চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

হারিয়ে গেল ঈদ কার্ড

মোবাইল, ফেসবুকে পৌঁছে যাচ্ছে ঈদের শুভেচ্ছা

মরিয়ম জাহান মুন্নী

৩ জুন, ২০১৯ | ২:৩৩ পূর্বাহ্ণ

একটা সময় ছিল নানা রকম ফুল, পাখি, পুতুল, কবিতা, ছন্দ, গানের কলি আর ভালোবাসার বিভিন্ন প্রতীকযুক্ত ‘ঈদ মোবারক’ লেখা কার্ড দিয়েই শুরু হতো ঈদের শুভেচ্ছা জানানো। প্রিয়জনদের কাছ থেকে ঈদ কার্ড পাওয়ার প্রতীক্ষায় থাকতেন অনেকেই। প্রথম রমজান থেকেই শুরু হতো ঈদ কার্ড কেনা। দোকানে দোকানে ছিল কার্ড কেনার ধুম। দোকান ছাড়াও পাড়া মহল্লায় স্থানীয় যুবকরা টেবিল নিয়ে বসে ঈদ কার্ড বিক্রি করত। যুগের বিবর্তনে সেই ঐতিহ্য এখন প্রায় হারিয়েই গেছে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে এখন মানুষ মোবাইল, ফেসবুক, ইমো, হোয়াটস এপস, ই-মেইল, ভাইবার ও টুইটারে একটা মেসেজের মাধ্যমে পৌঁছে দিচ্ছে ঈদের শুভেচ্ছা। তাই হয়তো ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন দোকানে, অলিগলিতে ছোট টং বানিয়ে বসে কার্ড বিক্রি, ঠেলায় করে ঢেকে ঢেকে কার্ড বিক্রির সেই চিত্র এখন আর দেখা যায় না। ঈদ কার্ডের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের দেখা নেই বললেই চলে। গতকাল নগরীর আন্দরকিল্লার বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা যায় এমন দৃশ্য। বহু বছরের এ ঐতিহ্য এখন প্রায় বিলুপ্তির দিকে। দোকানিরা বলছেন সময়ের সাথে সাথে ঈদ কার্ডের প্রচলন অনেকটাই

কমে গেছে। এবছর ঈদ উপলক্ষে এখনো একটা কার্ডও বিক্রি হয়নি। ঈদ কার্ড এখন আর আগের মতো মর্যাদা পায় না বললেই চলে। কিন্তু আগে বন্ধু-বান্ধবী ও আত্মীয়-স্বজনদের ঈদের শুভেচ্ছা পৌঁছানোর মাধ্যম ছিল ঈদ কার্ড। বিভিন্ন ডিজাইনের কার্ডের উপরে নকশা আর ছন্দ লেখা সাথে বাংলা ও ইংরেজিতে লেখা হতো ঈদ মোবারক। আবার দেখা যেত ঈদ উপলক্ষে বন্ধুদের শুভেচ্ছা জানাতে নিজেরাই বাড়িতে হাতে তৈরি করতো ঈদ কার্ড। সে কর্মযজ্ঞে নেতৃত্ব দিত বাড়ির কিশোর ছেলে মেয়েরা। আর ছোটরা হত শ্রমিক। আর্ট পেপার কেটে, রং করে, এঁকে-হাতে লিখে বানানো হতো ঈদ কার্ডগুলো। একে অন্যের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া, আনন্দ করা, খাওয়া দাওয়া আর কত কি! যা এখন আর তা দেখা যায় না। একটা সময় ছিল যখন ঈদ কার্ড ছাড়া ঈদকে কল্পনা করা যেতনা। যার কারণে ঈদ আসলে ঈদ কার্ড বিক্রির দোকানগুলোতে বেচাকেনার ধুম লেগে থাকতো। ক্রেতাদের রুচিমত নানা রঙ্গের ঈদ কার্ড রাখতেন দোকানিরাও। কিন্তু এখন সেই ঐতিহ্য আর দেখা যায়না।
আন্দরকিল্লা জি এ ভবনের আনোয়ার প্রিন্টিং প্রেসের ম্যানেজার আবদুছ সালাম বলেন, আগে রোজার প্রথম দিন থেকেই কার্ড বিক্রি শুরু করতাম। মানুষ কত ডিজাইনের কার্ড কিনতো। সবাই কম বেশি কার্ড কিনতো। কিন্তু তরুণ-তরুণীরা একটু বেশি কিনে থাকতো। গত কয়েক বছর ধরে এই প্রচলন উঠেই গেছে। এই বছর একটা কার্ডও বিক্রি হয়নি। তবে এসব দোকানগুলোতে ঈদ কার্ড বিক্রি না হলেও বিয়ের কার্ডের জন্য নগরীর এ স্থানটি সারা বছরই ব্যস্ত থাকে। এখানেই তৈরি হয় নানা ডিজাইনের বিয়ের কার্ড। এ এলাকায় প্রায় এক হাজারেরও বেশি কার্ড প্রিন্টিংয়ের দোকান আছে। যেগুলোতে ঈদ কার্ডের পাশাপাশি বিয়ের কার্ড তৈরি হয়। জিইসির আর্কিজ গ্যালারি, হল মার্ক, আন্দরকিল্লার ইউনিক প্রিন্টিং, বন্দর প্রোডাক্টস, আইডিয়াল প্রোডাক্টস ও আজাদ প্রোডাক্টস সহ আরো আছে বিভিন্ন ঈদ কার্ড। এই দোকানগুলোতে এখনো ঈদ উপলক্ষে নানা ডিজাইনের ঈদ কার্ড সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এসব কার্ড এক পিস ৫ টাকা থেকে পাঁচশ টাকা পর্যন্ত আছে। তবে এখনো কিছু সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও কর্পোরেট হাউস ঈদ কার্ডের মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানানো অব্যাহত রেখেছে।

শেয়ার করুন