চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

চীনাঐতিহ্যের পুরোধা গ্রেটওয়াল

ডা. মোহাম্মদ ওমর ফারুক

২৭ অক্টোবর, ২০১৯ | ১:৩৬ পূর্বাহ্ণ

ঋড়ৎনরফফবহ ঈরঃু বা নিষিদ্ধ নগরী প্রাণভরে দেখলাম, ঘুরলাম আর ছন্দময় স্মৃতিতে গেঁথে রাখলাম সারাবেলার জন্যে।

ওখান থেকে একটি মার্কেটে সবাই হুড়মুড় করে ঢুকলাম তৃষ্ণার্ত পাখির মতন। দু’ঘণ্টা মার্কেটের চৌহদ্দি ভেসে বেড়ালাম আপন মনে। মার্কেটের সামগ্রীগুলোর মান খুব একটা ভাল নয়, একটু ঘুরেই সেটি বুঝে নিয়েছি। তবুও মালিহা/ নাবিলা/ মাশরুরদের জন্য অতিস্বল্প দামে ক্যামেরা/ ভিডিও খরিদ করলাম, পরে জানলাম এটি বার্গেনিং মার্কেট। দুপুরের ডিনার সারলাম ওহফরধহ করঃপযবহ- যেটি বেইজিং এর ঈযধড়ুধহম ফরংঃৎরপঃ এ অবস্থিত। বেইজিং-এ থাকাকালীন আমাদের থাকার ব্যবস্থা ঈযধড়ুধহম ফরংঃৎরপঃ এর লরীঁরধহয়রধড় পধরযড়হম ৎড়ধফ-এ অবস্থিত ট. ঐড়ঃবষ। দেখলাম বেইজিং এর রাতের আকাশ। আপন মনে বুকের ভেতর টেনে নিই মহান রাব্বুল আ’লামিনের সৃষ্ট মহামূল্যবান শান্ত ও নির্ভেজাল বাতাস। পরদিন ১৪ ডিসেম্বর ট্যুর গাইড আমাদেরকে নিয়ে গেলেন ইবরলরহম উৎধমড়হ খধহফ ঝঁঢ়বৎরড়ৎ লধফব মধষষবৎু। এটি এশিয়ার মধ্যে বৃহত্তম লধফব মধষষবৎু। এখানে কেউ যদি ১০০ ইউএস ডলারের পণ্য ক্রয় করেন তবে আকর্ষণীয় উপহার সামগ্রী দেয়া হবে গ্রাহকদের। এটি চায়নিজ পুরোনো ঐতিহ্যের স্টোর হাউজ বলা যায়। নধফধষরহম পধনষবধিু পড়ৎঢ়ড়ৎধঃরড়হ এর অধীন ক্যাবল কারে করে চীনের ঐতিহাসিক গ্রেটওয়াল পরিদর্শনে যাই। যেটি বেইজিং সিটি থেকে ৭৫ কিলোমিটার দূরে।

ক্যাবল কারে চড়ার সৌভাগ্য এর আগেও আমার বহুবার হয়েছে। গ্রেটওয়াল চীনের ঐতিহ্যের প্রতীক। চীনের এই মহাপ্রাচীর পাথর ও মাটি দিয়ে তৈরি দীর্ঘ প্রাচীর সারি। এগুলো খৃষ্টপূর্ব ৫ম শতক থেকে খ্রিষ্টীয় ১৬শ শতক পর্যন্ত চীনের উত্তর সীমান্ত রক্ষা করার জন্যেই তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণ করার কাজে ব্যবহৃত হত। মহাপ্রাচীরটি চীনের যঁধরৎড়ঁ নামক স্থানে অবস্থিত। এটির দৈর্ঘ্য ২১,১৯৬,১৮০ মিটার। এটির উচ্চতা ২১ হাজার ১৯৬ কিলোমিটার (সমস্ত শাখা-প্রশাখাসহ)। এটি তৈরি করেছিলেন চীনের প্রথম স¤্রাট ছরহ ংযর যঁধহম (খ্রিষ্টপূর্ব ২২০ থেকে ২০৬)। সুপরিচিত এই মহাপ্রাচীরটি তৈরি করা হয়েছে মিং রাজবংশ কালে (১৩৬৮-১৬৪৪)। প্রতিরোধ ব্যবস্থা ছাড়াও এই গ্রেটওয়াল প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে হচ্ছে- সীমানা কন্ট্রোল করা, যাতে করে বহিঃর্বিশ্ব থেকে মূল্যবান সামগ্রী আমদানি করা যায় এবং পণ্যসামগ্রী রপ্তানিকে উৎসাহ দেয়া যায়। এই গ্রেটওয়ালটি পরিবহণ করিডোর হিসাবে ব্যবহৃত হত। মূল প্রাচীরটি ৬,২৫৯ কিলোমিটার ব্যাপী এবং ২২৩২ কিলোমিটার জুড়ে রয়েছে পর্বত ও নদী। অন্য একটি জরিপে দেখা গেছে যে, সম্পূর্ণ প্রাচীরটি ২১,১৯৬ কিলোমিটার জুড়ে। বর্তমানে এ মহাপ্রাচীরটির প্রতিরোধ পদ্ধতি দেখে সহজেই বোঝা যায়-এটি ইতিহাসের একটি পরিকল্পিত স্থাপত্যশৈলী হিসাবে পর্যটকদের মনে স্থান পেয়েছে। গ্রেট ওয়ালের সর্বোচ্চ উচ্চতায় উঠে আমরা পর্যটকরা ফটোসেশনে অংশ নিলাম। আমরা যেন সবাই হাঁপিয়ে উঠছি। কেউবা দ্রুত কিংবা কেউ বা ধীরলয়ে গ্রেটওয়ালের উপরিভাগ অবলোকন করার জন্যে যেন হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। এ এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা, না দেখলে বোঝা যাবে না। সেই পুরোনো দিনে চায়নিজ জনগণ একটা অসম্ভব কাজকে সম্ভব করে তুলেছে। ইবরলরহম এড়ষফবহ চধষধপব ঋৎরবহফংযরঢ় ঝঃড়ৎব নামক রেস্টুরেন্টে মজাদার চায়নিজ খাবারের আয়োজন এমনভাবে করা হয়েছে যেন জিভে পানি চলে আসে। গ্রেটওয়াল দেখা শেষে আমরা ছুটলাম বেইজিং অলিম্পিক পার্ক দেখতে। ২০০৮ সালে যখন বেইজিং-এ অলিম্পিক গেম অনুষ্ঠিত হয় তখনি এ পার্কটি চীনা সরকার প্রতিষ্ঠা করেন। এটি ২৮৬৪ একর এলাকা জুড়ে। এর মধ্যে ১৬৮০ একর এলাকা জুড়ে রয়েছে অলিম্পিক ফরেস্ট পার্ক। কেন্দ্রস্থলে রয়েছে ৭৭৮ একর এবং ৪০৫ একর রয়েছে পার্কটির দক্ষিণাংশে-যেটি ১৯৯০ সালে অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেম্স এর ভেন্যুগুলো দ্বারা পরিবেষ্ঠিত। পার্কটি দেখার জন্য সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ি আমরা। দশটি ভেন্যু দ্বারা বেইজিং অলিম্পিক পার্ক গঠিত, যেমন: অলিম্পিক ভিলেজ এবং অন্যান্য সুবিধাদি। পরবর্তীতে বহুমুখী কার্যক্রমে প্রয়োগের লক্ষ্যে জনগণের জন্য পার্কটিকে রুপান্তরিত করা হয়। চীনের এই মহাপ্রাচীর দেখা শেষে আমরা নির্ধারিত বাসে উঠে পড়ি। বাসে করে যাওয়ার সময় চোখে পড়ে বেইজিং এর বিখ্যাত হোটেল চধহমঁ ংবাবহ ংঃধৎ যড়ঃবষ।

ডা. মোহাম্মদ ওমর ফারুক
সভাপতি, রাউজান ক্লাব; জুনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি), জেনারেল হাসপাতাল, রাঙ্গামাটি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট