চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ভূমধ্যসাগরে অবৈধ অভিবাসীদের কাছে জেলেরা যেন ফেরেশতা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

১৭ জুন, ২০১৯ | ৩:৪৮ অপরাহ্ণ

তিউনিশিয়ার জেলেরা ভূমধ্যসাগরে আটকে পড়া অথবা নৌকা ডুবির শিকার অবৈধ অভিবাসীদের কাছে যেনো ফেরেশতার মতো । তারা মাঝে মধ্যেই ত্রাণকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে উদ্ধার করেন এমন অভিবাসীদের। এর মধ্যে রয়েছেন বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশিও। এক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের তেমন সাড়া মেলে না। কিন্তু মানবিক কারণে চোখ-মুখ বন্ধ করে থাকতে পারেন না জেলেরা। তারা ভূমধ্যসাগরে জুয়ারা এবং ইতালির ল্যাম্পেডুসা দ্বীপের মধ্যবর্তী স্থানে মাছ ধরেন। মাছ ধরার এই স্থানকে ক্রসিং পয়েন্ট হিসেবে ধরা হয়। এখানে লিবিয়া সীমান্তের কাছাকাছি তিউনিশিয়ার জারজিস এলাকার জেলে বদরউদ্দিন মেচেরেক মাছ ধরেন।

তিনি জানান, এমন বিপদে পড়া অভিবাসীদের উদ্ধার করতে গিয়ে তাদের মাছধরা ব্যাহত হয়। ওদিকে এখন গ্রীষ্মকাল হওয়ায় টুনা মাছ ধরার উত্তম সময়। তবু যখন অভিবাসীবোঝাই বোট দেখেন তখন তারা সহায়তার জন্য এগিয়ে যান। উত্তাল সমুদ্রের মাঝে আটকে পড়া অভিবাসীদের উদ্ধার করেন। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।

লিবিয়া ও ইতালির জলসীমার মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে মানবিক সেবা ও ইউরোপিয়ান নৌবাহিনীর টহল। ফলে উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিশিয়ার এসব জেলেকে অধিক থেকে অধিক সময় আটকে পড়া অভিবাসীদের উদ্ধারে কাটাতে হয়। বুরাসিন, তার নাবিকরা ও অন্য তিনটি মাছধরা বোট গত ১১ মে উদ্ধার করে ৬৯ জন অভিবাসীকে নিয়ে গিয়েছেন তীরে। লিবিয়ার পশ্চিম উপকূলের জুয়ারা এলাকা থেকে এসব অভিবাসীকে নিয়ে ৫ দিন আগে ছেড়ে গিয়েছিল বোট। গত কয়েক বছরে সমুদ্র থেকে এভাবে কয়েক হাজার অভিবাসীর জীবন রক্ষা করেছেন জারজিসের জেলেরা। এখন গ্রীষ্মকাল। সাগর অনেকটা শান্ত। এ সময়ে অধিক হারে অভিবাসী বোঝাই বোট লিবিয়া উপকূল ছেড়ে যাত্রা শুরু করতে পারে ইউরোপের দিকে। ফলে এমন উদ্ধার করা অভিবাসীর সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বদরউদ্দিন জানান, এমন বোট দেখে আমরা প্রথমেই কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওই সব অভিবাসীকে আমাদেরই উদ্ধার করতে হয়। ভূমধ্যসাগরের উত্তরাঞ্চলে ইউরোপিয়ান দেশগুলো চেষ্টা করছে তাদের উপকূলে যেন অভিবাসী অবতরণের হার কমিয়ে আনা যায়। অন্যদিকে তিউনিশিয়ায় সম্পদের ঘাটতি রয়েছে। ফলে তারা শুধু তাদের জলসীমায় অভিবাসী বোঝাই বোট গেলে তা উদ্ধার করে সেই সীমিত সম্পদ ব্যবহার করে। আন্তর্জাতিক জলসীমা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৭৫ জন অভিবাসীকে। ৩১ মে থেকে তাদেরকে তীরে আসতে বাধা দিচ্ছে তিউনিশিয়া। এসব অভিবাসীর মধ্যে রয়েছেন ৬৪ জন বাংলাদেশি। এ বিষয়ে দেশটির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বহুবার যোগাযোগ করা হলে, তারা কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

তিনি আরো জানান, এই ইস্যু থেকে সবাই নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখছে। এতে তার নিজের কাজের ব্যাঘাত ঘটে। তিনি আরো বলেন, প্রথম রাতেই যদি আমরা এমন অভিবাসীদের খুঁজে পাই তাহলে আমাদেরকে তাদের নিয়ে ফিরে যেতে হয়। এসব মানুষকে বোটে নিয়ে আমাদের কাজ করা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। যখন আমরা অভিবাসীদের ইতালি উপকূলের খুব কাছাকাছি ভাসতে দেখি তখন তাদেরকে উদ্ধারে দেখা দেয় জটিলতা। গত বছর ল্যাম্পেডুসার দিকে একটি বোটকে এগিয়ে যেতে দেখেন বদরউদ্দিন ও তার নাবিকরা। ওই বোটটিতে কোনো মোটর কাজ করছিল না। ফলে তা শুধু ভাসছিল। ওই বোটের অভিবাসীদের সহায়তা করার অভিযোগে বদরউদ্দিনদেরকে চার সপ্তাহ জেলে থাকতে হয়েছিল সিসিলিতে। এরপর তাদের নিজেদের বোটটি উদ্ধার করতে সময় লেগেছিল কয়েক মাস। মানবতা বিষয়ক সেবাদানকারী বোট এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন পাইরেসি বিরোধী অভিযান কয়েক বছরে জোরালো করে। কিন্তু ২০১৯ সালে এসে উদ্ধার অভিযানে পতন ঘটেছে।

ওই অভিযানে যাদেরকে রক্ষা করা হয়েছিল তার মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশের আহমেদ সিজুর (৩০)। তিনি জানান, ভোরের দিকে যখন তাদের কাছে একটি বোট দৃশ্যমান হয়েছিল, তাদের মনে হয়েছিল আল্লাহর তরফ থেকে ফেরেশতা পাঠানো হয়েছে।

সিজুর জানান, নিজের ওপর থেকে সব আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদেরকে রক্ষা করতে জেলেদের পাঠিয়েছিলেন আল্লাহ। এসব উদ্ধারকাজ করতে গিয়ে জেলে বদরউদ্দিন গর্বিত হওয়ার চেয়ে উদ্বিগ্ন বেশি।

তিনি জানান, আমরা আর কোনো লাশ দেখতে চাই না সমুদ্রে। আমরা সমুদ্রে মানুষ নয়, মাছ ধরতে চাই। এত লাশ আর মানুষ উদ্ধার করতে করতে তার সহকর্মীরা ক্রমশ অসহিষ্ণু হয়ে উঠছেন।

বদরউদ্দিনের ভাষায়, আমার বোটে ২০ জন জেলে থাকেন। আমাদেরকে কে খাবার দেবে? তা সত্ত্বেও স্থানীয় জেলেরা কখনো সমুদ্রে মানুষকে মরতে দেন না।

তিউনিশিয়া রেডক্রিসেন্টের কর্মকর্তা মঙ্গি স্লিম জানান, সমুদ্রে প্র্যাকটিক্যালি জেলেরা হলেন পুলিশ। বহু অভিবাসী বলেছেন, বিশাল জাহাজ চলাচল করে। কিন্তু তারা সাহায্য করার জন্য থামে না।

পূর্বকোণ/ময়মী

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট