চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

লাল-সবুজের অ্যাথলেটদের অভিনন্দন এসএ গেমসে বাংলাদেশের অনন্য সাফল্য

১১ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ২:৩১ পূর্বাহ্ণ

দেশ ও দেশের বাইরে এসএ গেমসে এতদিন বাংলাদেশের সেরা সাফল্য ছিল ১৮টি স্বর্ণ জয়। ২০১০ খ্রিস্টাব্দের আসরে নিজেদের সর্বোচ্চ ১৮ স্বর্ণ জিতেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এবারের আসরে সোমবারের মধ্যেই সে রেকর্ড ভেঙে দক্ষিণ এশিয়ার অলিম্পিক খ্যাত এ টুর্নামেন্টে ১৯টি স্বর্ণ নিজেদের দখলে নিয়ে নতুন অধ্যায়ে নাম লিখিয়েছেন লাল-সবুজের অ্যাথলেটরা। এটি আমাদের জন্যে সবচেয়ে বড় আনন্দের সংবাদ। লাল-সবুজের অ্যাথলেটদের এ সাফল্যে আবারো বিশ^বাসীর দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়েছে বাংলাদেশের দিকে। সমীহ ও সম্মানের সাথেই উচ্চারিত হচ্ছে বাংলাদেশের নাম। এমন সাফল্য বয়ে আনার জন্যে লাল-সবুজের অ্যাথলেটদের প্রাণঢালা অভিনন্দন। আমাদের বিশ^াস সাফল্যের এই ধারা অব্যাহত থাকবে। আগামিতে আরো আরো সাফল্য ধরা দেবে দেশের অ্যাথলেটদের হাতে।

এ নিয়ে ত্রয়োদশবারের মতো নেপালের তিন স্থানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এসএ গেমস। এই ক্রীড়া আসরের প্রথম আসরটিরও আয়োজক ছিল এই নেপালই, ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে। তখন থেকে সর্বশেষ ২০১৬ আসর পর্যন্ত মোট ১২ আসর খেলে বাংলাদেশ জিতেছিল ৬৭ স্বর্ণ। বিদেশের মাটিতে ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে মাদ্রাজে এক আসরে সর্বোচ্চ ৭ স্বর্ণ জিতেছিল। আর ২০১০ খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় দেশের মাটিতে সবচেয়ে বেশি জিতেছিল ১৮ স্বর্ণ। নিজেদের এই দুটি রেকর্ডই এবারের আসরে ভেঙ্গে দিয়েছে লাল-সবুজের ক্রীড়াবিদরা। সোমবার পুরুষ টি২০ ক্রিকেটের ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে স্বর্ণপদক জেতে বাংলাদেশ। এর ফলে বাংলাদেশের স্বর্ণপদকের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৯। যা এসএ গেমসের ইতিহাসে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ প্রাপ্তি। উল্লেখ্য, সোমবার সকালেই আর্চারির কম্পাউন্ড এককের ফাইনালে শ্রীলঙ্কার প্রতিযোগীকে ১৪২-১৩৪ স্কোরে হারিয়ে বাংলাদেশকে প্রথম স্বর্ণ পদক এনে দিয়েছিলেন সুমা বিশ্বাস। এরপর সোহেল রানা হারিয়ে দেন পুরুষ এককের ফাইনালে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর ১৩৭-১৩৬ স্কোরে ভুটানের প্রতিযোগীকে। সে রেশ থাকতেই মেয়েদের রিকার্ভ কম্পাউন্ডের এককে ভুটানের প্রতিযোগী দেমা সোনমের বিপক্ষে ৭-৩ সেট জিতেন ইতি খাতুন। এরপর রোমান সানা পুরুষ রিকার্ভ এককের ফাইনালে ভুটানের কিনলে তিসেরাংকে ৭-১ সেট পয়েন্টে উড়িয়ে দিয়ে ১০ ইভেন্টেই সেরা হওয়ার বৃত্ত পূরণ করে নেয় বাংলাদেশ। দুপুরে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলকে ৭ উইকেটে হারিয়ে দিনের পঞ্চম স্বর্ণ জিতে এসএ গেমসে নিজেদের ইতিহাসে অনন্য উচ্চতায় ওঠে বাংলাদেশ। ১৯টি সোনার পদকের মধ্যে আর্চারি থেকে এসেছে ১০টি সোনার পদক। প্রসঙ্গত, ফুটবল, সাঁতার, অ্যাথলেটিকস, শুটিং, গলফসহ আরো একাধিক ডিসিপ্লিনে সোনার পদক জয়ের প্রত্যাশা থাকলে তা অর্জিত হয়নি। কেনো হয়নি তার চুলছেড়া বিশ্লেষণ হওয়া দরকার, যাতে ভুল শোধরে আগামির পথ মসৃণ করা যায়। আবার দেখা যাচ্ছে যেসব ডিসিপ্লিনে তেমন আশা ছিল না, সেসব ক্ষেত্রে ভালো ফল এসেছে। যেমন- ফেন্সিংয়ে সোনার পদক আসবে আশা ছিল না।

তারা সোনার পদক উপহার দিয়েছেন। তায়কোয়ান্দোতে প্রথম দিনই সোনার পদক উপহার দিয়েছেন দিপু চাকমা। কারাতে হতে এসেছে তিনটি পদক। আর্চারিতে সোনার পদকের আশা থাকলেও এতটা পাওয়ার আশা ছিল না। ৩৫ বছরের গেমস ইতিহাসে এবারই প্রথম কোনো নারী ক্রীড়াবিদ তিনটি সোনার পদক জয় করেছেন। এই আর্চার ১৪ বছর বয়সি ইতি খাতুন। তিনি বিভিন্ন ইভেন্টে তিনটি সোনা জয় করেছেন। একটি ইভেন্টে এই ইতি ভুটানের এমন এক আর্চারকে হারিয়েছেন যিনি এরই মধ্যে টোকিও অলিম্পিক গেমসে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। অথচ এই ইতিকে তার বাবা বাল্যবিবাহ দিতে চেয়েছিলেন। সেখান থেকে নিজেকে রক্ষা করেছিল ইতি। এরকম মেধাবী ও জয়ের জন্যে সর্বোচ্চ চেষ্টাকারীদের পুরস্কৃত করা দরকার। মেধাবীরা ক্রীড়াবিদরা প্রয়োজনীয় পৃষ্টপোষকতা পেলে দেশের ক্রীড়াঙ্গন আরো সমৃদ্ধ হবে। সাফল্যের বহর বাড়বে দ্রুত।

এসএ গেমসে যাত্রার আগেই বাংলাদেশ দল নতুন ইতিহাস গড়ার ইঙ্গিত দিয়েছিল। তারা মন-প্রাণ উজাড় করে দিয়েছেন দেশের মর্যাদা অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে। তারা সফল হয়েছেন। তবে এখানেই শেষ নয়। সাফল্যের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে। এ জন্যে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপই নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ যে অপার সম্ভাবনা জাগিয়েছে ক্রীড়াঙ্গনে তা ভবিষ্যতে কেবল বাড়বেই। এসএ গেমসে আমরা ইতিহাস গড়েছি। ভবিষ্যতে আরও ভালো করার চ্যালেঞ্জের জন্য এবার আমাদের প্রস্তুত হতে হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট