চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

নগরীর জলাবদ্ধতা সমাধানে দ্রুত উদ্যোগ নিন

১১ জুলাই, ২০১৯ | ১২:৫৬ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম মহানগরীর বাসিন্দারা আবারও জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছেন। দিনতিনেকের টানা বর্ষণে চট্টগ্রাম মহানগরীর অধিকাংশ নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। সিডিএ আবাসিক এলাকাসহ কয়েকটি এলাকায় বৃষ্টির পানির সাথে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ায় মানুষের দুর্ভোগ অনেক বেড়ে গেছে। আবাসিক ভবনগুলোর নিচের তলা এবং স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা ও দোকানপাটে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারন করেছে। দেখা দিচ্ছে ডায়রিয়াসহ নানা পানিবাহিত রোগ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ও দিনের পর দিন পানির নিচে তলিয়ে থাকায় রাস্তাঘাটে সৃষ্টি হওয়া ছোটখাটো খানাখন্দ বড় গর্তে পরিণত হয়েছে। মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকায় আরো কয়েকদিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এতে অবিরাম বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে নতুন নতুন এলাকাও প্লাবিত হতে পারে। সঙ্গে বাড়বে ক্ষয়ক্ষতি এবং জনভোগান্তিও। এই চিত্রের অবসানে দ্রুত যুৎসই পদক্ষেপ না নেয়া হলে আগাামিতে জনভোগান্তি আরো বাড়বে, সন্দেহ নেই।
বর্ষায় জলাবদ্ধতা এখন চট্টগ্রামের জনগণের ললাটলিখনে পরিণত হয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতেই স্থবির হয়ে পড়ছে দেশের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ মহানগর বন্দরনগরী চট্টগ্রামের কর্মব্যস্ত মানুষদের জীবন। দৈনিক পূর্বকোণসহ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে দেখা যাচ্ছে, নগরীর বেশ কয়েকটি এলাকার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। এসব এলাকায় বাসাবাড়ি ছাড়াও বিভিন্ন অফিস, কলকারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকেছে। জলাবদ্ধতার শিকার মানুষদের অনেকেই সকালের দিকে দৈনন্দিন কাজ ফেলে বাসার পানি সেচতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। পানি উঠার কারণে অনেকের টিভি, ফ্রিজ, গাড়িসহ মূল্যবান সামগ্রী নষ্ট হয়ে গেছে। পানি জমার কারণে বিভিন্ন রাস্তায় অসংখ্য খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। গর্তে গাড়ি পড়ে ছোটখাটো দুর্ঘটনাও ঘটছে। জলাবদ্ধতাজনিত কারণে কর্মস্থলে যেতে নানা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে কর্মজীবী মানুষদের। পাশাপাশি গুণতে হচ্ছে কয়েকগুণ বেশি ভাড়াও। শিক্ষালয়ে যেতে নানামুখী দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
বৃষ্টির সময় তো বটেই, বৃষ্টির মৌসুম না থাকলেও জলাবদ্ধতা থেকে রেহাই পান না নগরীর নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দারা। জোয়ারের পানিতে সয়লাব হয়ে যায় নগরীর অভিজাত আবাসিক এলাকা সিডিএ সহ বিভিন্ন অঞ্চল। এ অবস্থার অবসানে বছরখানেক আগে প্রায় ছয়হাজার কোটি টাকার মেগাপ্রকল্প গ্রহণের প্রেক্ষিতে নগরবাসী স্বস্থি বোধ করছিলেন, এই ভেবে যে এবার আর জলমগ্নতার দুর্বিসহ কষ্ট নাগরিকজীবনকে স্পর্শ করবে না। কিন্তু আষাঢ়ের প্রথম দিনেই মাত্র ঘণ্টাখানেকের বৃষ্টিতে নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকার টইটুম্বুর অবস্থা এবং প্রায় ৪৮ ঘণ্টায়ও কিছু এলাকা থেকে পানি সরে না যাওয়ায় এই স্বস্থি চরম অস্বস্থিতে পরিণত হয়। শুধু তাই নয়, ভর বর্ষায় নাগরিকজীবন কেমন দুর্বিসহ হবে সে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও পেয়ে বসে নগরবাসীকে। এখন ভরবর্ষায় সে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাস্তবে রূপ পেয়েছে। কিন্তু যেখানে উন্নয়নের মহাসড়ক ধরে দেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, সেখানে সামান্য বৃষ্টিতেও দেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র বন্দরনগরী চট্টগ্রামের জলমগ্নতা এবং নাগরিকদুর্ভোগের এমন চিত্র কি কাম্য হতে পারে? সংশ্লিষ্টরা যদি যথাসময়ে যথাউদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে মনোযোগী হতেন, কিংবা বাস্তবতার নিরিখে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মেগাপ্রকল্পটি গ্রহণ করতেন, খাল এবং নালা-নর্দমা খনন করে পানি ধারন ও নিষ্কাশনের উপযোগী করে রাখতেন, শুষ্কমৌসুমে রাস্তাঘাটের সংস্কার কাজ সম্পন্ন করতেন এবং জলাধারগুলোর সংরক্ষণে আইনানুগ উদ্যোগ নিতেন, তাহলে কি নগরবাসীকে এমন দুর্ভোগ ভোগ করতে হতো? উল্লেখ্য, চট্টগ্রামকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলতে এ পর্যন্ত মোট পাঁচটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা হলেও কোনোটিই বাস্তবায়ন করা হয়নি যথাযথভাবে। নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে গত কয়েক বছরে কমবেশি সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার প্রকল্প গৃহীত হলেও নানা কারণে দৃশ্যমান সুফল অর্জিত হয়নি। বাস্তবায়নের অভাবে বরাদ্দকৃত অর্থও ফেরত গেছে। ফলে জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকেও মুক্তি মিলছে না চট্টলবাসীর।
দেশ যখন উন্নয়নের মহাসড়ক ধরে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন বাণিজ্যিক রাজধানী বন্দরনগরী চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানে মনোযোগ দেয়ার বিকল্প নেই। আমরা বিশ্বাস করি, আন্তরিকতার সাথে যথাযথ উদ্যোগ নিলে জনকাক্সিক্ষত সুফল আসবে। পাহাড়কাটা ও বিসবুজীকরণ তৎপরতা বন্ধ করা গেলে, নালা-নর্দমা, খাল ও জলাশয় দখলমুক্ত করে পরিস্কার ও পানি চলাচল উপযোগী রাখতে পারলে, উন্নয়ন কাজে সমন্বয় থাকলে, সাধারণ মানুষকে সচেতন করা গেলে এবং যারা আইন ভঙ্গ করছে তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনা গেলে, শহররক্ষা বাঁধ ও স্লুইসগেট নির্মাণ করে ভরা জোয়ারের পানি নগরের নিম্নাঞ্চলে ঢুকতে না দিলে জলাবদ্ধতার অসহনীয় দুর্ভোগ ও ক্ষয়ক্ষতি থেকে নগরবাসীকে পরিত্রাণ দেয়া যাবে। আমরা চাই, বিলম্বে হলেও চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে দীর্ঘ ও স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা গৃহীত হোক; নগরবাসী মুক্তি পাক জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট