চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ঘুম ভাঙল রেলওয়ের ভূ-সম্পদ বিভাগের

রায়ের আগে আস্তানায় ঢুকতে পারবেন না ‘শাহেনশাহ’ শাহ আলম

নাজিম মুহাম্মদ

২৯ অক্টোবর, ২০১৯ | ৪:১০ পূর্বাহ্ণ

মাছ চাষের কথা বলে বাংলাদেশ রেলওয়ে ট্রেনিং একাডেমিতে প্রায় ২৬ একর জলাশয় লিজ নিয়েছিলেন রেলের ‘শাহেনশাহ’ শাহ আলম। হালিশহরে রেলের এ ট্রেনিং একাডেমি অবস্থিত। পাঁচ বছরের জন্য ৪৫ লাখ টাকা ভাড়ায় নেয়া এ জলাশয়ে বাণিজ্যিকভাব কোন মাছ চাষ করা হয়নি। ব্যবসায়ীক অংশীদার যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরীর হাতে জলাশয়টি তুলে দিয়েছিলেন। কথা ছিল কোন অবস্থাতেই লাইসেন্সকৃত জলাশয় এলাকায় অবৈধ দখলদার অনুপ্রবেশ করতে পারবে না। অথচ সেখানে নির্মাণ করা হয় একাধিক বাংলোঘর, লাগানো হয় এয়ারকন্ডিশন, তিন একরের বেশি জায়গাজুড়ে নির্মাণ করা হয় শখের পশু পাখির শেড। জলাশয়ের পাড়ে লাগানো হয়েছে দামী টাইলস। লাগানো হয়েছে দৃষ্টিনন্দন বাতি। দখল করা হয় ট্রেনিং একাডেমির আশপাশের আরো ২৮টি সেমিপাকা ঘর। রীতিমতো লোহার গেইট লাগিয়ে সেখানে সিলভার জুবলি মৎস্য হ্যাচারি নাম দিয়ে লোক দেখানো একটি ব্যানার টাঙানো হয়।

শর্তভঙ্গ করার কারণে গতকাল সোমবার ট্রেনিং একাডেমির সেই ২৬ একর জলাশয়ের গেইটে তালা লাগিয়ে দিয়েছে রেলের ভূ সম্পদ বিভাগ। মোতায়েন করা হয়েছে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী। মামলার রায়ে জিতলেই সেখানে প্রবেশ করতে পারবেন শাহ আলম। এর আগে জলাশয়টির লিজের লাইসেন্স বাতিল করে রেল।

তবে শাহ আলমের দাবি-সেখানে এতগুলো বাংলোঘর কে নির্মাণ করেছেন তিনি তা জানেন না। গত তিন বছরের বেশি সময় ধরে তিন সেখানে যাননি বলেও দাবি করেন।

রেলওয়ে ট্রেনিং একাডেমি : ২০১৫ সালের ৭ এপ্রিল থেকে ২০২০ সালের ৬ এপ্রিল পর্যন্ত পাঁচ বছরের জন্য ৪৫ লাখ ১০ হাজার টাকা ভাড়ায় হালিশহর রেলওয়ে ট্রেনিং একাডেমিতে ২৫ দশমিক ৯০ একর জলাশয় ও আশপাশের ভূমি লিজ নেয় শাহ আলম। রেলওয়ে ট্রেনিং একাডেমিতে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা রেক্টর মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন রেলের এ বিপুল জলাশয় বছরে শাহআলমকে লিজ দেন। সিলভার জুবিলী লিমিটেডের (৭৮৭/এ এফ আহমদ কমপ্লেক্সে, হোটেল ইডেন (তৃতীয় তলা) স্টেশন রোড।) নামে এ জলাশয় লিজ নেন তিনি।

অভিযোগ উঠেছে আর্থিক সুবিধা নিয়ে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা রেক্টর আনোয়ার হোসেন ভু-সম্পদ বিভাগকে না জানিয়ে রেলের এ মূল্যবান সম্পদ লিজ দিয়ে দেন। এ সংক্রান্ত একটি চুক্তিপত্রও সম্পাদন করেন।
চুক্তির ২১টি শর্তের মধ্যে পাঁচটি শর্ত ভঙ্গ করেছেন শাহ আলম। চুক্তির নিয়ম না মানায় শর্ত মোতাবেক কারণ দর্শানোর নোটিশ দিলে রেলের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা ঠুকে দেন শাহ আলম।

চুক্তিপত্রে বলা হয়েছে, কোন অবস্থাতেই লাইসেন্সকৃত জায়গায় অবৈধ দখলদার অনুপ্রবেশ করতে পারবে না। এ পুকুর সংলগ্ন ভূমি হতে মাছ চাষ বা অন্য কোন কাজে ব্যবহারের জন্য অন্য কাউকে অনুমতি দিতে পারবে না। পরিবেশের ক্ষতি হয় মতো জলাশয় ব্যবহার করতে পারবে না।
চুক্তিপত্রে শাহ আলমের সুবিধামতো বেশ কিছু সুবিধার কথাও জুড়ে দিয়েছেন আরটি আনোয়ার হোসেন। যেমন- জলাশয়ের যেকোন অংশের গভীরতা নিজ খরচে বাড়াতে পারিবেন। প্রয়োজনবোধে গভীর নলকূপ স্থাপন করবেন। মাছ চাষের কথা বলা হলেও সেখানে লিজ গ্রহণকারী চাইলে পর্যটন-বিনোদন কেন্দ্র করতে পারবেন। এ ধরনের ২১ শর্ত রয়েছে চুক্তিপত্রে।
ট্রেনিং একাডেমি এলাকায় লিজ দেয়া জলাশয়ের পাড়ে অবৈধভাবে নির্মিত একাধিক বাংলোঘর উচ্ছেদ প্রসঙ্গে ভূসম্পদ কর্মকর্তা মাহবুবুল জানান, লিজ গ্রহীতা বেশ কয়েকটি শর্ত ভঙ্গ করেছেন। এসব বিষয় জানতে তাকে নোটিশ দেয়া হলে তিনি উচ্চ আদালতে একটি মামলা টুকে দিয়েছেন।

পুর্বাঞ্চল রেলের বিভাগীয় ভূ সম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহবুবুল করিম জানান, শর্তভঙ্গ করে জলাশয়ের পাড়ে প্রায় তিন একর জায়গাজুড়ে ছাগল, ঘোড়া, হাঁস, মুরগি, কবুতর, খরগোশসহ বিভিন্ন পশুপাখির শেড নির্মাণ করা হয়েছিলো। অনুমতি ছাড়া জলাশয়ের পাড় কেটে সড়ক নির্মাণ ও দামী বাতি লাগানো হয়েছিলো। এছাড়াও আগে থেকে থাকা রেলের একটি কোয়ার্টারকে সংস্কার করে দ্বিতল করেছিলো। দখল করা হয়েছিলো প্রায় ২৮ টি সেমিপাকা ঘর। সবকিছুই উচ্ছেদ করা হয়েছে।

ভূসম্পদ কর্মকর্তা মাহবুবুল জানান, উচ্চ আদালতে মামলা থাকা কিছু অংশ উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়নি। তবে জলাশয় এলাকায় রেলওয়ে নিরাপত্তাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। মামলা নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত লিজগ্রহীতা শাহআলমও সেখানে প্রবেশ করতে পারবে না।

মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে লিজ গ্রহীতা শাহ আলম জানান, মাছ চাষের জন্য রেলওয়ের জলাশয়টি পাঁচ বছরের জন্য লিজ নিয়েছিলাম। বড় প্রকল্প বিধায় লিজের পর কয়েকজনকে শেয়ার হোল্ডার নিয়েছি। তবে গত তিন বছরের অধিক সময় ধরে আমি সেখানে যাইনি।

প্রকল্প এলাকায় বাংলো টাইপের একাধিক দৃষ্টি নন্দন কটেজ নির্মাণ প্রসঙ্গে শাহ আলম বলেন, বসার জন্য সেখানে আমি রেলের একটি পরিত্যক্ত বাংলো ব্যবহার করেছিলাম। নতুন করে কোন ঘর তৈরি করিনি। আপনি যে ঘরগুলো দেখেছেন তা আসলে কে নির্মাণ করেছেন আমি জানি না।

লিজের শর্তভঙ্গ করে হেলাল উদ্দিন বাবরকে জলাশয়টি দেয়া হয়েছি কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কি চাইলে উনাকে ঢুকিয়ে দিতে পারি। আপনারাতো বুঝেন উনি সেখানে কীভাবে ঢুকেছেন। সবকিছুইতো আর ভেঙ্গে বলা যায় না।

পুর্বাঞ্চল ভূসম্পদ অফিসের সার্ভেয়ার আবদুস সালাম জানান, ২১শর্তে সিলভারজুবলীর মালিক শাহ আলমকে বিশাল জলাশয়টি লিজ দেয়া হয়েছিলো মাছ চাষের জন্য। কিন্তু তিনি অনেকগুলো শর্ত ভঙ্গ করেছেন। একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে দুই প্লাটুন আরএনবি, তিন প্লাটুন রেলওয়ে পুলিশের পাশাপাশি বন্দর থানার পুলিশ উচ্ছেদ অভিযানে সহযোগিতা করেছেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট