চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

বাবা, তুমি আছো অস্তিত্বজুড়ে

১৬ জুন, ২০১৯ | ১:২৫ পূর্বাহ্ণ

আমার দাদার ছয় সন্তান ও তিন মেয়ে নিয়ে ছিল আমাদের বিশাল যৌথ পরিবার। সেই পরিবারে বাবা ছিল ভাই-বোনদের মাঝে সবার বড়। আর সেই বিশাল পরিবারে মাওলানা বশির আহমদের প্রথম সন্তান হিসাবে আমার জন্ম ছিল রাজকীয় বেশে। যা চেয়েছি তাই পেয়েছি খুব সহজে। দাদার ভালবাস্ াবুঝার আগেই তিনি চলে যান পরপারে। দাদীর ভালবাসা ছিল অতুলনীয়। দাদী ছিল আমার ভালবাসার মধ্যমণি।
সেই সুখময় জীবনে অন্ধকার দেখা দেয় ২০০৬ সালের জুন মাসে। তখন পৃথিবীজুড়ে ফুটবল বিশ্বকাপের আমেজ। সেই আমেজে আমরাও ছিলাম খুবই উৎসবমুখর পরিবেশে। সেই সুবাদে সেদিন বিকালে বৃষ্টি উপেক্ষা করে ফুটবল ম্যাচ শেষে বাড়ি ফিরছিলাম। তখন আমাদের পাড়া থেকে ভেসে আসছিল কান্নার আওয়াজ। তখনও বুঝতে পারিনি এটি আমার জীবনের বটবৃক্ষের চিরবিদায়ে প্রিয় মানুষজনের কান্নার রোল। একটু সামনে অগ্রসর হতেই চাচাতো ভাই তাহের এসে বল্ল ‘তোর আব্বু তো মারা গেছে।’ তখন হয়তো আমি ভালভাবে বিশ্বাস করতে পারছিলাম ওর দেওয়া খবরটা। যখন একটু পর নিজ গৃহে প্রবেশ করলাম তখনই দেখি আমার আম্মুসহ আমার পরিবারের সবাই কাঁদছে অবিরত। তখনও আব্বুর নিথরদেহ আসেনি আমাদের বাড়ীতে। কারণ আব্বু শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছিল আমার নানার বাড়ীতে। নানার বাড়ীতে বেড়াতে যাওয়া আমার ছোট ভাই জায়েদ (বর্তমানে হাফেজ) তাকে আনতে গিয়ে নিজ শশুর বাড়ীতে স্ট্রোক করে বিদায় নেন স্বার্থপর পৃথিবী থেকে। আর আমিসহ আমাদের পাঁচ ভাই-বোন হয়ে গেলাম বাবাছাড়া এতিম।
বাবা ছিলেন একজন আলেম ও শিক্ষক। সেই সাথে সরকারি কাজি। সে সুবাদে বছরের বেশি সময় কাটাতেন কর্মস্থল সাতকানিয়ার ছোট বারদোনাতে। আমাদের থেকে দূরে থাকলেও তার ভালবাসা কখন দূরে রাখতে পারেনি আমাদের। আব্বুর অনুপস্থিতিতে আম্মুর শাসন ছিল খুবই কড়া। সেই সুবাদে মাঝেমধ্যে দুষ্টামির কারণে বেত দিয়ে পিটাতেন আম্মু। একদিন আব্বুকে সেই কথা বলার পর তিনি বলেছিলেন, ‘তোমার আম্মু কয়টায় মারে সেটা দেওয়ালে চক দিয়ে দাগ দিয়ে রাখবা। আমি আসলে কঠিন বিচার হবে। আসলেও তাই আমাদের শাসনের কারণে আম্মুকে আব্বু অনেক বকাঝকা করতেন। সেই ভালবাসা কিন্তু আজ অনুপস্থিত। তবে আজ আব্বুর অনুপস্থিতিতে আম্মুই আমাদের সব। জীবনের কঠিন সময়ে তার ভালবাসায় আগলে রেখেছিল বলেই আজ আমাদের এতদূর আসা।
আব্বু, তোমায় অনেক বেশি মিস করি, যখন দেখি তোমার ভাইয়ের অন্য ছেলেমেয়েরা বিভিন্ন উৎসবে তাদের বাবার সাথে আনন্দে মেতে উঠে। আব্বু তোমায় আরেকটি কথা বলি তোমার অবর্তমানে তোমার দুই ভাই ‘শফিক আহমদ ও খাইর আহমদ’ চেষ্টা করেছেন অবিরত তোমার অভাব আমাদের বুঝতে না দিতে।
তোমার আরেক প্রিয়জন বারদোনার আনোয়ার আলম চৌধুরী আমাকে নিজ সন্তানের মত স্নেহ করেন। সবসময় সব বিপদআপদে আগলে রাখেন, তার ভালবাসা দিয়ে। তুমি পরপার থেকে তাদের জন্য দোয়া কর। আব্বু তোমার সন্তানেরা আজ সবাই দেশের প্রচলিত শিক্ষায় শিক্ষিত। আমি তো চাকরি করছি, যেটা তুমি দেখতে চেয়েছিলে। আর তোমার বড় মেয়ে মরজিয়ার ঘরে ‘ফাবিহা’ নামের সুন্দর এক নাতনি রয়েছে। যা দেখলে সত্যিই তুমি অনেক খুশি হতে।
আব্বু আমাদের জন্য দোয়া কর, যাতে তোমার মত আলোকিত মানুষ হতে পারি। আজ অবধি তোমার ভালবাসা ও দোয়া আমাদের চলার পাথেয়।

মাসুম খান
সংবাদকর্মী।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট