চট্টগ্রাম বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

গরম মসলার বাজারে অস্থিরতা দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিন

১৫ জুলাই, ২০১৯ | ১:১৭ পূর্বাহ্ণ

কোরবানির ঈদ যতই এগিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে বিভিন্ন মসলাপাতির দাম। ইতোমধ্যেই মুনাফাশিকারি সিন্ডিকেটগুলো বেপরোয়া হয়ে উঠার খবর প্রকাশিত হয়েছে দৈনিক পূর্বকোণসহ বিভিন্ন পত্রিকায়। প্রকাশিত খবর অনুযায়ী সরগরম হয়ে উঠেছে খাতুনগঞ্জের পাইকারি গরম মসলার বাজার। কয়েক মাস ধরে ক্রমে বাড়ানো হয়েছে এলাচি, দারুচিনি, চিকন জিরাসহ বেশ কিছু মসলার দাম। সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী মাত্র চার দিনের ব্যবধানে শুধু পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। রসুন-আদার দামও ঊর্ধ্বমুখী। কোনো কারণ ছাড়াই বেড়েছে অন্য মসলার দামও। কিন্তু বাজারে নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপরক্ষের নজরদারি। কোরবানীদাতাসহ স্বল্প আয়ের মানুষদের জন্যে এটি উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার বিষয়।
পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে যথার্থ কারণ না থাকলেও ব্যবসায়ীরা খোঁড়া যুক্তি দাঁড় করিয়ে বলেছেন, উৎপাদন মৌসুমে দেশি পেঁয়াজ তোলার সময় বৃষ্টি ছিল, এতে পেঁয়াজ নষ্ট হওয়ার ভয়ে দেশি পেঁয়াজ আগাম বিক্রি হয়ে গেছে। একই সঙ্গে তারা ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কথাও জানিয়েছেন। কিন্তু এসব যুক্তি যথার্থ নয়। আসল কথা হচ্ছে, কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে পেঁয়াজসহ সব মসলাপণ্যের দাম বাড়িয়ে ভোক্তাদের পকেট কাটা। প্রতিবছরই মসলাপণ্যের কারণ ছাড়া দাম বৃদ্ধির সংবাদ প্রত্যক্ষ করতে হয় দেশের জনগণকে। আগামী দিনগুলোতে দাম আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপারটি হচ্ছে, মুক্তবাজার অর্থনীতির নামে ভোক্তাশ্রেণি এভাবে অসাধু ব্যবসায়ীদের অরাজকতা আর খামখেয়ালিপনার শিকার হলেও সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর কোনো তৎপরতা নেই। মসলাপণ্যের দাম বাড়ানোর সঙ্গে পণ্যের সংকট কিংবা সরবরাহের কোনো সম্পর্ক নেই। এটা হচ্ছে ব্যবসায়ীদের প্রতারণাপূর্ণ লোভী মানসিকতা।
বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিমপ্রধান দেশে ঈদের সময় দ্রব্যমূল্য কমিয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। গত রমজান ও ঈদুল ফিতরের সময়ও ইরান, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, কাতার, সৌদি আরবসহ অসংখ্য মুলিম দেশ ঘোষণা দিয়ে পণ্যের দাম অর্ধেক কমিয়ে দিয়েছিল। অনেক প্রয়োজনীয় পণ্যে তারা ভর্তুকিও দেন, যাতে সাধারণ স্বল্প আয়ের মানুষ ঈদ-আনন্দ উপভোগ করতে পারেন। কিন্তু বাংলাদেশে এর বিপরীত দৃশ্যই দেখা যায়। ঈদ মৌসুমে মুনাফাশিকারিদের অপতৎপরতা বেড়ে যায়। কোনো কারণ ছাড়াই পণ্যমূল্য বাড়িয়ে দিয়ে ভোক্তাশ্রেণির পকেট কাটা হয়। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের নির্লিপ্ততার সুযোগ নিয়ে তারা অবৈধ অর্থের পাহাড় গড়ে। এবারের কুরবানির ঈদেও তারা তৎপর হয়ে উঠেছে। মসলাদ্রব্যের দাম বাড়িয়ে বেশি মুনাফা হাতিয়ে নিতে অসাধু চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠেছে এখন। এ অসাধু চক্রগুলোর কাছে সাধারণ ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ ভোক্তারাও অসহায়। কোরবানির ঈদের বাড়তি চাহিদাকে পুঁজি করেই মুনাফাশিকারিচক্র ভোক্তাদের পকেট কাটছে। তারা এলাচ, রসুন, হলুদ, লবঙ্গ, বাদাম ও শুকনা মরিচের দামও বাড়াচ্ছে অযৌক্তিকভাবে। বাড়তির দিকে অন্যান্য খাদ্যপণ্য ও রান্নার উপকরণের দামও। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারি কর্তৃপক্ষের কার্যকর ভূমিকা থাকলে এমনটি হতো না নিশ্চয়ই।
আমরা মনে করি, জোরদার বাজার মনিটরিং ও অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে এখনই সরকারের কঠোর পদক্ষেপ নেয়া উচিত। মুনাফাশিকারিরা যাতে ইচ্ছেমতো দাম না নিতে পারে, সে জন্যে বাজারে মূল্যতালিকা প্রদর্শন ও তা মানতে বাধ্য করতে হবে। কেউ তালিকামূল্যের বেশি দাম আদায় করলে সঙ্গে সঙ্গে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
মসলাসামগ্রীর পাশাপাশি সব রকম ভোগ্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল ও সহনীয় রাখতেও সরকারের সুচিন্তিত উদ্যোগ থাকা দরকার। একইসঙ্গে বাজার পরিস্থিতি পাল্টানোর জন্য ব্যবসায়ীদের অসৎ, লোভী ও প্রতারণামূলক মানসিকতার পরিবর্তনেও সুচিন্তিত কর্মসূচি থাকা দরকার।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট