চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

ইনসাইড হেল সে কি চাপা ভাঙ্গার যাদু জানে?

ফজলুল হক

১৬ জুলাই, ২০১৯ | ১:১১ পূর্বাহ্ণ

খোলামেলা সংলাপ
বেহশত-দোযখ, স্বর্গ-নরক- এরা দুনিয়াতে অবস্থান করে না। হয়ত অন্য কোন জগৎ আছে- যাকে হেভেন বা হেল বলা হয়। তবে দুনিয়াতে হেল সদৃশ যায়গা আছে। যেখানে আমরা নরক যন্ত্রণা ভোগ করি। কোন কোন মানুষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে নরক বানিয়ে ফেলে। ৩৩ বছর বিভিন্ন সরকারি কলেজে অধ্যাপনা করেছি। সেখানকার খারাপ অভিজ্ঞতার বিবরণ- ইন্ সাইড হেল। এই নামে একটি বই বের করার পরিকল্পনা আমার আছে।
আমার পৈত্রিক বাড়ী হালিশহরে। সরকারি কমার্স কলেজ (তৎকালীন নাম গভ: কলেজ অফ্ কমার্স) অবস্থিত আগ্রাবাদে। ১৯৫৬ সালে কলেজটি আগ্রাবাদে আসে। তার আগে আলকরনে শুকতারা ভবনে ও নাহার বিল্ডিং-এ কলেজটির কার্যক্রম চলত। তখনকার যুগে পুরো পাকিস্তানে বাণিজ্য শিক্ষার দুটি বিশেষায়িত কলেজ ছিল, লাহোরে হ্যালি কলেজ অফ কমার্স আর চট্টগ্রামে গভ: কলেজ অফ কমার্স। খুলনার আজম খান কমার্স কলেজ ছিল ব্যাক্তি মালিকানায়। চট্টগ্রাম কমার্স কলেজের অনার্স সেকশনকে বলা হতো অনার্স স্কুল অফ কমার্স। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে চট্টগ্রাম সরকারী কমার্স কলেজের একচেঞ্জ প্রোগ্রাম ছিল। বাংলাবাজার ও মাদারবাড়ীকে দুদিকে রেখে শুয়ে আছে চট্টগ্রাম রেল স্টেশন টু বন্দরগামী রেল লাইন। তার পাশে কর্ণফুলির তীর ঘেঁষে অবস্থিত বিশাল বহুতল ভবনের নাম নাহার বিল্ডিং। নাহার বিল্ডিং থেকে ১নং বাসে সল্টগোলা যেতাম। বাসগুলি ছিল মুড়ির টিন। হেন্ডেল ধরে দাঁড়িয়ে থাকতাম। দাঁড়ানো প্যাসেঞ্জারদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হতো। ছাত্ররা হাফ টিকেটে দু আনার যায়গায়, এক আনা ভাড়া দিত। আগ্রাবাদ/চৌমুহনি টু সল্টগোলা ২নং বাস ভাড়া দু আনা। নাহার বিল্ডিং টু সল্টগোলা ১নং বাস- ভাড়া দু আনা। আমাদের হাফ টিকেটের ভাড়া এক আনা। মুড়ির টিনের ভেতরে ধারন ক্ষমতার তিনগুন বেশী যাত্রী ঠাসাঠাসি করে ঢোকানো হতো। কন্ডাক্টরের হাঁকডাক চলত। আগ্রাবাদ কে কে নামবে? ভাড়া, টিকেট হাতে নিয়া আস। নামার সময় হাতে হয় টিকেট থাকতে হবে, না হয় ভাড়ার পয়সা থাকতে হবে। বাসে পকেটমারের উৎপাত। পকেট থেকে পয়সা বের করা বিপজ্জনক। কোন কোন পকেটমার ব্লেড দিয়া পকেট কেটে ফেলে। তারা নিজেকে বীর মনে করে। নামার সময় হাতে হয় পয়সা থাকতে হবে, না হয় টিকেট থাকতে হবে। আবার বলছে, পকেটমার থেকে সাবধান। আমি যেদিন পকেটমারের হাত থেকে পকেটে থাকা চার আনা রক্ষা করে বাস থেকে নামি- সেদিন নিজেকে হিরো হিরো মনে হত। আমাদের হালিশহরের আনন্দবাজার বা চৌচালা এলাকা থেকে আগ্রাবাদ আসার সরাসরি রাস্তা ছিলনা। চৌচালা থেকে বড়পুল- ব্যাপারীপাড়া হয়ে তৎকালীন ডিস্ট্রিক্ট বোর্ডের রাস্তা চলে গেছে পাঠানটুলি চৌমুহনী পর্যন্ত। তখন রাস্তাটি ছিল মাটির, মাঝে বড় বড় গর্ত। সাইকেল চালানো গেলেও, ঘোঁড়ার গাড়ী চালাতে হলে লম্বা কাঠের তক্তা সাথে রাখতে হতো, যেখানে দরকার কাঠ বিছাতে হতো। আমাদের বাড়ী থেকে চৌমুহনী পর্যন্ত দু চারটা রিকসা চলত, রিকসার ভাড়া আট আনা। আমাদের বাড়ী থেকে আট আনা খরচ করে আমি যদি চৌমুহনী আসি, তাহলে আমাকে হেঁটে কমার্স কলেজে আসতে হবে। আমাদের ঘোড়ার গাড়ী ছিল না কিন্তু আমার জেঠার ঘোড়ার গাড়ী ছিল। মালামাল আনা নেয়ার জন্য গরুর গাড়ী ছিল প্রধান বাহন। আমি আমাদের বাড়ী থেকে রেলের ইয়ার্ড় দিয়ে হেঁটে পোর্ট কলোনী হয়ে বন্দর ভবনের সামনে চলে আসতাম। তখন অবশ্য বন্দর ভবন হয়নি। সেখান থেকে হাফ টিকেট এক আনা দিয়ে বাসে আগ্রাবাদ স্পেনসার বিল্ডিং এর সামনে নেমে হেঁটে কলেজে যেতাম। ১৯৬৫ সালে আমি কমার্স কলেজে ভর্তি হই। বাড়ী থেকে সকাল সাড়ে আট টায় ভাত খেয়ে কলেজে যাত্রা শুরু করতাম। শীত, বর্ষা, গ্রীষ্ম- আমাদের চৌচালা এলাকা থেকে হেঁটে বন্দর ভবন বা কাস্টম্স হাউস এলাকায় এসে মুড়ির টিনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতাম। পরে আমি কমার্স কলেজ হোস্টেলে সীটের জন্য আবেদন করি। আমাদের স্যার আখতারুজ্জামান সাহেব ছিলেন হোস্টেল সুপারিন্টেডেন্ট। উনি আমাকে হোস্টেল অফিসে ডেকে পাঠালেন। গম্ভীর কন্ঠে বললেন, তুমি কেন হোস্টেলে সীটের জন্য দরখাস্ত করেছ? তোমার বাড়ী না এখানে? আমাদের হালিশহরে একটা প্রবাদ আছে “বাড়ী কাছে- ঘাঁটা দূরে,” আমি স্যারকে বল্লাম, স্যার আসা যাওয়া ভীষণ কষ্ট হয়। তখন ১০টা- ৫টা ক্লাশ হতো। কোনদিন মাগরিবের আগে আমি ঘরে ফিরতে পারতাম না। আমি আমাদের এলাকার ফুটবল টিমের ক্যাপ্টেন ছিলাম। ক্রিকেট, হকি ও বেসবল খেলতাম স্কুলে। তো, ফুটবল খেলা সেরে রাত্রে ঘরে যেতাম। আমার দাদা আমার জন্য উদ্বিগ্ন থাকতেন। স্যার আবার বল্লেন, তোমার বাড়ী এখানে। কেন হোস্টেলে আসবে? আমি বলি, স্যার, যাওয়া আসার কষ্ট হয়। আমি ছাত্র রাজনীতি করি, স্যার জানেন। শান্ত ভাবে বল্লেন, দেখ বাবা, তোমরা লোক্যালরা যদি হোস্টেলে উঠ, তাহলে নোয়াখালী, কুমিল্লা, বরিশাল থেকে আসা ছাত্ররা কোথায় থাকবে? আমি একটু খানি সুর বদল করে বল্লাম, স্যার, আপনি পিতৃতুল্য, আপনি আমার ক্লাশ নেন, মানুষের অনেক অসুবিধা থাকতে পারে। আপনি আমাকে একটা সীট দেন। উনার বড় ছেলে আমাদের ব্যাচমেট ছিল। সে চট্টগ্রাম কলেজে পড়ত। তাই আমি স্যারকে সমীহ করতাম। স্যার বল্লেন, ফজলুল হক, তুমি বল, যারা অন্য ডিস্ট্র্রিক্ট থেকে আসবে, তাদের কোথায় থাকার ব্যবস্থা করব? আমি বল্লাম, স্যার, তারা হয়ত প্রয়োজনে এখানে আসে। কিন্তু আমি কি নোয়াখালী, কুমিল্লা গিয়ে, সেখানে কলেজে ভতি হব? এটা আমার জেলা। আমি বলছি না, ওরা এখানে আসবে কেন? বলছি না তাদের জেলাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই? কলেজ নেই? তারা সেখানে পড়তে পারে না? আমি চট্টগ্রামের লোক বলে আমি হোস্টেলে সীট পাবো না- এটা স্যার কেমন বিচার? চট্টগ্রামের ছাত্র সীট পাবে না, যেহেতু এখানে তার বাড়ী আছে এটা কি কোন নীতি হতে পারে? একই বক্তব্য আমি অধ্যক্ষ স্যারের কাছে বলার পর অধ্যক্ষ স্যার আমাকে হোস্টেলে সীট বরাদ্দ করেন। আল্লাহ স্যারদের বেহশত নসীব করুন। স্যারেরা আমাদেরকে সন্তানের মতো ভাবতেন। তখন অনেকে বলাবলি করত হালিশইয্যারা লেখাপড়া করে না। শুটকির ব্যবসা করে।
হোস্টেলে থাকি। কয়েকদিন পর পর হোস্টেল থেকে হেঁটে পাঠানটুলীতে অবস্থিত আমার বাবার ওয়ার্কশপে যাই। আসার সময় তিনি আমাকে একটা দশ টাকার নোট দেন। তাতে দু চারদিনের খরচ চলে যায়। বই লাগবে, জামা লাগবে- এসব কথা বলে বাড়তি কিছু টাকা আনতাম। তখন পকেটে এক টাকা থাকলে সারাদিনের খরচ সামলানো যেত। সেকেন্ড ইয়ারে পড়ার সময় আমি ছাত্রলীগের (দিশারী ছদ্ম নামে) প্যানেল থেকে কলেজের কমনরুম সেক্রেটারী নির্বাচিত হই। আমার ভারপ্রাপ্ত অধ্যাপক ছিলেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী স্যার। তখন কলেজের কমনরুম ছিল ছাত্রসংসদ অফিসের পাশে। এটা কলেজের ইনডোর গেম্স এর কেন্দ্রবিন্দু ছিল। হাশেমিয়া হোটেল, সফিনা হোটেল, ড্রীম হোটেলের মালিকের ছেলে সফি তখন ক্যারমবোর্ড খেলার যাদুকর ছিল। পরে সে থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়েছিল। কলেজ থেকে আমাকে কমনরুমের জন্য ৮০০ টাকা বাজেট দেয়া হয়েছিল। তখন আমার ব্যস্ত সময় কাটত। তখন ছাত্রী কম ছিল। ছাত্রীদের কমনরুমেও খেলার সরঞ্জাম পাঠিয়ে দিতাম।
একদিন রেয়াজুদ্দিন বাজারের কাপড়ের গলির মুখে এক লোকের দেখা পাই, সে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখে সে দৌঁড়ে আসে। বলে, বদ্দা? কডে যাইবা? আমি বলি, দাদা, তোমাকে তো চেনা চেনা লাগছে। তোমাকে কোথায় দেখেছি? সে বলে, কেন, দু নম্বর বাসে দেখেছেন। ভুলে গেছেন? আমি পকেট মারি। মানে তুমি পকেটমার? সে বলে, পকেটমার, তবে বহু চেষ্টা করেছি, আপনার পকেট মারতে পারিনি। তাই আপনাকে আমি গুরু মানি।
তাকে আমি প্যারামাউন্ট হোটেলে নিয়া যেতে চাই। সে বলে, তাজ হোটেলে চলেন। সে আমাকে প্রশ্ন করে, আপনি বাসে পকেট সামলে রাখেন কিভাবে? সে জানে না আমি যাদু বিদ্যা জানি। ম্যাজিশিয়ান। হেসে হেসে আমি তাকে বলি, পকেটমার দাদা? আমি ২০ টাকা পারিশ্রমিক দিয়া এক যাদুকরের কাছ থেকে যাদু শিখেছি। উনি আমাকে শিখিয়েছেন, কীভাবে পুরুষ মানুষকে মোরগ, আর সুন্দরী মেয়েদের মুরগী বানাতে হয়। তো, আমি অনেক মেয়েকে মুরগী বানিয়েছি। আর ওই কৌশল প্রয়োগ করে আমি বাসে আমার পয়সার কয়েনকে ছোট ছোট মুরগীর বাচ্চা বানিয়ে পকেটে রাখতাম। সে বলে, দাদা, ঠিক তো? আপনি বাসে থাকলে মুরগীর বাচ্চার কিচির মিচির শুনতাম। সত্যিই আপনি ম্যাজিক জানেন?
আমি গ্রেটার নোয়াখালীর এক সরকারি কলেজে আড়াই বছর শিক্ষকতা করেছি। চট্টগ্রাম থেকে এত দূরে ভাল লাগত না। একদিন পরীক্ষার হলে- পরীক্ষা দেখতে যাই। তখন প্রচ- বৃষ্টি হচ্ছে। ওই কলেজের বিশাল ক্যাম্পাস তখন তিন চার হাত পানির নীচে। নোয়াখালী, লক্ষীপুর পানিতে থৈ থৈ করছে। আমি ও ড. ইউসুফ পরীক্ষার হলে ঢুকে দেখতে পাই এক ছাত্রী টেবিলের উপর বই খুলে দেখে দেখে লিখছে। পাবলিক পরীক্ষায় এটা করা সম্ভব? আমি বইটা নিয়ে হলের ইনভিজিলিটরকে দিই। বেরিয়ে এসে দু একটা কক্ষ দেখার পর আবার সে কক্ষে ঢুকি। এবার ড. ইউসুফ দেখেন ওই একই ছাত্রী একই বই খুলে লিখছে। মানে হলের ইনভিজিলিটর বই মেয়েকে ফেরৎ দিয়েছে। এটা কি করে সম্ভব? একজন শিক্ষক আমাকে বলে, ওই ছাত্রী হচ্ছে, একজন ইনভিজিলিটরের বাগদত্তা। সহসা বিবাহ হবে। আমি পরীক্ষা কমিটির একজন সদস্যকে বল্লাম, বিয়ের আগে হবু স্ত্রীর প্রতি হবু স্বামীর কেমন আকর্ষণ থাকে বুঝতে পার? এই রুমে অধ্যাপককে ডিউটি না দিয়া ক্যাম্পাসের ওই প্রান্তে, জলে ডোবা মাঠের ওই পাশের বিজ্ঞান ভবনে ডিউটি দিলা না কেন? অত দুর থেকে কোমর পানি ভেঙ্গে সে এদিকে আসতো না। পরীক্ষা কমিটির সদস্য আমাকে বল্ল, স্যার, সায়েন্স ভবনে ডিউটি দিয়া দেখেছি। চুম্বক লোহাকে টানে। সে একদিন সাতরাইয়া বিজ্ঞান ভবন থেকে এই কক্ষে চলে এসেছে। অসীম প্রেম। লাইলী মজনু হার মানবে। স্যার, অসীম প্রেম।
রাত্রে আমি এবং ড. ইউসুফ হোটেলে অবস্থান করছি। তখনো বাসা ঠিক হয়নি। ওই পরীক্ষার হলের ডিউটিরত ছিল, এমন এক শিক্ষক দৌড়ে এসে আমাকে বল্ল, স্যার আসেন। বাজারের ঔষধের দোকানে খুনোখুনি হতে যাচ্ছে। দৌড়ে গেলাম। ওই ছাত্রীর হবু স্বামী ও সে কলেজের অধ্যাপক তার সাথে থাকা এক ইনভিজিলেটরকে মারছে। উনি হলে নকলে বাধা দিয়েছিলেন। আমি অধ্যাপককে বলি, তাকে মারতে চাচ্ছেন কেন? সে অধ্যাপক (হবু স্বামী) বলে, স্যার, মারবো না, তার চাপা ভেঙ্গে ফেলবো। আমি বলি, কেন? হবু স্বামী বলে, আমার হবু স্ত্রীকে সে পরীক্ষা দিতে দিচ্ছে না। আমি বলি, তার যে চাপা ভাংবা, বল চাপা কি? সে তার গালের হাড্ডিতে হাত রেখে বলে, এইটা “চাপা”। আমি বল্লাম, কি দিয়া তুমি চাপা ভাংবা?
আমি পুরুষকে মোরগ, মেয়েকে মুরগী বানানোর যাদু জানি। মাঝে মাঝে আমরা শিক্ষকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে নরক বানাই। উই লিভ ইনসাইড হেল। আচ্ছা, ওই অধ্যাপক কি মানুষের গালের চাপা ভাংগার যাদু জানে? শিক্ষকের কি উচিৎ হবু স্ত্রীকে নকল সরবরাহ করে পরীক্ষায় পাশ করানো? কোন কোন শিক্ষক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে নরক বানিয়ে ছাড়ে? মাঝে মাঝে মনে হয়, এটা স্কুল? না হেল? উই লিভ ইনসাইড হেল? ভাল লোকদের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে- উই আর হেল্পলেস।

লেখক ঃ সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ, অধ্যক্ষ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ভধুষঁষযড়য়ঁবথ৭@ুধযড়ড়.পড়স

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট