’ যোগ দিলেন সম্পাদক পদে। ১৯২২ সালের ২৫ জুন ‘ছন্দের যাদুকর’ বলে আখ্যায়িত কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের অকাল প্রয়াণে নজরুল পর দিনই ‘দৈনিক সেবকে’ একটি ভাবপ্রবণ সম্পাদকীয়। শুধু তা-ই নয়, সেই সন্ধ্যায় কলেজ স্ট্রিটের স্টুডেন্টস হলে অনুষ্ঠিত শোক সভায়ও যোগ দিলেন। এ সভায় সভাপতিত্ব করেছিলেন কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। নজরুল এই শোকসভায় তাঁর রচিত একটি গান গেয়ে শোকসভায় উপস্থিত সুধীজনদের শোনান। গানটি ছিল সত্যেন্দ্রনাথের প্রতি উৎসগ্রিকৃত। গানটির প্রথম চরণ হলো,-
“চল চঞ্চল ধনীর দুলাল এসেছিলে পথে ভুলে,
ওগো এই গঙ্গার কূলে।”
এরই মধ্যে একদিন চট্টগ্রাম জেলার হাফিজ মস্উদ্ আহমদ্ নামের এক ব্যক্তি আড়াইশ’ টাকা যোগাড় করে একটি বাংলা রাজনৈতিক সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করতে মুজফ্ফর আহমদের কাছে প্রস্তাব দেন। মাত্র আড়াইশ’ টাকা নিয়ে পত্রিকা প্রকাশ করা হঠকারিতা হবে ভেবে, মুজফ্ফর আহমদ শোনামাত্রই প্রস্তাবটি নাকচ করে দেন। কিন্তু মস্উদ্ আহমদ্ হতাশ হলেন না। তিনি নজরুলের কাছে গিয়ে প্রস্তাবটি করেন। নজরুল প্রস্তাবটি শুনেই রাজি হয়ে গেলেন। এবং বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করে পত্রিকা প্রকাশের যাবতীয় উদ্যোগ নিজেই নিয়ে নেন। ‘সপ্তাহে দু’বার বের হবে’ কথাটি জানিয়ে নিজেই পত্রিকাটির নামকরণ করেন ‘ধূমকেতু’। ১৯২২ সালের ১১ আগস্ট, ১৩২৯ বঙ্গাব্দের ২৬ শ্রাবণ শুক্রবার ৩২ নম্বর কলেজ স্টিট থেকে ক্রাউন ফোলিও সাইজের অর্ধ সাপ্তাহিক আট পৃষ্ঠার পত্রিকা ‘ধূমকেতু’ প্রকাশিত হয়। সারথি (সম্পাদক) ও স্বত্ত্বাধিকারী নজরুল ইসলাম, কর্মসচিব (ম্যানেজার) শান্তিপদ সিংহ, মুদ্রাকর ও প্রকাশক আফজালুল হক সাহেব দাম এক আনা, বার্ষিক গ্রাহক চাঁদা পাঁচ টাকা।
ইতিমধ্যে ধূমকেতুর জন্য নজরুল যাঁদের কাছে আর্শীবাণী চেয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য রবীন্দ্রনাথের বাণী। বাণীটি হলো:-
কাজী নজরুল ইসলাম কল্যাণীয়েষু,
‘আয় চলে আয়, রে ধূমকেতু,
আঁধারে কবি অগ্নিসেতু,
দুর্দিনের এই দুর্গাশিরে
উড়িয়ে দে তোর বিজয় কেতন।
অলক্ষণের তিলক রেখা
রাতের ভালে হোক্ না লেখা,
জাগিয়ে দে রে চমক মেরে
আছে যারা অর্দ্ধচেতন।’
শ্রী-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ( ১৪ শে শ্রাবণ ১৩২৯ )
‘ধূমকেতু’ পত্রিকার প্রকাশের শুভলগ্নে রবীন্দ্রনাথের কাছে আর্শীবাদ প্রার্থনা প্রসঙ্গে অচিত্যকুমার সেনগুপ্ত ‘কল্লোল যুগ’ বর্ণনা করেছেন-
“নজরুল শেষ মুহূর্তে তাঁকে টেলিগ্রাম করেছিল। রবীন্দ্রনাথ কবে কাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন? এ নজরুল, যার কবিতায় পেয়েছেন তিনি তপ্ত প্রাণের নতুন সজীবতা। শুধু নামে আর টেলিগ্রামে তিনি বুঝতে পারলেন ‘ধূমকেতু’র মর্মকথা কি। যৌবনকে ‘চিরজীবী’ আখ্যা দিয়ে ‘বলাকা’য় তিনি ঘা মেরে বাঁচতে বলেছিলেন, সেটাতে রাজনীতি ছিল না, কিন্তু, এবার ‘ধূমকেতু’কে তিনি যা লিখে পাঠালেন তা সুষ্ঠু রাজনীতি, প্রত্যক্ষ জাগরণের সংকেত।”
‘ধূমকেতুর প্রকাশ উপলক্ষে রবীন্দ্রনাথ ছাড়াও আর যাঁরা বাণী পাঠিয়েছিলেন, তাঁরা হলেন, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, কবি শেখর কালিদাস রায়, শরৎচন্দ্র প-িত। স্বাগত জানান, বিপ্লবী বারীন্দ্রকুমার ঘোষ ও উপেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়। রবীন্দ্রনাথের আর্শীবাদটি ‘ধূমকেতু’র প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হতো প্রথম সংখ্যা থেকে ষষ্ঠ সংখ্যা পর্যন্ত। সপ্তম সংখ্যা থেকে তা মুদ্রিত হতো সম্পাদকীয় স্তম্বের ওপরে তৃতীয় পৃষ্ঠায়।
।। তিন।।
রবীন্দ্রনাথের আর্শীবাণী শিরোধার্য করে প্রথম সংখ্যাতেই ‘সারথির পথের খবর’ শিরোনামাংকতি সম্পাদকীয় নিবন্ধে নজরুল ঘোষণা করলেন, ‘ধূমকেতু’র লক্ষ্য ও পথ: “মাভৈ: বাণীর ভরসা নিয়ে’ ‘জয় প্রলংকর’ বলে ‘ধূমকেতু’-কে রথ করে আমার আজ নতুন পথে যাত্রা শুরু হল। আমার কর্ণধার আমি। আমায় পথ দেখাবে আমার সত্য। আমার যাত্রা শুরুর আগে আমি সালাম জানাচ্ছি-নমস্কার করছি আমার সত্যকে।…দেশের যারা শত্রু, দেশের যা কিছু মিথ্যা, ভ-ামি, সেকি তা সব দূর করতে ধূমকেতু হতে আগুনের সম্মার্জনী…ধূমকেতু কোনো সাম্প্রদায়িক কাগজ নয়। মানুষ ধর্মই সবচেয়ে বড়ো ধর্ম। হিন্দু মুসলমানের মিলনের অন্তরায় বা ফাঁকি কোনখানে তা দেখিয়ে দিয়ে এর গলদ দূর করা এর অন্যতম উদ্দেশ্য।”
একই সঙ্গে এই সংখ্যাতেই নজরুল লিখেছিলেন তাঁর ‘ধূমকেতু’ নামে অগ্নিগর্ভ কবিতাটি।
আমি যুগে যুগে আসি, আসিয়াছি পুনঃ মহা বিপ্লব হেতু
এই ¯্রষ্টার শনি মহাকাল ধূমকেতু।….
আমি জানি জানি ঐ ¯্রষ্টার ফাঁকি সৃষ্টির ঐ চাতুরি,
তাই বিধি ও নিয়ন্তে লাথি মেরে, ঠুকি বিধাতার বুকে হাতুড়ি।
আমি জানি জানি ঐ ভুয়ো ঈশ^র দিয়ে যা হয়নি হবে তাও।
তাই বিপ্লব আনি, বিদ্রোহ, করি।
(ধূমকেতু: অগ্নিবীণা)
‘ধূমকেতু’-তে কবিতাটি প্রকাশের পর পরই যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল তা লক্ষ করা যায় সমকালীন পত্র-পত্রিকায় বিভিন্ন মন্তব্যে। দৈনিক বসুমতী’, ‘আত্মশক্তি’, ‘প্রসূন’ পরিদর্শক ছাড়াও ইংরেজি দৈনিক ‘অমৃত বাজার পত্রিকা’ ৩০ আগস্ট ১৯২২ সংখ্যায় লেখা হয়েছিল :
“ডব পড়ৎফরধষষু বিষপড়সব ঃযব ধফাবহঃ ড়ভ ড়ঁৎ হবি ইবহমধষর পড়হঃবসঢ়ড়ৎধৎু, ‘উযড়ড়সশবঃঁ’ ধ নর-বিবশষু বফরঃবফ নু ঐধারষফধৎ শধুর ঘড়ুৎড়ড়ষ রংষধস, ঞযব ধৎঃরপষবং ভৎড়স ঃযব বফরঃড়রহধষ চবহ রহ ‘উযড়ড়সশবঃঁ’ ভঁষষু ংঁংঃধরহ ঃযব ৎবঢ়ঁঃধঃরড়হ ড়ভ ঃযব ংড়ষফরবৎ-ঢ়ড়বঃ ধহফ ঃযব পড়ষষবপঃরড়হ যব যধং নববহ ধনষব ঃড় সধশব ড়ঁৎ রহ ঃঁহব রিঃয ঃযব ভরৎব ধহফ বহবৎমু ড়ভ যরং ড়হি ৎিরঃরহম. ঞযবৎব রং ংড়সবঃযরহম হড়াবষ, ংড়সবঃযরহম বহঃযৎধষষরহম ওহ ঃযরং হবি াবহঃঁৎব. ডব যড়ঢ়ব ঃযব ‘উযড়ড়সশবঃঁ’ ড়হ পড়সবঃ রিষষ হড়ঃ ংরসঢ়ষু নব ধহ ঁহনষবহ ড়ভ ফবংঃৎঁপঃরড়হ রহ ঃযব যধহফং ড়ভ ঃযব ংড়ষফরবৎ-ঢ়ড়বঃ নঁঃ রিষষ পৎবধঃব ংড়সবঃযরহম ঃযধঃ রং নবধঁঃরভঁষ, ংড়সবঃযরহম ঃযধঃ রং ধনরফরহম ধহফ যড়ষু”
সে চাঞ্চল্যের বিষয়টি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তও বলেছেন:
“নৃপেনের মত আমিও ফার্স্টইয়ারের ছাত্র। সপ্তাহান্তে বিকেল বেলা আরো অনেকের সঙ্গে জগুবাবুর বাজারের মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকি, হকার কতক্ষণে ‘ধূমকেতু’র বান্ডিল নিয়ে আসে। হুড়িহুড়ি কাড়াকাড়ি পড়ে যায় কাগজের জন্যে। কালির বদলে রক্তে ডুবিয়ে ডুবিয়ে লেখা সেই-সব সম্পাদকীয় প্রবন্ধ।…শুনেছি স্বদেশী যুগের ‘সন্ধ্যা’-তে ব্রহ্মবান্ধব এমনি ভাষাতেই লিখতেন। সে কী কশা, কী দাহ। একবার পড়ে বা শুধু একজনকে পড়িয়ে শান্ত করবার মত সে লেখা নয়। যেমন গদ্য তেমনি কবিতা। সব ভাঙার গান, প্রলয়-বিলয়ের মঙ্গলাচরণ। ”
‘ধূমকেতু’-র ১৩ অক্টোবর ১৯২২ সংখ্যায় ‘ধূমকেতুর পথ’ শিরোনামে সম্পাদকীয় নিবন্ধে নজরুল বিন্দুমাত্র সংকোচ না করে ‘সর্বপ্রথম ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা’র দাবি উত্থাপন করেন। লেখা হলো:
“সর্বপ্রথম ‘ধূমকেতু’ ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা চায়। স্বরাজ-টরাজ বুঝি না, কেননা, ও-কথাটার মানে এক এক মহারথী এক এক রকম করে থাকেন। ভারতবর্ষের এক পরমাণু অংশও বিদেশীর অধীনে থাকবে না। ভারতবর্ষের সম্পূর্ণ দায়িত্ব, সম্পূর্ণ স্বাধীনতা রক্ষা, শাসন-ভার সমস্ত থাকবে ভারতীয়ের হাতে। তাতে কোন বিদেশীর মোড়লী অধিকারটুকু পর্যন্ত থাকবে না। যাঁরা এখন রাজা বা শাসক হয়ে এদেশে মোড়লী করে দেশকে শ্মশান ভূমিতে পরিণত করেছেন, তাঁদের পাততাড়ি গুটিয়ে, বোঁচকা পুঁটুলি বেঁধে সাগর পারে পাড়ি দিতে হবে। প্রার্থনা বা আবেদন নিবেদন করলে তাঁরা শুনবেন না। তাঁদের অতটুকু সুবৃদ্ধি হয়নি এখনো। আমাদের এই প্রার্থনা করার, ভিক্ষা করার কুবুদ্ধিটুকুকে দূর করতে হবে।”
নজরুলের মতো ‘এমন দ্ব্যর্থহীন চাঁছা-ছোলা ভাষায়’ কাগজে ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি ঘোষণা সে সময় আর কেউ করেন নি। সে সময়ের প্রেক্ষাপটে এটি বিস্ময়কর। ‘ধূমকেতু’ শুধু পূর্ণ স্বাধীনতার দাবিই জানায় নি, অচিরেই হয়ে উঠে ছিল সন্ত্রাবাদী বিপ্লবীদের ‘কাগজ’ এবং আন্দোলনের পথ-প্রদর্শক। মুজফ্ফর আহ্মদ একথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন :
“১৯২৩-২৪ সালে সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন আবার যে মাথা তুলল, তাতে নজরুলের অবদান ছিল, একথা বললে বোধ হয় অন্যায় করা হবে না। সন্ত্রাসবাদী বিপ্লবীদের দুটি বড় বিভাগের মধ্যে ‘যুগান্তর’ বিভাগের সভ্যরা তো বলেছিলেন, ‘ধূমকেতু’ তাঁদেরই কাগজ।…অতিমাত্রাই নিরুপদ্রবতা প্রচারের ফলে খানিকটা মিইয়ে গিয়েছিল। এই মিয়ানো হতে নজরুল তার লেখার ভিতর দিয়ে দেশকে চাঙ্গা করে তুলতে চেয়েছিল। এই করতে গিয়ে সে যে কেউ তুলেছিল তার দোলা লাগল গিয়ে সন্ত্রাসবাদীর প্রাণে।”
ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র দফতরের তৎকালীন সেক্রেটারিকে দাখিল করা এক রিপোর্ট বাংলা সরকারের তদানীন্তন মুখ্য সচিব এল বারলে ‘ধূমকেতু’কে ‘চরমপন্থী’ সংবাদপত্র হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। রিপোর্ট মি. বারলে লিখেছিলেন : ঃযব যিরৎষ রিহফ বহবৎমু ড়ভ ঃযব ংঃুষব ধহফ ঃযব রহভষধসধঃড়ৎু পযধৎধপঃবৎ ড়ভ ঃযব ষধহমঁধমব যধফ ধ মৎবধঃ ঁহংবঃঃরহম বভভবপঃ ড়হ রষষ-নধষধহপবফ সরহফং, রিঃয যিড়স ঃযব ঢ়ধঢ়বৎ ধিং রসসধবহপধষু ঢ়ড়ঢ়ঁষধৎ. অং ধ সধঃঃবৎ ড়ভ ভধপঃ ঃযব ঢ়ধঢ়বৎ ধিং চৎড়পবপঁঃবফ সড়ৎব ঃযধহ ড়হপব—’এদিকে থেকে ড. ভূপেন্দ্রনাথ দত্তের ‘যুগান্তর’ ও ব্রহ্মাবান্ধব উপাধ্যায়ের ‘সন্ধ্যা’ পত্রিকার যোগ্য উত্তরসুরি ‘ধূমকেতু’
।। চার।।
ধূমকেতু’তে প্রকাশিত যে কোন কবিতা বা প্রবন্ধ নিয়েই নজরুলের নামে মামলা হতে পারত, কিন্তু মামলা দায়ের করা হল একটি কবিতার বিরুদ্ধে। কবিতাটি হল ‘অনান্দময়ীর আগমনে’। ১৯২২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ‘ধূমকেতু’- দ্বাদশ সংখ্যায় কবিতাটি প্রকাশিত হয়। কবিতাটির কয়েকটি পঙ্ক্তি এখানে উদ্ধৃত করা গেল।
আর কতকাল থাকবি বেটী মাটির ঢেলার মূর্তি আড়াল?
স্বর্গ যে আজ জয় করেছে, অত্যাচারী শক্তি-চাঁড়াল।
দেব শিশুদের মারছে চাবুক, বীর যুবাদের দিচ্ছে ফাঁসি,
ভূ-ভারত আজ কসাইখানা-আসবি কখন সর্বনাশী?
দেব-সেনা আজ টানছে ঘাণি তেপান্তরের দ্বীপান্তরে,
রণাঙ্গনে নামবে কে আর তুই না এলে কৃপাণ ধরে?
কেবল ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ নয়, একই সঙ্গে ওই সংখ্যায় প্রকাশিত লীলা মিত্রের ‘বিদ্রোহীর কৈফিয়ৎ নিবন্ধুটিও রাজারাষে পড়ে। দুটি লেখাই বাংলা সরকার বাজেয়াপ্ত করে। অবশ্য এর আগে বাজেয়াপ্ত হয়েছিল নজরুলের রাজনৈতিক প্রবন্ধ সংকলন ‘যুগবাণী’। কিন্তু কবিতা লেখার জন্য নজরুলের কারাদ- এই প্রথম। ভারতীয় দ-বিধি আইনের ১২৪-এ ধারা অনুযায়ী ‘ধূমকেতু’র সম্পাদক নজরুল এবং তার মুদ্রাকার ও প্রকাশক আফ্জাজুল হক সাহেবের বিরুদ্ধে জারি হয় গ্রেপ্তারি পরওয়ানা। এ বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শী কমরেড মুজফ্ফর আহ্মদ জানিয়েছেন :
“তারিখটা ১৯২২ সালের ৮ই নভেম্বর ছিল। কমরেড আবদুল আলীম ও আমি সেদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে এক দোকানে চা খেয়ে বেড়াতে বেড়াতে ‘ধূমকেতু’ অফিসে গেলাম। …৭ নম্বর চাটুজ্জ্যে লেনস্থিত ‘ধূমকেতু’ অফিসে গিয়ে দেখলাম অত সকালেও শ্রী বীরেন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত এসে ‘ধূমকেতু’র জন্যে লিখছেন। কিছুক্ষণের মধ্যে দোতলায় ওঠার সিঁড়িতে এক সঙ্গে অনেকগুলি জুতোর শব্দ শোনা গেল। পুলিশ এসেছে ‘ধূমকেতু’ অফিসে তালাশির পরওয়ানা ও কাজী নজরুল ইসলামের নামে গিরেফতারী পরওয়ানা নিয়ে। নজরুল তখন সমাপ্তিপুরে গিয়েছিল বলে গিরেফতার হয়নি।….পুলিশ আমাদের গর্ভনমেন্ট অর্ডার দেখালেন যে ২৬ মে সেপ্টেম্বর (১৯২২) তারিখে ‘ধূমকেতু’-তে প্রকাশিত। ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ শীর্ষক একটি কবিতা ও ‘বিদ্রোহীর কোফিয়ৎ (অধ্যাপক শ্রী সাতকড়ি মিত্রের ছোট বোনটির লেখা) শীর্ষক একটি ছোট প্রবন্ধ বাজায়াপ্তি হয়ে গেছে। পুলিশ এই সংখ্যার কপিগুলো নিয়ে যাবেন বললেন। তারপর বাড়ীতে তালাশি হলো। ২৬ শে সেপ্টেম্বর তারিখের ‘ধূমকেতু’র যে কয়খানা কপি পাওয়া গেল তাই নিয়ে পুলিশ চলে গেলেন। আমাকে সার্চলিস্ট ও দিয়ে গেলেন।”
১৯২২ সালের ২৩ নভেম্বর কুমিল্লায় নজরুলকে গ্রেপ্তার করে কোলকাতায় আনা হয়। কোলকাতায় সে সময়কার মূখ্য প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট মিং সুইনহো’-র এজ লাশে অত্মপক্ষ সমর্থন করে যে বিকৃতি দেন তার খানিকটা এখানে দেওয়া গেল:
“আমার উপর অভিযোগ, আমি রাজবিদ্রোহী। তাই আমি রাজকারগারে বন্দী এবং রাজদ্বারে অভিযুক্ত।
একাধারে রাজার মুকুট, আর ধারে ধূমকেতুর শিখা। একজন রাজা, হাতে রাজদ-, আরজন সত্য, হাতে ন্যায়দ-।…..
আমি কবি, আমি অপ্রকাশ, সত্যকে প্রকাশ করার জন্য, অমূর্ত সৃষ্টিকে মূর্তিদানের জন্য ভগবান কর্তৃক প্রেরিত। কবি কণ্ঠে ভগবান সাড়া দেন। আমার বাণী সত্যের প্রকাশিকা, ভগবানের বাণী। সে বাণী রাজবিচারে রাজদ্রোহী হতে পারে, কিন্তু ন্যায়-বিচারে সে বাণী ন্যায়দ্রোহী নয়, সত্যদ্রোহী নয়। সে বাণী রাজদ্বারে দ-িত হতে পারে। কিন্তু ধর্মের আলোকে, ন্যায়ের দুয়ারে, তাহা, নিরপরাধ, নিষ্কলুষ, অম্লান, অর্নিবার্ণ সত্যস্বরূপ।…
আমার ভয় নাই, কেননা ভগবান আমার সাথে আছেন। আমার অসমাপ্ত কর্তব্য অন্যের দ্বারা সমাপ্ত হবে। সত্যের প্রকাশক্রিয়া নিরুদ্ধ হবে না। আমার হাতের ধূমকেতু এবার ভগবানের হাতের আগ্নমশাল হয়ে অন্যায়-অত্যাচারকে দগ্ধ করবে। আমার বহ্নি-এরোপ্লেনের সারথি হবে এবার স্বয়ংভগবান । অতএব মাভৈঃ। ভয় নাই।”
ঐ ঐতিহাসিক বিবৃতিটি ১৯২৩ সালের ২৭ জানুয়ারি ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’ শিরোনামে ‘ধূমকেতু’র শেষ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়।
১৯২৩ সালের ১৬ জানুয়ারি মুখ্য প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট মি. সুইনহো ভারতীয় দ-বিধি আইনের ১২০-এ ধারানুসারে নজরুলকে একবছর সশ্রম কারাদ- দ-িত করেন। ফলে ১৭ জানুয়ারি সকালে নজরুলকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে। সেই সময় নজরুলকে উৎসর্গীকৃত ‘বসন্ত’ গীতিনাট্যটি (২২ ফেব্রুয়ারি ১৯২৩) রবীন্দ্রনাথ পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায়ের মাধ্যমে আলিপুর জেলে নজরুলের কাছে পাঠিয়ে দেন। এই উপহার পেয়ে কৃতার্থ নজরুল ‘আমার সুন্দর’ প্রবন্ধে লিখেছিলেন:
“রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘বসন্ত’ নাটক আমায় উৎসর্গ করেন। তাঁর এই আর্শীবাদ মালা পেয়ে আমি জেলের সর্ব জ¦ালা-যন্ত্রণা, অনশন ক্লেশ ভুলে যাই। আমার মত নগণ্য তরুণ কবিতা লেখককে কেন তিনি এত অনুগ্রহ ও আনন্দ দিয়েছিলেন, তিনি জানেন। আমি কোনদিন জিজ্ঞাসা করিনি, তিনিও বলেন নি। আজ এই প্রথম মনে হলো, তাঁর দক্ষিণ হস্ত দিয়ে আমার ‘সুন্দরের’ আর্শীবাদ এসেছিল জেলের যন্ত্রণা-ক্লেশ দূর করতে।”
কয়েক মাস পরে বাংলার প্রাদেশিক সরকারের কুবুদ্ধিতে নজরুলকে সাধারণ কয়েদির পর্যায়ে নামিয়ে এনে তাঁকে হুগলি জেলা কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এই জেলে কারারুদ্ধ থাকার সময় জেল কর্তৃপক্ষের অমানুষিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে, বান্দিদের প্রাণে প্রতিরোধের আগুন ছড়িয়ে দিতে নজরুল লিখেছিলেন আমাদের বহুশ্রুত ‘শিকল পরার গান’:
এই শিকল-পরা ছল মোদের শিকল-পরা ছল।
এই শিকল পরেই শিকল তোদের করব রে বিকল।।
ক্রমেই বন্দিদের প্রতি কারাকর্তৃপক্ষের শাস্তি চরমে ওঠে। এই উৎপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে নজরুল তাঁর রাজনৈতিক সহবন্দিদের নিয়ে ‘মিলিতভাবে অনশন’ ধর্মঘট শুরু করেন। এ বিষয়ে নজরুল স্বয়ং। লিখেছেন :
“সাহিত্যিক ও কবিদের মধ্যে আমি প্রথম জেলে যাই, জেলে গিয়ে চল্লিশ দিন অনশন ব্রত পালন করি রাজবন্দীদের উপর অত্যাচারের জন্য। এই অপরাধে, আমাকে জেলের নানারকম শৃঙ্খল বন্ধন (লিংক ফেটার্স, বার ফেটার্স, ক্রস ফেটার্স প্রভৃতি) ও লাঞ্ছনা সহ্য করতে হয়।”
এই অনশন ধর্মঘটের খবর পেয়ে সমগ্র দেশ ক্ষোভে ফেটে পড়েছিল। বিচলিত হয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, চিত্তরঞ্জন দাশ, প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের মতো দেশবরেণ্য ব্যক্তিত্ব। ক্রমে নজরুলের শারীরিক অবস্থা সংকটজনক হয়ে উঠলে সাহিত্যিক বন্ধুদের অনুরোধে রবীন্দ্রনাথ যা লিখেছিলেন, তা জানা যায়, পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায়ের বর্ণনায় : ‘স্থির হলো, শিলং-এ কবির কাছে চিঠি লেখা হবে, তিনি কাজীকে অনশন ভাঙতে অনুরোধ করবেন। কিন্তু কবি যা লিখলেন তাতে আমরা নিজেদের আরো অসহায় বোধ করলাম। তিনি লিখলেন-আদর্শবাদীকে ত্যাগ করতে বলা তাকে হত্যা করারই সামিল। অনশনে যদি কাজীর মৃত্যুও ঘটে তা হলেও তার অন্তরের সত্য ও আদর্শ চিরদিন মহিমাময় হয়ে থাকবে।’
রবীন্দ্রনাথ পরে এ অবস্থার পরিণতির গুরুত্ব বুঝতে পারলেন এবং শিলং থেকে তিনি নজরুলের কাছে প্রেসিডেন্সি জেলে এক তারবার্তা পাঠান। রবীন্দ্রনাথের অস্থির কবি হৃদয়ের সেই মানসিক অবস্থার চিত্র আমরা দেখতে পাই পুত্র রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে লেখা চিঠিতে। কবি লিখেছেন :
কল্যাণীয়েষু,
রথী, নজরুল ইসলামকে প্রেসিডেন্সি জেলের ঠিকানায় টেলিগ্রাম পাঠিয়েছিলুম। লিখেছিলুম, এরাব ঁঢ় যঁহমবৎ ংঃৎরশব, ড়ঁৎ ষরঃবৎধঃঁৎব পষধরসং ুড়ঁ. জেলা থেকে সবসড় এসেছে ঃযব ধফফৎবংংবব হড়ঃ ভড়ঁহফ অর্থাৎ ওরা আমার বার্তা দিতে চায় না, কেননা নজরুল প্রেসিডেন্সি না থাকলেও ওরা নিশ্চয় জানে সে কোথায় আছে-। অতএব নজরুল ইসলামের আত্মহত্যায় ওরা বাধা দিতে চায় না।
-শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
অনেকেই নজরুলের অনশন ভঙ্গের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ‘দেশবাসীর নির্বাক উপেক্ষায়’ ব্যথিত কবি নিজের সংকল্প থেকে একচুলও নড়েন নি। অবশেষে কুমিল্লা থেকে কবির মাতৃসমা বিরাজ সুন্দরী দেবীকে নিয়ে আসা হয়। তাঁর অনুরোধে ৩৯ দিন পর নজরুল অনশন ভঙ্গ করেন। অনশন ভঙ্গের পর কবিকে বিশেষ রাজবন্দীর মর্যাদা দিয়ে বহরমপুর জেলা কারাগারে বদলি করা হয়। কারা কর্তৃপক্ষের অন্যায় অবিচার জুলুম ও অত্যাচারের প্রতিবাদে বিদ্রোহী কবির এই দীর্ঘদিনের অনশন ও কারাবরণ সমকালীন রাজনৈতিক আন্দোলনের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা। উপমহাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এটা স্বর্ণাক্ষরে লিখিত থাকবে।
‘ধূমকেতু’র একুশটি সংখ্যা পর্যন্ত প্রকাশিত হয় সারথি কাজী নজরুল ইসলামের নামে। ২২তম সংখ্যা থেকে সারথি, প্রকাশক ও মুদ্রাকর অমরেশ কাঞ্চি লাল। তাঁর পরিচালনায় আরও কয়েকটি সংখ্যা প্রকাশিত হয়। এর বেশ কয়েকবছর পর ‘ধূমকেতু’ বের হয় নব পর্যায়ে। সম্পাদক ছিলেন কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ ভৌমিক। তবে ‘ধূমকেতু’ ও নজরুলের ‘ধূমকেতু’র মধ্যে আকাশ-পাতাল প্রভেদ। নানা দিক থেকে বিচেনা করলে দেখা যাবে, ‘ধূমকেতু’ ছিল সে সময়কার রাষ্ট্রশক্তির বিরোধী একটি পত্রিকা, যার লক্ষ্য ও অভীষ্ট ছিল-(১) ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে জনগণকে সংগঠিত করার প্রেরণা যোগানো, যা এক কথায় বললে দাঁড়ায় সাম্যাজ্যবাদ বিরোধিতা। (২) জনগণের মধ্যে বিশেষ করে হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতি সাধন-যান অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য যাবতীয় বিভেদ নির্মূল করা।
নজরুলের সম্পাদনায় ‘ধূমকেতু’র মাত্র ২১টি সংখ্যা বের হয়েছিল। বিস্মিত হতে হয় এই ভেবে যে, স্বল্পায়ু এই পত্রিকাটি নিছক পত্রিকা ছিল না, ছিল একটি স্ফুলিঙ্গ, উড়তে গিয়ে ফুরিয়ে যায় নি। সেদিন রাজরোষকে উপেক্ষা করে খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনের অভিমুখে দাঁড়িয়ে নজরুল ‘ধূমকেতু’র মাধ্যমে বাংলার যুবমানসে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন বিদ্রোহের আগুন। তাই ‘ধূমকেতু’ অর্ধ সাপ্তাহিক পত্রিকা হয়েও হয়ে উঠেছিল সন্ত্রাসবাদীদের মুখপত্র, সশস্ত্র আন্দোলনে তাদের প্রেরণা জাগানো ঔষধি। এভাবেই ‘ধূমকেতু’ তার সামাজিক, রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছিল। আর এই খানেই ‘নজরুল ইসলামের যাবতীয় সুকৃতি’।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট