চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

রণক্ষেত্র দিল্লি, মমতা ফের সোচ্চার

নিজস্ব প্রতিবেদক হ ঢাকা অফিস

১৮ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৪:২১ পূর্বাহ্ণ

ভারতে বর্ণবাদী ও মুসলিমবিদ্বেষী নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাশের পর দেশজুড়ে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন রাজ্যে বিক্ষোভের মধ্যে দিল্লিতে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ চড়াও হওয়ার পর তা আরও ব্যাপক আকার নিয়েছে, নতুন নতুন শহরে ছড়িয়েছে বিক্ষোভ। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্য মতে, গতকাল মঙ্গলবার দিল্লির সিলামপুর এলাকায় ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

আন্দোলনকারীরা একটি পুলিশ স্টেশন ও ৭টি রেল স্টেশনে আগুন ধরিয়ে দেয়। বাস ও গাড়িতেও ভাঙচুর চালায় তারা। এতে পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ছে পুলিশ। দিল্লি পুলিশ বলছে, গোটা পরিস্থিতির সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। এছাড়া দেশিটির মুম্বাই, হায়দ্রাবাদ ও কলকাতাসহ বেশ কিছু শহরে ব্যাপক প্রতিবাদের খবর পাওয়া গেছে। প্রতিবাদে মুম্বাইয়ে টাটা ইন্সটিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্সের

শিক্ষার্থীরা প্ল্যাকার্ড হাতে রাস্তায় নেমেছেন। জানা যায়, বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের প্ল্যাকার্ডে লেখা রয়েছে, লেখা, আপনারা যখন ঘুমোচ্ছেন, তখন দেশ মরতে বসেছে। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স, বেঙ্গালুরুর ছাত্রছাত্রীরা কলেজ ক্যাম্পাসে দাঁড়িয়ে সংবিধানের প্রস্তাবনা পাঠ করেন। আইআইএম আহমদাবাদে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভরত অর্ধশত শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ। এছাড়াও আইআইএম বেঙ্গালুরুর শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নাগরিকত্ব আইন ও জামিয়া মিলিয়ার ঘটনা নিয়ে মোদীকে চিঠি লিখেছেন। রাস্তায় নামেন হায়দরাবাদের মৌলানা আজাদ উর্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। কানপুর, বম্বে, মাদ্রাজ আইআইটির শিক্ষার্থীরা আজ ক্লাস বয়কট করেন।

এদিকে নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে গতকাল ফের রাজপথে নেমেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মিছিল শুরুর আগে মমতা বলেন, নাগরিকত্ব আইন, জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকার বিরুদ্ধে যে সব গণতান্ত্রিক আন্দোলন হচ্ছে, সেগুলোতে সহমর্মিতা জানাই। পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি হতে দেব না। কাউকে বাংলা ছেড়ে যেতে দেব না। অন্যদিকে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের ফলে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এদেশের কোনও নাগরিকের ওপর কোনও প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। একই সঙ্গে এদিন কংগ্রেস মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। কংগ্রেসের দিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে মোদি বলেন, আমি কংগ্রেস ও তার সহযোগীদের খোলা চ্যালেঞ্জ করছি। ক্ষমতা থাকে তো ঘোষণা করুন যে আপনারা সমস্ত পাকিস্তানি নাগরিককে ভারতের নাগরিকত্ব দেবেন। একবার একথা বললেই তাদের কড়া মূল্য চোকাতে হবে। একই সঙ্গে মোদির চ্যালেঞ্জ, জম্মু ও কাশ্মীরেও আর কোনওদিন সংবিধানের ৩৭০ ধারা প্রয়োগ করতে পারবে না কংগ্রেস। তিনি বলেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনকে হাতিয়ার করে মুসলিমদের ভয় দেখাচ্ছে বিরোধীরা। দেশের মুসলিমদের আশ্বস্ত করে মোদি বলেন, মুসলিমদের ভয় দেখাতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে মিথ্যা প্রচার করছে কংগ্রেস। আমি এই আইন ভারতীয় নাগরিকদের ওপর কোনও প্রভাব ফেলবে না। আবার বলছি, এই আইনে কোনও ভারতীয় নাগরিক কোনও ভাবে প্রভাবিত হবেন না।

নতুন নাগরিকত্ব আইনে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে প্রতিবেশী বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে যেসব অমুসলিম শরণার্থী ভারতে গেছেন; তারা দেশটির নাগরিকত্ব পাবেন। সমালোচকরা বলছেন, এই আইনে মুসলিম শরণার্থীদের ব্যাপারে একই ধরনের বিধান রাখা হয়নি; যা ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিকে দুর্বল করে দিয়েছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট