চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪

হাসিনা-মমতা বৈঠক কেটে যাক তিস্তা চুক্তির অচলাবস্থা

২৫ নভেম্বর, ২০১৯ | ১:৫৫ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরো এক ধাপ এগিয়ে নিলো ঐতিহাসিক ডে-নাইট ও গোলাপি বলের ক্রিকেট টেস্ট। শুক্রবার কলকাতা ইডেন গার্ডেন মাঠে তুমুল হর্ষধ্বনির মধ্যে দড়ি টেনে ঘণ্টা বাজিয়ে বাংলাদেশ-ভারতের ঐতিহাসিক দিবারাত্রির টেস্ট ম্যাচ উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। সেই ঘণ্টাধ্বনিতেই মাঠে গড়ায় গোলাপি বলে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রথম দিবারাত্রির টেস্ট। উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্রিকেট বাংলাদেশ ও ভারতের জনগণের বন্ধনকে আরো গভীর করেছে উল্লেখ করে তাঁর সরকারের গৃহীত বাংলাদেশ ক্রিকেটের উন্নয়নমূলক পদক্ষেপে ভারতকে সব সময় পাশে পাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির দ্বিপাক্ষিক বৈঠকও হয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা না থাকলেও ওই বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক নানা ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিস্তার পানির ব্যাপারে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা জানা যায়নি। তবে আশা করা হচ্ছে, ব্যক্তিগত পর্যায়ের হলেও আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর হৃদ্যতাপূর্ণ বৈঠক তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির পথ মসৃণ করে দেবে।

ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। সুপ্রাচীন কাল থেকেই এই জনপদের জনগণের সাথে ভারতের সাংস্কৃতিক এবং আত্মিক সম্পর্ক বিদ্যমান। একাত্তরে এই সম্পর্ক আরো মধুর হয়েছে। দেশটি কোনো ধরনের শর্ত ছাড়াই আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সর্বাত্মক সহায়তা করেছে। যুদ্ধে সৈন্য দিয়ে, অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করেছে। আমাদের এক কোটির বেশি নাগরিককে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় দিয়েছে। পাশাপাশি বহির্বিশ্বে আমাদের পক্ষে দূতিয়ালি করেছে। এতে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় ও স্বাধীনতা অর্জনের পথকে মসৃণ ও ত্বরান্বিত করেছে। স্বাধীনতার পরও ভারত আমাদের নানাভাবে সহযোগিতা করেছে। এ জন্য আমরা সবসময় দেশটির জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞ। দেশটির জনগণের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ঐতিহাসিক ভাবেই আত্মিক।

ফলে আমরা সবসময় পরস্পরের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেই। পচাত্তরের পট পরিবর্তনের পর কিছুটা ম্লান হলেও এখন বঙ্গবন্ধুকন্যার আমলে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা ছিটমহল সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান হয়েছে। বঙ্গোপসাগরের জলসীমা নির্ধারণ হয়েছে। আলোচনা টেবিলে সমাধান হয়েছে বহু দ্বিপাক্ষিক সমস্যারও। তবে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সদিচ্ছা থাকলেও পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের নেতিবাচক মনোভাবের কারণে এতো দিন তিস্তার পানি বন্টনের চুক্তি সম্পাদন সম্ভব হয়নি। ঐতিহাসিক ডে-নাইট ও গোলাপি বলের ক্রিকেট টেস্টকে কেন্দ্র করে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর পশ্চিমবঙ্গ সফর ও সেখানকার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে হৃদ্যতাপূর্ণ বৈঠকের পর তিস্তার পানি বন্টন চুক্তির দ্বার উন্মুক্ত হবে নিশ্চয়ই।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘ভারতের সঙ্গে আমাদের একটি বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। এই সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক আমাদের হৃদয়ের। এই বন্ধুত্বের বন্ধন সব সময় দৃঢ় এবং চিরস্থায়ী থাকবে।’ প্রধানমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন, বঙ্গবন্ধু প্রদর্শিত পথই বর্তমানে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের মূলভিত্তি। সময়ের বিবর্তনে আমাদের এ সম্পর্ক বিশ্ববাসীর নিকট সুপ্রতিবেশীসুলভ সম্পর্কের এক আদর্শ হিসেবে প্রতিভাত হয়েছে। ক্রিকেট এই সম্পর্ককে আরো সুদূরপ্রসারী করেছে। এই ক্রিকেটকে কেন্দ্র করেই পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সাথে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর হৃদ্যতাপূর্ণ বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে কয়েকটি বিষয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপের ব্যাপারেও মতৈক্য হয়েছে। আমরা আশা করবো এ পথ ধরেই অবসান ঘটবে তিস্তা প্রশ্নে অচলাবস্থার।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট