চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ইয়াবা ব্যবসায়ীর সঙ্গে ১০ লাখ টাকায় দফারফা!

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৭ জুন, ২০১৯ | ১১:৩৬ অপরাহ্ণ

কক্সবাজারে ১০ লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে জিয়া উদ্দিন ওরফে জিয়াউর রহমান নামের এক শীর্ষ ইয়াবা কারবারিকে নন-এফআইআর মূলে আদালতে চালান দিয়ে সহজেই বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে কক্সবাজার সদর মডেল থানার এক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। ওই ইয়াবা কারবারির কাছ থেকে ইয়াবা ও নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়। এমনকি ধৃত জিয়া উদ্দিন ওরফে জিয়াউর রহমান দুটি মাদক মামলার আসামি। এসব তথ্য গোপন করেন উপ-পরিদর্শক মো. আবুল কালাম। ওইদিনই জিয়া উদ্দিন ওরফে জিয়াউর রহমান ছাড়া পেয়ে টেকনাফে তার শ্বশুরবাড়িতে আত্মগোপনে রয়েছে। জিয়া উদ্দিন ওরফে জিয়াউর রহমান কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালীর বাংলাবাজার এলাকার মো. আকবরের পুত্র। তবে দীর্ঘদিন আগে মিয়ানমার থেকে তারা সেখানে আসে বলে স্থানীয়রা জানান।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক আবুল কালাম বলেন, জিয়ার বাড়ি সাতকানিয়ায়। একটি মামলায় সে জামিনে রয়েছে। তিনি উক্ত অভিযানের সাথে সম্পৃক্ত নন বলে দাবি করে সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন। কক্সবাজার সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খন্দকার ফরিদ উদ্দিন বলেন, আমরা ইয়াবার বিরুদ্ধে খুব সতর্ক। এমন হওয়ার কথা নয়। ঘটনাটি গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় রাখছি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত ১২ জুন রাত আনুমানিক ৯টার দিকে সদর উপজেলার পিএমখালীর বাংলাবাজার আইডিয়াল স্কুলের পূর্বপাশের ওবায়দুল হকের দোকানের সামনে থেকে শীর্ষ ইয়াবা কারবারি জিয়া উদ্দিন ওরফে জিয়াউর রহমানকে সিএনজি অটোরিকশায় তুলে নেয় কক্সবাজার সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক আবুল কালামের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল। ঘটনাস্থলের পাশেই তার বাড়ি। ধৃত আসামিকে নিয়ে বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ইয়াবা ও নগদ টাকা উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর থেকেই চলে ওই ইয়াবা কারবারিকে ছাড়িয়ে নেয়ার তদবির। স্থানীয় জয়নাল, ঘটক ধলুসহ বেশ কয়েকজনের একটি ইয়াবা সিন্ডিকেট ইয়াবা কারবারি জিয়া উদ্দিনকে ছাড়িয়ে নিতে রাতেই পুলিশের সাথে দেনদরবার শুরু করে।

তবে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, পুলিশ তদবিরকারীদের ধৃত জিয়া উদ্দিনকে ক্রসফায়ারে দেয়া হবে বলে ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা দাবী করে। সর্বশেষ পরদিন (১৩ জুন) সকালে ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে ইয়াবা কারবারি জিয়া উদ্দিনকে নন-এফআইআর মুলে পুলিশ আইনের ৩৪(৬) এর জামিনযোগ্য ধারায় আদালতে চালান দিয়ে সহজেই বের হওয়ার সুযোগ করে দেন অভিযান পরিচালনাকারী উপ-পরিদর্শক মো. আবুল কালাম। এক্ষেত্রে ইয়াবা ও নগদ টাকা উদ্ধার, আটকের স্থান, আটকের সময়, তার নামে থাকা মামলা, তার পুরো নামসহ বিভিন্ন তথ্য গোপন করা হয়। এমনকি কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালীর বাংলাবাজারের প্রধান সড়কের পাশে অবস্থিত তার বাড়ির পাশ থেকে জিয়া উদ্দিনকে আটক করা হলেও আদালতে দাখিলকৃত পুলিশের প্রসিকিউশনে তার ঠিকানা দেখানো হয়েছে চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া থানার বাদালিয়া এলাকায়।

সূত্রটি আরও জানায়, তদবিরকারীরা পুলিশকে ম্যানেজ করার জন্য ১০ লাখ টাকা নিলেও পুলিশকে দেয়া হয়েছে ৬ লাখ টাকা। এসব বিষয় কয়েকদিন ধরে পুরো এলাকায় কানাঘুষা চললেও সোমবার তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পুরো এলাকায় পুলিশের বিরুদ্ধে চলে তুমুল সমালোচনাও।

স্থানীয়রা আরও জানায়, জিয়ার পরিবার দীর্ঘদিন আগে মিয়ানমার থেকে এখানে এসে জায়গা ক্রয় করে। বাংলাবাজার এলাকায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশেই সুবিধাজনক স্থানে জমি কিনে বাড়ি তৈরী করা হয়েছে। পরে সাতকানিয়া ও টেকনাফেও বাড়ি তৈরী করেছেন। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও টেকনাফ থেকে প্রায় সময় বিভিন্ন ধরনের লোকজন আসা-যাওয়া করে বাংলাবাজারের এই বাড়িতে। গাড়িতে করেও গভীর রাত পর্যন্ত অপরিচিত মানুষের রহস্যজনক আনাগোনা রয়েছে জিয়ার বাড়ি ঘিরে। মহাসড়কের পাশের ওই বাড়িতে ইয়াবা মজুদ রেখে সুযোগ বুঝে চালান দেয়া হয় বলেও অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। এছাড়া বেশ কিছুদিন আগে জিয়া মাদক মামলায় কারাগার থেকে বেরিয়ে বেশ বেপরোয়া হয়ে উঠেন। স্থানীয় জয়নাল, ঘটক ধলু, ভুয়া কামাল, খোকন, রাসেদসহ বেশ কয়েকজন তাকে শেল্টার দিয়ে ইয়াবা বাণিজ্যে সহযোগিতা দিচ্ছে। জিয়া এর আগে আটক হওয়ার পর তার স্বীকারোক্তি অনুসারে রাসেদকে তুলে নিয়েছিল আইনশৃংখলা বাহিনী। এদিকে একজন চিহ্নিত ইয়াবা কারবারিকে হাতেনাতে ধৃত করার পর এভাবে ছেড়ে দেয়ার ঘটনায় এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসী বলছেন, পুলিশ যদি এমন ভূমিকা গ্রহন করে তবে ইয়াবা ব্যবসা কখনো বন্ধ হবে না। এ বিষয়ে এলাকাবাসী পুলিশের উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট