চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

প্রতিদিন ফ্লস না করার পরিণতি

যদি আপনি সুস্থ ও মজবুত দাঁত চান, তাহলে আপনাকে নিয়মিত মুখের যত্ন নিতে হবে। মুখের অন্যতম স্বাস্থ্যবিধি হলো ফ্লস করা।

মরিয়ম বেগম

১৮ জুলাই, ২০১৯ | ১:১০ পূর্বাহ্ণ

কিন্তু প্রতিদিন ফ্লস না করার পরিণতি কি? এটি কি প্রতিসপ্তাহে বিছানার চাদর না ধোয়া অথবা বাথরুম ব্যবহারের পর হাত না ধোয়ার মতই খারাপ? এখানে এ সম্পর্কে দাঁত বিশেষজ্ঞদের মতামত দেয়া হলো।
আপনার দাঁতের যতেœ শুধু ব্রাশ করলেই হবে না, আরো বেশি কিছু করতে হবে। দাঁত আমাদেরকে খাবার ভাঙতে ও খেতে সাহায্য করে। ডেন্টাল সার্জন, আস্ক দ্য ডেন্টিস্ট ডটকমের প্রতিষ্ঠাতা ও দ্য ৮-আওয়ার স্লিপ প্যারাডক্সের লেখক মার্ক বুরহেন বলেন, ‘প্রতিদিন খাবার খাওয়ার কারণে দাঁতের ফাঁকে খাদ্যকণা বা প্লেক জমে, তাই আমাদের প্রতিদিন দাঁত ফ্লস করা প্রয়োজন।
প্রতিদিন ফ্লস না করলে প্রক্রিয়াজাত খাবার ও শ্বেতসারযুক্ত কার্বোহাইড্রেট দাঁতে ক্যাভিটি ও মাড়ি রোগ সৃষ্টি করে, কারণ কেবলমাত্র দাঁত ব্রাশ করলেই দাঁতের ফাঁকের সকল খাদ্যকণা দূর হয় না। দাঁতের ফাঁকের এসব খাবার দূর না হলে মুখের প্রাকৃতিক অণুজীবের ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং দাঁত ও মাড়ির ক্ষতিসাধন হয়।’ ডেন্টাল সার্জন ও সেলিব্রিটি কসমেটিক ডেন্টিস্ট বিল ডর্ফম্যান বলেন, ‘দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা খাবার ও মুখের লালার সমন্বয়ে ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টি হয় যা প্লেক ও দাঁতের চারপাশে বসবাস করে। ক্যাভিটি, জিনজিভাইটিস, হাড় বা দাঁত ক্ষয় ও অন্যান্য দাঁতের সমস্যার জন্য একটি কমন কারণ হলো প্লেকের এসব ব্যাকটেরিয়া।’ প্লেক দূরীকরণের ক্ষেত্রে টুথব্রাশের তুলনায় ফ্লস অনেক ভালো, কারণ এ সুতা দাঁতের সেসব স্থানে পৌঁছতে পারে যেখানে টুথব্রাশ পৌঁছে না।
ফ্লস না করলে সবচেয়ে খারাপ পরিণতি কি হতে পারে? ডা. ডর্ফম্যান বলেন, ‘ফ্লস এড়িয়ে যাওয়া কতটা খারাপ হবে তা নির্ভর করছে আপনি কিভাবে মুখ পরিষ্কার করছেন তার ওপর। কিন্তু আপনি যেভাবেই মুখ পরিষ্কার করেন না কেন, দাঁত ও মাড়ির সমস্যার ঝুঁকি এড়াতে নিয়মিত ফ্লস করার কথা বিবেচনা করতে পারেন।’
ডা. বুরহেন বলেন, ‘যেসব লোক প্রতিদিন দাঁত ফ্লস করেন না তাদের ক্রনিক জিনজিভাইটিস ও অধিক ক্যাভিটি হওয়ার ঝুঁকি তাদের তুলনায় বেশি যারা প্রতিদিন ফ্লস করেন।’ ডা. ডর্ফম্যান বলেন, ‘এসব ক্যাভিটির চিকিৎসা না করলে মাল্টিপল রুট ক্যানেল অথবা দাঁত ফেলে দেয়ার প্রয়োজন হতে পারে।’ এছাড়া আপনার শ্বাস থেকে দুর্গন্ধ ছড়াতে পারে ও মুখের প্রাকৃতিক অণুজীবের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে।
এসব পরিণতি জানার পরও যদি আপনি দাঁত ফ্লস করতে অণুপ্রাণিত না হন, তাহলে এ স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলার আরো মারাত্মক পরিণতি সম্পর্কে জেনে রাখতে পারেন। ডা. বুরহেন বলেন, ‘এ প্রক্রিয়ায় কয়েক দশক পর আপনার দাঁত পড়ে যেতে পারে অথবা মারাত্মক মাড়ির রোগ হতে পারে অথবা মাড়ির যন্ত্রণাদায়ক ক্ষয় হতে পারে অথবা মাড়ির অবস্থানের পরিবর্তন হতে পারে অথবা মাড়িতে ক্রনিক প্রদাহ হতে পারে অথবা অ্যালঝেইমারস বা ডায়াবেটিস হতে পারে।’
আপনার দাঁত পরিষ্কারের জন্য ফ্লসের বিকল্প আছে? ডা. ডর্ফম্যানের মতে, এ প্রশ্নের উত্তর হলো ‘না’। তিনি বলেন, ‘যদি আপনি ফ্লস করতে না পারেন, তাহলে আপনার জন্য দ্বিতীয় সর্বোত্তম হলো ওয়াটারপিক, কিন্তু এটি তেমন একটা ভালো নয়।’ অন্যদিকে ডা. বুরহেন বলেন, ‘কিছু গবেষণায় পাওয়া গেছে, ওয়াটারপিক দিয়ে ওয়াটার ফ্লসিং রেগুলার ফ্লসিংয়ের মতোই কার্যকর হতে পারে, কিন্তু আমার পরামর্শ হলো রেগুলার ফ্লসিংয়ে অভ্যস্ত হওয়া এবং ওয়াটার ফ্লসারকে সাপ্লিমন্ট হিসেবে ব্যবহার করা, বিকল্প হিসেবে নয়।’ ডা. ডর্ফম্যান দিনে দু/তিন বার ওয়াক্সড ফ্লস দিয়ে ফ্লস করতে পরামর্শ দিচ্ছেন।
নিশ্চিত হোন যে যেখানে যেখানে ফ্লস করা প্রয়োজন সেখানে সেখানে ফ্লস করছেন- যদি মাড়ি রেখায় ব্যথা অনুভব করেন, তাহলে এর মানে হতে পারে যে আপনি পর্যাপ্ত ফ্লস করেন না।
দাঁত ব্রাশ বা ফ্লসের সময় রক্তক্ষরণ হলে তা জিনজিভাইটিস অথবা পুষ্টি ঘাটতি অথবা অন্য কোনো সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। এছাড়া ধূমপানের মতো বাজে অভ্যাসও মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণের কারণ হতে পারে। আপনার দাঁতকে সুরক্ষা দিতে ফ্লস করুন প্রতিদিন।
[সূত্র : ম্যানস হেলথ]

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট