চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

বন্যার ছোবল দাঁড়াতে হবে দুর্গতদের পাশে

১৬ জুলাই, ২০১৯ | ১:১১ পূর্বাহ্ণ

দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ সারাদেশেই বন্যাপরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। টানা বৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের কারণে দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে সপ্তাহ দুই আগেই বন্যা শুরু হলেও আষাঢ়ের শেষে এসে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায়ও বন্যা দেখা দিয়েছে। এখন পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটছে। প্রতিদিনই প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। পানির তীব্রতায় ক্রমশ বাড়ছে ভাঙন এবং পরিসর বৃদ্ধি পাচ্ছে ভাঙন এলাকার। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, বিভিন্ন জেলা-উপজেলা নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। ভেঙ্গে পড়ছে সড়কযোগাযোগ ব্যবস্থা। বাড়ি-ঘর ও রাস্তা-ঘাট পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষদের। বিভিন্ন নদীর পানি বৃদ্ধি ও ভাঙনেও জনজীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। বৃষ্টি ও অব্যাহত পাহাড়ি ঢলের কারণে বন্যাপরিস্থিতির আরো অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় বন্যাপরিস্থিতির মোকাবিলায় জোরালো সরকারি পদক্ষেপ গ্রহণ এবং পানিবন্দি মানুষের কাছে দ্রুত ত্রাণ পৌঁছানোর বিকল্প নেই।
দৈনিক পূর্বকোণসহ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী পটিয়া, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলায় পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষ দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। বহু পরিবারে চুলায় আগুন জ্বলছে না। এতে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে তাদের। পানিতে তলিয়ে গেছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের বিভিন্ন অংশেও। ফলে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সড়কে খানাখন্দেরও সৃষ্টি হয়েছে। গত শনিবার থেকেই এই মহাসড়কে যানবাহন চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। দীর্ঘ যানজটের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন যাত্রীরা। পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলাগুলোতেও অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে গুরুতর বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যায় পার্বত্য জেলা বান্দরবান দেশের অন্যান্য এলাকা থেকে যোগাযোগ-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। দেশের একটি বিশাল অংশই এখন পারিবন্দি। বিভিন্ন নদীর পানিও বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে বন্যাপরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বন্যার কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও রেল যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। প্রয়োজনীয় ত্রাণের অভাবে দুর্গত মানুষদের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় দেখা দিয়েছে খাদ্যাভাব ও সুপেয় পানির সঙ্কট। পয়োনিষ্কাশন এবং হাঁস-মুরগি-গবাদিপশু সংরক্ষণসহ পশুখাদ্যের অভাব প্রকট আকার ধারন করেছে।
অভিযোগ আছে, কয়েকদিন অতিবাহিত হলেও বন্যাদুর্গত এলাকায় পর্যাপ্ত ত্রাণতৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। স্থানীয় প্রশাসন ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা কিছু ত্রাণের ব্যবস্থা করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। বিশুদ্ধ খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও পর্যাপ্ত পথ্যের অভাবে আমাশয়, পেটেরপীড়া, সর্দি-কাশি-জ্বরের প্রকোপও বেড়ে যাচ্ছে। এ চিত্রের অবসানে সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উচিত হবে দ্রুত সব রকম সাহায্য-সহায়তা নিয়ে বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়ানো। এনজিও সহ বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা এবং ব্যক্তিবর্গেরও উচিত হবে জরুরি ত্রাণ ও চিকিৎসাসেবার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসা। মনে রাখা দরকার, বন্যাদুর্গত এলাকার অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমাদের সবার মানবিক কর্তব্য। এই কর্তব্য পালনে আমাদের উদাসীন হওয়া উচিত নয়। বন্যা এবং ঘূর্ণিঝড়সহ নানা দুর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের অভিজ্ঞতা আছে। এখন সে অভিজ্ঞতার আলোকে পদক্ষেপ নিতে হবে। বন্যা মোকাবেলায় আমাদের সর্বব্যাপ্ত ও বহুমাত্রিক প্রস্তুতি ও পদক্ষেপ থাকলে জনদুর্ভোগ ও ক্ষয়ক্ষতি অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। উপকূলীয় বাঁধ নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করা ও সময়মতো সংস্কারের বিষয়টিও ভাবতে হবে। কারণ উপকূলীয় বাঁধগুলো মজবুত থাকলে জোয়ারের পানি নিম্নাঞ্চলে সহজে প্রবেশ করতে পারবে না।
বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে ত্রাণ কাজ চালাতে হবে পুরোদমে। ব্যবস্থা করতে হবে শুকনো খাদ্য, খাওয়ার স্যালাইন এবং ডায়রিয়া ও জ্বরের ওষুধের। গৃহপালিত পশুপাখিগুলোর সুরক্ষার দিকেও নজর দিতে হবে। গণমাধ্যমে বন্যার সঙ্গে বসবাসের নিয়ম ও উপায়গুলো প্রচার করতে হবে। বন্যাকবলিতদের সুরক্ষায় স্থানীয় সরকার ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলোর সক্রিয় তৎপরতাও জরুরি। আর পানি নেমে যাওয়ার পরে কৃষি, অর্থনৈতিক কাজ-কারবার, যোগাযোগ, পড়ালেখা পূর্ণোদ্যমে চালু করার আগাম প্রস্তুতিও নিয়ে রাখতে হবে। বন্যার পরে যাতে ডায়রিয়া বা পানিবাহিত রোগ ছড়াতে না পারে সে পদক্ষেপও নিতে হবে এখনি। পুনর্বাসন কাজও চালাতে হবে ত্রুটিহীনভাবে। আর বন্যার কারণে কেবল দুর্গত মানুষদেরই ক্ষতি হয় না, দেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও বড় ধরনের ক্ষতি সাধিত হয়। তাই বন্যা মোকাবেলায় পূর্বপ্রস্তুতি এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করাও জরুরি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট