চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

প্রসঙ্গ : ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে রেমিটেন্স প্রণোদনা

লায়ন এ কে জাহেদ চৌধুরী

১৭ জুলাই, ২০১৯ | ১২:৫৮ পূর্বাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, বর্ধিত জনগোষ্ঠি দেশের জন্য বোঝা নয়, বরং সম্পদ। কিন্তু এই সম্পদকে কাজে লাগাতে পরিকল্পিত উদ্যোগের প্রয়োজন। প্রয়োজন ছোট্ট এই ভূখ-ের মানুষগুলোর হাতকে কর্মীর হাতে রূপান্তর করা। বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের হাতকে কর্মীর হাতে রূপান্তর করে মানবসম্পদে পরিণত করতে হবে এবং মানবসম্পদে রূপান্তর করার অন্যতম উপায় হচ্ছে এই জনগোষ্ঠীকে যার যার মেধা ও যোগ্যতা অনুযায়ী প্রশিক্ষিত করে গড়ে তোলা।
প্রশিক্ষিত মানবসম্পদ রপ্তানী করে বাংলাদেশ প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে দেশের অর্থনীতিকে আরো সমৃদ্ধ ও গতিশীল করতে পারবে। বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি হচ্ছে বিদেশে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের পাঠানো রেমিটেন্স। প্রাচ্য, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে কর্মরত লক্ষ লক্ষ বাঙালী তাদের পাঠানো রেমিটেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রবাসীরা ১ হাজার ৬৪২ কোটি ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছে। বাংলাদেশে এখনও লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত ও অল্প শিক্ষিত যুবক বেকার অবস্থায় আছে। এই সকল শিক্ষিত ও অল্পশিক্ষিত যুবকদের উপজেলাভিত্তিক তালিকা প্রণয়ন করে তাদেরকে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ কর্মী হিসাবে গড়ে তুলে স্বল্প খরচে বিদেশে পাঠাতে পারলে একদিকে যেমন রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়বে অন্যদিকে দেশে বেকারত্বের হার হ্রাস পাবে তাছাড়াও অনেকে বেকারত্বের কারণে হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে মাদক গ্রহণ, বিপননসহ নানা অসামাজিক কাজে জড়িয়ে পড়ছে। তাদেরকে কর্মপরিবেশে আবদ্ধ করতে পারলে অসামাজিক কর্মকা- অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে সমাজচিন্তকগণ মনে করেন।
সরকার ২০১৯-২০ সালের বাজেটে রেমিটেন্স যোদ্ধাদের জন্য একটি ঐতিহাসিক ও যুগান্তকারী পদক্ষেপ ঘোষণা করেছে।
প্রবাসী বাঙালীদের পাঠানো রেমিটেন্সের উপর ০২ শতাংশ হারে সরকার প্রণোদনা দেওয়ার প্রস্তাব করেছে। এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে রেমিটেন্স প্রেরণকারী প্রবাসীগণ প্রতি ১ হাজার টাকায় ২০ টাকা অতিরিক্ত প্রণোদনা হিসাবে পাবেন। প্রবাসীগণ যে যত বেশি রেমিটেন্স পাঠাতে পারবেন তিনি তত বেশি প্রণোদনা লাভ করবেন। ২ শতাংশ প্রণোদনা বাস্তবায়নের জন্য সরকার বাজেটে ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছে।
সরকারের এই পদক্ষেপের ফলে অবৈধ পথে বা হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠানোর প্রবণতা হ্রাস পাবে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন। বৈধ পথে রেমিটেন্স পাঠালে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অনেক বেড়ে যাবে, তাতে কোন সন্দেহ নাই। তাছাড়াও আমাদের অর্থনীতিতে যে ৬-৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করা হয়েছে, তার মূলচালক হল প্রবাসী শ্রমিক ও তৈরী পোশাক শিল্প। বর্তমান বাজেটে প্রবৃদ্ধি অর্জনের যে লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে সেই লক্ষমাত্রা বাস্তবায়ন করতে হলে সুদক্ষ শ্রমিক রপ্তানীতে মনোযোগী হতে হবে।
সুতরাং বাংলাদেশের বিপুল পরিমাণ জনশক্তিকে যদি প্রশিক্ষিত করা যায়, তাহলে প্রবৃদ্ধিতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা অত্যন্ত সহজ হবে। ২০১৯-২০ সালের বাজেটে প্রণোদনার ঘোষণা প্রদান করায় ইতিমধ্যেই প্রবাসীদের মধ্যে উচ্ছসিত ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রবাসীদের অর্থ বৈধ পথে পাঠাতে উৎসাহিত করার জন্য আরো কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়। যেমন:- প্রেরিত রেমিটেন্সের সংখ্যা অনুযায়ী পেনশনের ব্যবস্থা করা, প্রবাসীদের ও তাদের পরিবারবর্গকে স্বাস্থ্য বীমার আওতায় আনা, প্রবাসীদের জন্য সহজ শর্তে আবাসনের ব্যবস্থা করা, প্রবাসীদের ছেলেমেয়েদের উচ্চ শিক্ষার সুবিধার্থে কোটা পদ্ধতির সুবিধা প্রদান করা ইত্যাদি।
এছাড়াও প্রবাসীদের পক্ষ থেকে প্রায়ই একটি অভিযোগ শোনা যায় যে, তারা বিমানবন্দরে অহেতুক কাস্টম ও অন্যান্য সংস্থা দ্বারা হয়রানীর শিকার হয়। সরকারকে এই বিষয়টির প্রতি বিশেষভাবে নজর দেওয়া প্রয়োজন বলে সংশ্লিষ্টমহল মনে করেন। প্রবাসীরা উদয়াস্ত কাজ করে দেশের জন্য সুনাম ও অর্থ দুইই যোগান দিচ্ছে। এত কষ্ট করে দেশে আসার সময় যদি অযথা হয়রানীর শিকার হয়, তা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং এতে তাদের মনোবল ভেঙ্গে পড়তে পারে। এর ফলে রেমিটেন্স আহরনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি একটি নতুন মোড় নিয়েছে। উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে জাতিসংঘ কর্তৃক প্রাথমিক স্বীকৃতির মাধ্যমে তা প্রমাণিত। এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য সরকারের প্রতিটি সংস্থাসহ সাধারণ জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে এবং এর মাধ্যমে ২০৪১ সালের সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন পূর্ণতা লাভ করবে বলে অর্থনীতিবিদসহ সংশ্লিষ্টদের অভিমত।

লেখক : কলামিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট