চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

চট্টগ্রামের গৌরব মুসলিম চৌধুরী ও একটি বিসিএস পরিবার

নাসিরুদ্দিন চৌধুরী

১১ জানুয়ারি, ২০২০ | ৩:১৩ পূর্বাহ্ণ

ব্রি টিশ আমলে চট্টগ্রা মের সর্বশেষ ডিএম এফ করি মের একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠান হচ্ছিলো স্টেশন রোডের হোটেল মিসকায়। রফিক মিয়া, খান সাহেব আবদুল হক দোভাষ, খান বাহাদুর ফরিদ আহমদ চৌধুরী, ইব্রাহিম মিয়া, খান বাহাদুর মিয়া খান সওদাগর, সুলতান মিয়া, ইসলাম খানসহ চট্টগ্রামের সব বড় বড় সওদাগর, জমিদার এবং রইস আদমিরা উপস্থিত। ব্রিটিশ আমলে জেলা শাসককে বলা হতো ডিএম বা ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। ১৯৫৮ সালে জেনারেল আইয়ুব খান পাকিস্তানের ক্ষমতা দখল করার পর জেলা শাসকের নয়া উপাধি প্রবর্তন করলেন ডিসি বা ডেপুটি কমিশনার। আইয়ুব চেয়ারম্যান ও কাউন্সিলের খুব ভক্ত ছিলেন। এটাও হয়তো তাঁর মনে হয়েছিলো যে, প্রেসিডেন্ট তো একটা দেশে একজনই থাকেন, সেটা তো তিনি আছেনই। জেলা বোর্ড এবং ইউনিয়ন বোর্ডের বেটারা আবার কিসের প্রেসিডেন্ট? ব্রিটিশ আমলের প্রেসিডেন্ট, জেলা বোর্ড, ইউনিয়ন বোর্ড-এসব বোর্ড ফোর্ড তাঁর সহ্য হলো না, তিনি মুহূর্তেই তাবৎ বোর্ডকে কাউন্সিল বানিয়ে দিলেন। ইউনিয়ন বোর্ড, জেলা বোর্ডকে করলেন ইউনিয়ন কাউন্সিল ও ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিল; আর প্রেসিডেন্টকে করলেন চেয়ারম্যান, যেমন ইউনিয়ন কাউন্সিল চেয়ারম্যান ও ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিল চেয়ারম্যান।

তো এফ. করিম সাহেব সেই ব্রিটিশ জমানারই সর্বশেষ ডি.এম ছিলেন। জহুর আহমদ চৌধুরী তাঁর সম্মানে মিসকায় ওই সংবর্ধনার আয়োজন করেছিলেন। কারণ পার্টিশনের পূর্বে এফ করিম যখন ডিএম, তখন জহুর আহমদ চৌধুরী কোন বিপদে পড়েছিলেন। তিনি মওলানা নুরুল ইসলাম জেহাদীকে পাঠিয়েছিলেন ডিএম (তখন ডিসি হিল হয়নি।) হিলে এফ করিমের সঙ্গে দেখা করার জন্য। জহুর আহমদ চৌধুরীর বিপদের কথা শুনে এফ করিম সঙ্গে সঙ্গে এক টেলিফোনে তাঁর মুস্কিল আসান করে দিলেন। তাঁর উপকারের কথা মনে ছিলো জহুর আহমদ চৌধুরীর। এফ. করিমও তাঁকে জানিয়েছিলেন তাঁর চট্টগ্রাম আগমনের কথা। জহুর আহমদ চৌধুরী ভাবলেন এফ. করিম সাহেবের কাছে তো ঋণী হয়ে আছি, ঋণ শোধের এই তো সুযোগ। কিন্তু সমস্যা হল সংবর্ধনা তো দেবেন, টাকা পাবেন কোথায়, তিনি তো ‘সর্বহারা’ মানুষ। ভেবে যখন কুলকিনারা করতে পারছেন না, তখনই মাথায় এক বুদ্ধি খেলে গেল। তাঁর এক নতুন শাগরিদ জুটেছে। আনন্দীপুরের হারিছ। তিনি চট্টগ্রামের এক কিংবদন্তী পুরুষ মফজল কেরানীর আত্মীয় এবং তাঁর বাড়িরই ছেলে। শোনা যায়, মফজল কেরানী লাখের বাতি জ্বালিয়েছিলেন এবং ১০০ টাকার নোট দিয়ে ‘টিক্কা’ বানিয়ে তা পুড়িয়ে তামাক খেতেন।

জহুর আহমদ চৌধুরী হারিছকে কানে কানে ফুসমন্তর দিলেন। তুমি আমীর হোসেন দোভাষের কাছে যাও। তাকে বলো এফ. করিমের সংবর্ধনায় রফিক মিয়া আসবে। আপনি এই সুযোগে রফিক মিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করতে পারবেন। জহুর মিয়া মধ্যস্থতা করবেন, কিন্তু সেজন্য সংবর্ধনার খরচাটা আপনাকে দিতে হবে। দোভাষ টাকা দিলেন। হারিছ যখন সে টাকা জহুর আহমদ চৌধুরীর হাতে এনে দিলেন, তখন তিনি যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেলেন। তিনি লেগে গেলেন সংবর্ধনার আয়োজনে, তবে হারিছকে সাবধান করে দিলেন, তুমি মিসকায় গেলে দোভাষের সামনে যাবে না। বুড়ার হাতে একটা লাঠি থাকে। এটা বলার কারণ হচ্ছে, রফিক মিয়াকে আমীর হোসেন দোভাষের কথা বলার সাহস হয়নি জহুর আহমদ চৌধুরীর। দোভাষ যখন দেখবেন জহুর আহমদ চৌধুরী রফিক মিয়ার সঙ্গে তাঁর আলাপ করিয়ে দিতে পারেননি, তখন তিনি ক্ষেপে গিয়ে হারিছকে সামনে পেলে লাঠি নিয়ে মারতে তেড়ে আসবেন।

হারিছ সন্ধ্যায় অনুষ্ঠানে গিয়ে দেখেন আমীর হোসেন দোভাষ একটি চেয়ারে বসে ঝিমুচ্ছেন, হাতে লাঠি আছে। ভালোয় ভালোয় অনুষ্ঠান হয়ে যায়। রফিক মিয়াকে দোভাষের কথা বলা সম্ভব হয় নি। আমীর হোসেন দোভাষও ঝিমাতে ঝিমাতে সময় কাটিয়ে দিয়েছেন। ঝিমানোর কারণ হচ্ছে তখন চাটগাঁর মানুষ, বিশেষ করে বুড়োবুড়িরা আফিম খেতো। দোভাষও আফিমের গুলি খেয়েছিলেন। রফিক মিয়ার সঙ্গে গোলমালের কারণ হচ্ছে আমীর হোসেন দোভাষের ছেলে আবদুর রহমান দোভাষ, রফিক মিয়ার নাতনি, মঞ্জু মিয়ার (ব্যারিস্টার সাইফুদ্দিন আহমদ সিদ্দিকী) মেয়ের সঙ্গে প্রেম করে তাকে ঘর থেকে বের করে নিয়ে গেছে এবং বিয়েও করে ফেলেছে। রফিক মিয়ার অহংকারে এটা লেগেছিলো। কারণ, রফিক মিয়া বা শেখ রফিউদ্দিন সিদ্দিকী তখন চট্টগ্রামের শীর্ষ ধনী, রেয়াজউদ্দিন বাজারের মালিক। এফ. করিম ছিলেন ভারতের উত্তর প্রদেশের নবাব ইসমাইল খানের বংশধর। তাঁর বংশধরদের মধ্যে ১৭ জন আইসিএস অফিসার হয়েছিলো। বর্তমানে যেখানে আলমাস সিনেমা হল আছে, সেই জায়গাটি ছিলো এফ. করিমের পরিবারের মালিকানাধীন ভূ-সম্পত্তি। আইসিএস পরিবার না হলেও কানুনগোপাড়ার দত্ত পরিবার উজ্জ্বলতর একটি পরিবার। সে পরিবারের ১১ সদস্যই সর্বোচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশের এক একটি রতœ স্বরূপ পরিগণিত হয়েছিলেন। তাদের মাকে ব্রিটিশ সরকার ‘রতœগর্ভা’ উপাধি দিয়েছিলেন। বাংলাদেশে ভারতের প্রথম হাইকমিশনার সুবিমল দত্ত, অন্যতম দত্তভ্রাতা, তিনি আইসিএস ছিলেন। অন্য ভাইয়েরাও কেউ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আর কেউ অংকের জাদুকর, কেউবা বড় ডাক্তার। ব্রিটিশ আমলের আইসিএস পাকিস্তান আমলে হলো সিএসপি এবং বাংলাদেশ আমলে বিসিএস। ব্রিটিশ শাসিত বাংলায়ও একটি সিভিল সার্ভিস ছিলো, যার নাম বিসিএস বা বেঙ্গল সিভিল সার্ভিস। এই বিসিএসকে পূর্ব পাকিস্তানের ইপিসিএস-এর সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে।

এফ. করিমের পরিবারের সমান না হলেও আমরা বর্তমানে চট্টগ্রামে এমন একটি পরিবারের খোঁজ পেয়েছি, যে পরিবারের তিনজন সদস্যই বিসিএস। পরিবারটির আর কোন পুরুষ সদস্য নেই। থাকলে হয়তো তিনিও বিসিএস অফিসার হতেন। এই পরিবারটি হচ্ছে রাউজান উপজেলার কদলপুর গ্রামের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ নুরুল আলম চৌধুরীর পরিবার। তাঁর তিন পুত্রই বিসিএস ক্যাডার- দু’জন উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তা এবং একজন শিক্ষাবিদ।
মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, সিএজি : নুরুল আলম চৌধুরীর জ্যেষ্ঠ পুত্র মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী বর্তমানে কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল। এটি একটি সাংবিধানিক পদ। চট্টগ্রামের আর কোন লোক কখনো এত উঁচু পদে পৌঁছুতে পেরেছিলেন কিনা জানি না। অবশ্য মনীষী আব্দুল করিম সাহিত্যবিশারদের বংশেরও একজন অধস্তন পুরুষ, আহমদ কায়কাউস বর্তমানে সিনিয়র সচিব এবং মুখ্য সচিব।

মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরীর জন্ম ১৯৫৯ সালের ২৪ অক্টোবর। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হিসাববিজ্ঞান বিষয়ে বিকম (সম্মান) ও এমকম এবং যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিন্যান্স অ্যান্ড অ্যাকাউন্টিংয়ে ডিসটিংশনসহ এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি আইএমএফ ইনস্টিটিউট এবং বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা, ঋণ ব্যবস্থাপনা ও সামষ্টিক অর্থনীতি বিষয়ে পেশাগত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৮৪ সালে বিসিএস অডিট এন্ড একাউন্টস ক্যাডারে সরকারি চাকরিতে যোগদান করে কন্ট্রোলার জেনারেল অব অ্যাকাউন্টস, কন্ট্রোলার জেনারেল ডিফেন্স ফাইন্যান্স এবং অর্থ বিভাগের উপসচিব, যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী সরকারের আর্থিক সংস্কার কর্মসূচি, সরকার পদ্ধতি, বাজেট, আর্থিক হিসাব এবং অডিট ব্যবস্থাপনায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন এবং বাংলাদেশে প্রথম পিপিপি নীতিমালা প্রণয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। পাবলিক ফাইন্যানশিয়াল ম্যানেজমেন্ট (পিএফএম) সংস্কার কর্মসূচির পরামর্শক হিসেবে বিশ্বব্যাংক ও ডিএফআইডি প্রকল্পেও কাজ করেছেন তিনি। জনাব চৌধুরী অতিরিক্ত সচিব থাকাকালীন অনলাইন বেতন নির্ধারণ এবং সরকারি কর্মচারী ও পেনশনার ডাটাবেইজ তৈরির জন্য ‘জনপ্রশাসন স্বর্ণপদক ২০১৭’ লাভ করেন।
তিনি বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক, সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড এবং ঢাকা বিআরটি কোম্পানি লিমিটেডের সরকার মনোনীত পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সার্ক ডেভলাপমেন্ট ফান্ড এর পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন, যার হেড কোয়ার্টার ভুটানের থিম্পুতে অবস্থিত। এছাড়া আইসিএমএবি এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের কাউন্সিল মেম্বার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সরকারি মালিকানাধীন বৃহত্তম অবকাঠামো আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিআইএএফএলের প্রথম এমডি এবং সিইও ছিলেন। মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী সরকারি ও ব্যক্তিগত সফরে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, সুইডেন, ভারত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, কম্বোডিয়া, নেপাল, জাপান, ভুটান, সিঙ্গাপুর, ফিলিপাইন, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, চীন, হংকং, মিয়ানমার, কেনিয়া, মরক্কো ভ্রমণ করেছেন। মুসলিম চৌধুরীর স্ত্রী সাবিনা হক একজন শিক্ষিকা। তিনি দুই সন্তানের গর্বিত পিতা।

মোহাম্মদ মোহসিন চৌধুরী : নুরুল আলম চৌধুরীর দ্বিতীয় পুত্র মুহাম্মদ মোহসিন চৌধুরীর চৌধুরী ১৯৬৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হিসাববিজ্ঞানে বি. কম (অনার্স) ও এম.কম ডিগ্রি লাভ করেন। চাকরি জীবনের প্রথমে তিনি সোনালী ব্যাংক ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে চাকরি করেন। পরে বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৯৩ সালে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে যোগদান করেন। তিনি সহকারী কমিশনার ও ম্যাজিস্ট্রেট, এনডিসি, ইউএনও, এডিএমসহ বিভিন্ন পদে চাকরি করেন। বর্তমানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব হিসেবে কর্মরত আছেন। মোহসিন চৌধুরীর ভদ্রতা, সততা, বিনয়, ন¤্রতা, অমায়িক ব্যবহার এবং পরোপকারের জন্য বিশেষ প্রসিদ্ধি রয়েছে।

মোহাম্মদ মোজাহিদুল ইসলাম চৌধুরী : শিক্ষাবিদ নুরুল আলম চৌধুরীর তৃতীয় ও কনিষ্ঠ পুত্র মোহাম্মদ মোজাহিদুল ইসলাম চৌধুরী পিতার আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। তাঁর সামনেও বিসিএস অফিসার হয়ে বড় দু’ভাইয়ের মত প্রশাসনের লোভনীয় চাকরিতে যোগদান করে সরকারের পদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ে তোলার সুযোগ ছিল। তিনিও বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হন বটে কিন্তু জনপ্রশাসনের চাকরি তাঁকে আকর্ষণ করতে পারেনি। ১৯৬৮ সালের ১ জানুয়ারি মোহাম্মদ মোজাহিদুল ইসলাম চৌধুরীর জন্ম। তিনি কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামিক স্টাডিজ-এ বিএ অনার্স ও এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি ১৯৯৫ সালে শিক্ষা ক্যাডারে যোগদান করেন এবং বিভিন্ন সরকারি কলেজে প্রভাষক, সহকারী অধ্যাপক হিসেবে শিক্ষকতার পর নিজ জেলা চট্টগ্রামে বদলি হয়ে এসে ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রামের প্রাচীনতম কলেজটির উপাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের শরীয়াহ্ বোর্ডের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। শিক্ষাব্রতী নুরুল চৌধুরীর দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে ফজিলতুন্নেছা গৃহিণী। ছোট মেয়ে জেবুন্নেছা বেগম মাস্টার্স করে নগরীর চান্দগাঁও থানাধীন এখলাছুর রহমান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন।
বংশকথা : মুসলিম চৌধুরী, মোহসিন চৌধুরী ও মোজাহিদুল ইসলাম চৌধুরী-কদলপুর এলাকাটি যাঁর নামে ‘কদলপুর’ নামকরণ হয়েছে, সেই কদল খান দেওয়ানের বংশেরই উত্তরপুরুষ। এই বংশ বহু কৃতী পুরুষের জন্মে ধন্য হয়েছে। সমগ্র এলাকাটিতে কদল খানের বংশধরদের স্থাপিত নানা কীর্তি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আছে বড় বড় দিঘী, হাট-বাজার, কবরস্থান এবং বহু পুরনো বাড়ির ধ্বংসাবশেষ। কদল খানের প্রপৌত্র শেখ দৌলত গাজী ছিলেন ফার্সি সাহিত্যের সুপ-িত এবং একজন উঁচুস্তরের আধ্যাত্মিক সাধক। ফতেহ্ আলী চৌধুরী বাড়ির পশ্চিম-উত্তরে পুরনো কবরস্থানে তিনি এবং তাঁর সহধর্মিনীর কবর আছে, যেটি সম্প্রতি সংস্কার করা হয়েছে। শেখ দৌলত গাজীর পৌত্র শেখ ফতেহ্ আলী চৌধুরী ছিলেন নবাবি আমলের একজন নামকরা জমিদার। জনসাধারণের কল্যাণে তিনি বিভিন্ন ভূমিকা রাখেন। সে সময়ে খাওয়ার পানির একমাত্র উৎস ছিল দিঘি বা পুকুর। তিনি তাঁর পিতার স্মৃতি রক্ষার্থে এবং সাধারণের পানীয় জলের সুবিধার্থে কমর আলী চৌধুরী দিঘি (আশরাফ আলী চৌধুরী হাট-সংলগ্ন) ও শাহী মসজিদের পাশে আরেকটি দিঘি খনন করেন- যেটি ফতেহ্ আলী চৌধুরী দিঘি নামে পরিচিত।

ফতেহ আলী চৌধুরীর পরিবারের ষষ্ঠ অধঃস্তন পুরুষ নুরুল আলম চৌধুরী। তাঁর জন্ম ১৯২৮ সালে। তাঁর পিতা সুলতান আহমদ চৌধুরীও ছিলেন জমিদার। জমিদারি স্বত্ব বিলুপ্ত হওয়ার পরও যে সহায়-সম্পদ তাঁদের পরিবারে ছিল তা দিয়ে অনায়াসে পরিবার নিয়ে জীবনযাপন করতে পারতেন তিনি ও তাঁর সন্তানেরা। কিন্তু তিনি সে আমলে শিক্ষার প্রতি অনুরক্ত ছিলেন এবং সন্তানদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করে তুলতে চেয়েছিলেন। ফলে সেই ব্রিটিশ আমলেই তাঁর তিন সন্তান বদিউল আলম চৌধুরী, নুরুল আলম চৌধুরী ও সফিউল আলম চৌধুরী লেখাপড়া করে স্ব-স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছিলেন।
মুসলিম, মোহসিন ও মোজাহিদ যে আজ কৃতিত্বপূর্ণ জীবনের অধিকারী হয়েছেন, তার পেছনে তাঁদের মায়ের ভূমিকাও কম নয়। তাঁদের মায়ের নাম খালেদা বেগম। তিনি চট্টগ্রামের সম্ভ্রান্ত লোকের বাসস্থান হাওলা পরগনার বিশিষ্ট আলেম হযরত মওলানা আবদুল হকের কন্যা।

নাসিরুদ্দিন চৌধুরী প্রবীণ সাংবাদিক, লেখক ও বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট