চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সামাজিক যোগাযোগের হস্তক্ষেপ করে যেসব দেশ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

৪ জুলাই, ২০১৯ | ৪:০২ অপরাহ্ণ

সোশ্যাল মিডিয়া মানুষকে মত প্রকাশের সুযোগ করে দিয়েছে। অনেক দেশেই কর্তৃত্ববাদী সরকার সেটা পছন্দ করছে না।তবুও বর্তমানে প্রিন্ট ও ব্রডকাস্ট মিডিয়ার গণজাগরণের কালে সোশ্যাল মিডিয়ার গণমুখিতা এবং গ্রহণযোগ্যতা যেভাবে বাড়ছে, তাকে স্বাগত জানানো ছাড়া উপায় নেই। যেখানে অবলীলায় সুখ-দুঃখ, অর্জন বা গৌরবের কথা একে অপরের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে পারছেন। পত্রিকা বা টেলিভিশন দেখার জন্য খবরের কাগজের পাতা কিংবা টিভি স্ক্রিনে চোখ না রাখলেও চলে। নিমেষে মাত্র একটিমাত্র ক্লিকেই সব ব্রেকিং নিউজ, স্বাস্থ্য সচেতনতার খবর, সাজসজ্জা বা ঘরকন্নার খবর হাতের মুঠোয় চলে আসে ।

তবু রাজনৈতিক মিথ্যা প্রপাগান্ডার বিস্তার, ষড়যন্ত্রকারীদের বিভ্রান্তিমূলক অপপ্রচারকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার জন্য নানান ব্যবস্থা নিয়েছে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং প্লাটফর্মগুলো ।
ফেসবুক বা ইউটিউবের মতো সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং প্ল্যাটফর্মগুলো এত দিন ধরে দাবি করেছে, তাদের প্রতিষ্ঠানে এক ধরনের ব্যবস্থা চালু আছে, যেখানে তারা নিজেরাই আপত্তিকর বিষয়বস্তু সরিয়ে নেন। ইউটিউব দাবি করে, তাদের সাইটে যখন কোনো আপত্তিকর কনটেন্ট দেওয়া হয়, তারা সেটি জানার পর দ্রুত ব্যবস্থা নেয়। শুধু আপত্তিকর ভিডিও সরিয়ে নেওয়ার জন্য সারা বিশ্বে ইউটিউব ১০ হাজার লোক নিয়োগ করেছে। তাদের কাজ মনিটরিং করা এবং আপত্তিকর ভিডিও সরিয়ে নেওয়া।
ফেসবুক, যারা ইনস্টাগ্রামেরও মালিক, তাদের প্রতিষ্ঠানে এরকম কাজের জন্য আছে ৩০ হাজার লোক।

প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য কেউ যখন কারও নগ্ন ছবি বা ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয় বা কোনো জঙ্গি মতাদর্শের কিছু শেয়ার করে, তখন এর জন্য সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলোকে এত দিন দায়ী করা যেত না। এ জন্য আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যেত কেবল সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীর বিরুদ্ধে। কিন্তু এখন অনেক দেশেই আইন বদলানোর চিন্তা-ভাবনা চলছে, অনেকে আইন করেও ফেলেছে।

জার্মানি
জার্মানিতে ২০১৮ সালের শুরু থেকে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যাপারে এক নতুন আইন কার্যকর করে। দেশটিতে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের ২০ লাখেরও বেশি ব্যবহারকারী আছে। নতুন আইনে বলা হয়, সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনো কনটেন্ট সম্পর্কে কোনো অভিযোগ আসার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা তদন্ত এবং পর্যালোচনা করতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলো এর ফলে বাধ্য হয়েছে সেই ব্যবস্থা করতে। কেউ যদি সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন কোনো কনটেন্ট শেয়ার করে যা এ আইনের বিরোধী, সে জন্য তাকে ৫০ লাখ ইউরো পর্যন্ত জরিমানা করা যাবে। অন্যদিকে সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিকে জরিমানা করা যাবে পাঁচ কোটি ইউরো পর্যন্ত। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সোশ্যাল মিডিয়ায় আপত্তিকর কনটেন্টের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বিবেচনা করছে। বিশেষ করে জঙ্গিবাদে উৎসাহ জোগায় যেসব ভিডিও, তার বিরুদ্ধে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে জেনারেল ডাটা প্রোটেকশন রেগুলেশন (জিডিপিআর) নামে এক নতুন আইন কার্যকর হয়েছে গত বছর। বিভিন্ন কোম্পানি এবং প্রতিষ্ঠান কীভাবে মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণ করবে, সে বিষয়েই মূলত এ আইন।
তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন আরেকটি আইনের প্রস্তাব করেছে, যেটি নিয়ে ইন্টারনেট কোম্পানিগুলো দুশ্চিন্তায়। কেউ যদি কোনো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে কপিরাইট লঙ্ঘন করে কিছু পোস্ট করে, সে জন্য ওই ব্যক্তি তো বটেই, সেই সঙ্গে অনলাইন প্ল্যাটফর্মকেও দায়ী করা যাবে।

অস্ট্রেলিয়া
গত ৫ এপ্রিল অস্ট্রেলিয়ায় ১ কঠোর আইন চালু করা হয় যাতে সহিংস এবং জঘন্য কোনো কিছু অনলাইনে শেয়ার করা নিষিদ্ধ করা হয়। আইন লঙ্ঘন করলে সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ এনে জেল-জরিমানার বিধানও রাখা হয়। জরিমানার অঙ্কটি বেশ বড়। কোনো সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানির গ্লোবাল টার্নওভারের ১০ শতাংশ পর্যন্ত জরিমানা করা যাবে। নিউজিল্যান্ডে দুটি মসজিদে সন্ত্রাসবাদী হামলা চালিয়ে ৫০ জনকে হত্যার ঘটনা হামলাকারী যেভাবে ফেসবুকে লাইভ স্ট্রিমিং করেছিল, তারপর অস্ট্রেলিয়া এ আইন চালু করে।
এর আগে ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ায় অনলাইন সেফটি আইন নামে আরেকটি আইনে একজন ‘ই-সেফটি কমিশনারের’ পদ তৈরি করা হয়। ই-সেফটি কমিশনার সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলোকে বাধ্য করতে পারে আপত্তিকর কনটেন্ট সরিয়ে নিতে। এ জন্য তিনি সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিকে ৪৮ ঘণ্টার নোটিশ দিতে পারেন। জরিমানা করতে পারেন পাঁচ লাখ ২৫ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার পর্যন্ত। অন্যদিকে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীর ক্ষেত্রে এ জরিমানা হতে পারে ১ লাখ পাঁচ হাজার ডলার পর্যন্ত। অস্ট্রেলিয়ায় এ কঠোর আইন করা হয় শার্লট ডসন নামে এক টেলিভিশন উপস্থাপক অনলাইনে হয়রানির শিকার হয়ে আত্মহত্যা করার পর।

রাশিয়া
রাশিয়ায় ২০১৫ সালের ডাটা আইন অনুযায়ী সব সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিকেই রুশ নাগরিকদের সম্পর্কে সব তথ্য রাশিয়াতেই কোনো সার্ভারে সংরক্ষণ করতে হয়। তবে ফেসবুক এবং টুইটার কীভাবে এ আইন মেনে চলবে সে সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট ধারণা দিতে না পারায় রুশ কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। রাশিয়ার পাশাপাশি জার্মানির মতো একটা আইন করার কথা বিবেচনা করছে যেখানে আপত্তিকর কনটেন্ট সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা নিতে হবে। যারা এটা করবে না তাদের বিরুদ্ধে জরিমানার ব্যবস্থা থাকবে।

চীন
টুইটার, গুগল বা হোয়াটসঅ্যাপ চীনে নিষিদ্ধ। তবে সেখানে একই ধরনের কিছু চীনা অনলাইন প্ল্যাটফর্ম আছে। যেমন ওয়েইবো, বাইডু এবং উইচ্যাট। চীনে কিছু ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক আছে। কিন্তু চীনা কর্তৃপক্ষ সেগুলোর ব্যবহারও সীমিত করে দিতে সক্ষম হয়েছে। চীনে চলতি বছরের জানোয়ারি থেকে আগের ছয় মাসে তারা ৭৩৩টি ওয়েবসাইট এবং ৯ হাজারের বেশি মোবাইল অ্যাপ বন্ধ করে দেয়। তবে এগুলোর বেশিরভাগই আসলে জুয়া খেলার বেআইনি সাইট বা অ্যাপ। চীনে হাজার হাজার সাইবার পুলিশ আছে। এরা ২৪ ঘণ্টাই নজরদারি চালায় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের ওপর। বিশেষ করে রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর কোনো তৎপরতা সেখানে চলছে কিনা, তার ওপর।

 

ব্রিটেন
সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের জন্য সম্প্রতি ব্রিটিশ সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তাব করেছে। এর উদ্দেশ্য, ক্ষতিকর কোনো ‘কনটেন্ট’ কোনো সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ পেলে তার জন্য কোম্পানির কর্মকর্তাদেরও যেন দায়ী করা যায়। ব্রিটিশ সরকারের প্রস্তাবিত ব্যবস্থায় নিয়ম ভঙ্গকারী সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে বিপুল অঙ্কের জরিমানা থেকে শুরু করে তাদের সেবা পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার কথাও রয়েছে।
ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার থেকে শুরু করে নানা ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া যারা ব্যবহার করেন, তাদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য ব্রিটিশ সরকার একটি স্বাধীন নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠনের কথা ভাবছে।

 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট