চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

গ ল্প গ্রীষ্মের ছুটিতে দাদু বাড়ি

রুহুল আমিন রাকিব

১৪ মে, ২০১৯ | ১:৪৪ পূর্বাহ্ণ

তাফান্নাম ও তানফি আজ অনেক খুশি! ওরা দু’জন আপন ভাই বোন। খুশির কারণ হলো, অনেক বছর পরে আজ ওরা ওদের গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যাবে। গ্রামে দাদা দাদি আর চাচা চারিরা সবাই থাকে। ওদের বাবা মা গাজীপুরের সফিপুর শহরে থাকে। শত ব্যস্ততা আর অফিসের কাজের চাপের কারণে তাফান্নামের বাবা রাকিব সাহেব ওদের গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যেতে পারে না। এবার অনেক দিন গ্রীষ্মের বন্ধ তাফান্নাম ও তানফির ইশকুল।
ওরা বায়না ধরছে এবার গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যাবে। অফিস থেকে তিন দিনের ছুটি নিয়েছে রাকিব সাহেব। পরিবারের সবাই গ্রামের বাড়িতে যাবে। ওদের রেখে আবার অফিসের কাজে শহরে চলে আসবে রাকিব সাহেব। তাফান্নামের মা তানিয়া আমিন দু’দিন আগে থেকে সব রকম জিনিস ব্যাগে গুছিয়ে রাখছে। তাফান্নাম ও তানফি, মায়ের ডাক শুনে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিল। সবাই মিলে সকালের নাস্তা সেরে নিল।
এবার গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার পালা। তাফান্নাম ও তানফির খুশি দেখে কে! রিক্সায় করে ওরা সবাই চন্দরা বাসটার্মিনালে চলে এলো। রাকিব সাহেবের বাড়ি উত্তর বঙ্গর কুড়িগ্রামে।
একটার পর একটা বাস চলছে, আর তাফান্নাম ও তানফির অপেক্ষার পালা বাড়ছে। ওদের বাস আসার কোন নাম নেই। দেখতে দেখতে হানিফ পরিবহনের বাস এসে দাঁড়াল, সবাই উঠল। তাফান্নাম ও তানফি জানালার পাশের সিটে বসল।
তানফি আনমনে কত কিছু ভাবছে!দাদু বাড়িতে ওর সমবয়সি দু’টা চাচাতো বোন আছে। বাড়ির আঙিনায় ক’টা আম গাছ আছে, না জানি কত গুলো আম ধরছে গাছ গুলোয়। তানফির খুব মনে পড়ছে কয়েক বছর আগে যখন ওরা শেষবার দাদু বাড়িতে গিয়েছিল। কত মজা করছে ওরা সবাই মিলে। হঠাৎ আকাশ কালো মেঘে ঢেকে যেতো। শুরু হতো তুমুল ঝড়, ঝড়ে আম গাছের কাঁচা পাকা আম পড়তো। সবার আমগুলো একত্রিতো করে তাফান্নামের দাদি কড়াইতে দিয়ে সিদ্ধ করতো। তাফান্নামের দাদু বাজার থেকে, চিনি নয়তো গুড় কিনে নিয়ে আসতো। জানালার পাশে বসে এসব দৃশ্য দেখতে বেশ ভালো লাগছে ওদের কাছে। কখন যে ঘুমের কোলে ঢলে পড়ছে ওরা দু’ভাই বোন! হঠাৎ মায়ের ডাকে তাদের ঘুম ভাঙে। জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। তাফান্নামের বুঝতে বাকি থাকে না ওরা কুড়িগ্রাম শহরে চলে এসেছে।
সবাই নেমে এলো বাস থেকে। এবার গ্রামে ফেরার পালা। সারি সারি সবুজ গাছের ফাঁক গলে এগিয়ে চলছে রাকিব সাহেবের গ্রামের বাড়ির পিচ-ঢালা রাস্তা। রিক্সায় করে সেই রাস্তা ধরেই ওরা সবাই চলছে তাফান্নামের দাদু বাড়িতে। দেখতে দেখতে রিক্সা এসে দাঁড়াল পুকুরপাড়ে। দাদা দাদিকে সালাম জানিয়ে, রিক্সা থেকে লাফ দিয়ে নামল তাফান্নাম ও তানফি। সেদিন রাত্রিজুড়ে চাচাতো ভাই বোন দের সাথে নানা রকম গল্প করল দু’ভাই বোন।
পরের দিন থেকে শুরু হলো ওদের নানা রকম দুষ্টমি! আম গাছের আম পেড়ে খাওয়া। পুকুর জলে ডুব সাঁতার খেলা। ওদের সবাইকে রেখে রাকিব সাহেব শহরে চলে এলো। আনন্দে দিনগুলো চলছে তাফান্নাম ও তানফির। রাতে দাদুর কাছে ভূতের গল্প শোনা। চাচা চাচির কাছে নানা রকম আবদার করা। চাচাতো ভাই বোনদের সাথে গ্রাম ঘুরে দেখা। দেখতে দেখতে গ্রীষ্মের ছুটি শেষ হয়ে এলো। রাকিব সাহেব তানিয়া আমিনকে ফোন করে বলল।
আগামী রবিবারের দিন ওদেরকে নিয়ে আবার গাজীপুরের সফিপুর শহরে চলে আসবে। রবিবারে আবার শহরে ফিরতে হবে ভাবতে গিয়ে মনটা ভীষণ খারাপ হলো ওদের দু’ভাই বোনের। একদিন আগেই শহর থেকে রাকিব সাহেব ওদেরকে নিতে চলে এসেছে।
রবিবার সকাল বেলা অটো রিক্সা এসে দাঁড়াল তাফান্নামের দাদু বাড়ির সামনে। অশ্রু সজল চোখে সবাই উঠল রিক্সায়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট