চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

পতেঙ্গায় সবজিবিপ্লব

চাষীদের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে

১৮ জুলাই, ২০১৯ | ১২:৪৯ পূর্বাহ্ণ

কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে সবজিচাষে দারিদ্র্যজয়ের বিপুল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। দেশের বিভিন্ন জনপদে এখন নানাজাতের সবজিচাষের দিকে ঝুঁকে পড়ছে সাধারণ মানুষ। দৃষ্টান্তমূলক সাফল্যও দেখাচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেকেই প্রমাণ করেছেন যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণে সবজিচাষ করলে সহজেই বেকারত্ব ও দারিদ্র্যদূরীকরণ সম্ভব। দিনকয়েক আগে পতেঙ্গায় সবজিচাষে সাফল্য নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দৈনিক পূর্বকোণ। প্রতিবেদনে সবজিচাষের প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ, সাফল্য এবং দারিদ্র্যজয় প্রভৃতি বিষয় উঠে এসেছে। এটি নিশ্চয়ই আনন্দের খবর। সহজশর্তে ক্ষুদ্রঋণসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়ে সারাদেশেই এই আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে পারলে বেকারত্ব ও দারিদ্র্যদূরীকরণে সবজিচাষ উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে সন্দেহ নেই।
দৈনিক পূর্বকোণে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলছে, বঙ্গোপসাগরের কূলঘেঁষে চলে যাওয়া আউটার রিং রোডের পাশে বিশাল বিশাল বিলজুড়ে নানা রকমের সবজিক্ষেত শোভা পাচ্ছে এখন। উপকূলীয় এই চরাঞ্চলে এক সময়ে প্রচুর তরমুজ ও ধানচাষ করা হতো। তবে তরমুজচাষে ক্রমাগত লোকসানের কারণে ধানচাষে ঝুঁকে পড়েন এলাকাবাসী। কিন্তু ধান চাষে খরচ বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই সবজিচাষে মনোযোগ দেন। সফলতা আসলে অন্যরাও সবজিচাষে আগ্রহী হয়ে উঠেন। চাষযোগ্য জমি পতিত না রেখে ছোট পরিসরে সবজিচাষ শুরু করেন অনেকেই। এভাবে সবজিবিপ্লব ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য এলাকায়। ৬-৮ বছর ধরে মূলা, বেগুন, টমেটো, শিম, বেগুন, মিষ্টিকুমড়া, শালগম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, কাঁচা মরিচ, ধনেপাতাসহ সব ধরনের সবজির ব্যাপক আকারে সবজি চাষ হচ্ছে সেখানে। উৎপাদিত সবজি নগরীর মানুষের চাহিদার বড় অংশ পূরণ করছে। এখন সারাদেশের জন্যেই তা অনুকরণীয় দৃষ্টান্তে পরিণত হয়েছে।
সরকারের কৃষিবিভাগ সাফল্যের এই উদাহরণকে সামনে রেখে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বেকার যুবকসহ সব শ্রেণির মানুষকে সবজিচাষে উদ্বুদ্ধ করতে পারলে দারিদ্র্যবিমোচন আন্দোলন প্রসারিত হওয়ার পাশাপাশি পুষ্টিচাহিদা পূরণ এবং জাতীয় অর্থনীতিকে আরো বলিষ্ঠ করার সুযোগ তৈরি হবে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে সবজিচাষ করে লাখো মানুষ ভাগ্যপরিবর্তনের নজির সৃষ্টি করতে পারবেন। চট্টগ্রাম মহানগরীর হালিশহর এলাকাসহ নানাস্থানে সবজিচাষে বিপ্লব ঘটার খবর তো বহুবারই পত্রিকায় এসেছে। সামান্য জমিতেও সবজি আবাদ করে অনেকে স্বাবলম্বী হয়েছেন। দেশের প্রয়োজন মিটিয়ে এখন সবজি রফতানি হচ্ছে বিদেশেও। এরই মধ্যে কয়েক কোটি টাকার সবজি যুক্তরাজ্য, দুবাই, সৌদি আরব ও মালয়েশিয়ায় রফতানি হয়েছে। সবজিচাষের এই ধারা অব্যাহত রাখা গেলে আগামিতে সবজিরপ্তানির পরিমাণ বহুগুণ বেড়ে যাবে। তবে, এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ব্যাপক গবেষণাও দরকার।
বাংলাদেশের জনসংখ্যা এখন প্রায় ১৭ কোটিকে ছুঁতে চলেছে। এই বিশাল জনসংখ্যার গ্রাসাচ্ছদনের জন্যে পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য উৎপাদনের নিমিত্তে ধানের উপর গবেষণা হয়েছে। ধানের উৎপাদন পূর্বাপেক্ষা বেড়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত সবজির উৎপাদন বৃদ্ধির জন্যে বাংলাদেশে তেমন উল্লেখযোগ্য গবেষণা হয়নি। এমনকি সবজিচাষ বৃদ্ধির পরিকল্পিত বিশেষ উদ্যোগও নেয়া হয়নি এখনো। বস্তুত সে কারণে ধান বা চালের তুলনায় বাংলাদেশে সবজির ঘাটতি বেশি। উন্নত জাতের শাকসবজির বীজেরও দারুণ সংকট রয়েছে বাংলাদেশে। কৃষক উন্নয়ন সংস্থা ও কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ যে বীজ সরবাহ করে থাকে তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। বাকী বীজের একটি অংশ বেসরকারি খাতে আমদানি হয়। বাকীটা চাষীরা নিজেরাই উৎপাদন করে। এক কথায় বাংলাদেশে সবজি উৎপাদনে রয়েছে ব্যাপক সীমাবদ্ধতা। একেতো বীজ-সংকট, তার উপর ত্রুটিপূর্ণ বিপণনব্যবস্থার কারণে প্রকৃত উৎপাদনকারীদের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া, সবজি সংরক্ষণের জন্যে পর্যাপ্ত হিমাগার না থাকা এবং বর্গাজমিতে সবজিচাষসহ নানাবিধ সমস্যার জালে আটকে আছে কৃষকেরা। মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা মুনাফার বড় অংশ নিয়ে গেলেও চাষীরা ন্যায্য মুনাফা না পাওয়ার অভিযোগও আছে।
সবজি উৎপাদনে এতোগুলো সীমাবদ্ধতার মধ্যেও পতেঙ্গাসহ দেশের কোনো কোনো স্থানে স্ব-উদ্যোগে চাষীরা ক্রমবর্ধমান হারে জমিতে শাক-সবজির চাষ ও সাফল্য লাভের সংবাদ পরম আশাব্যঞ্জক বলতে হবে। সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবার উচিত, দেশের বিভিন্ন স্থানে সবজিচাষ করে প্রান্তিক চাষীরা যে সাফল্য পেয়েছে সে সব দৃষ্টান্ত অন্য সকল চাষীর সামনে উপস্থাপন এবং সবজিচাষে অনুপ্রাণিত করার পদক্ষেপ নেয়া। যদি সরকার কাজটি সুচারুরূপে সম্পন্ন করতে পারেন, তাহলে পর্যাপ্ত উৎপাদনের মাধ্যমে সবজির অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে প্রতিবছর বিদেশেও রপ্তানি করা যাবে। এতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জিত হবে। তবে এক্ষেত্রে বিপণন প্রক্রিয়া সহজতর করা এবং ঋণসহায়তা প্রদানসহ যাবতীয় সরকারি সহযোগিতাও প্রয়োজন। এ ব্যাপারে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সকলের দায়িত্বশীল ভূূমিকাই কাম্য।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট