চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক দাম বাজার স্থিতিশীল রাখার উদ্যোগ নিন

২৮ জুলাই, ২০১৯ | ১:১৯ পূর্বাহ্ণ

দেশে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ে যে তুঘলকি কা- ঘটে চলেছে, তার কোনো কূল-কিনারা করতে পারছে না সরকার। মুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ীরা পণ্যের বাজার নিয়ে যে দুর্বৃত্তপনা করছে, তা দিনের আলোর মতোই স্পষ্ট। কিন্তু এদের অপতৎপরতা বন্ধে সরকারের কোনো পদক্ষেপই কাজ দিচ্ছে না। মুনাফাশিকারিচক্রগুলো বন্যাকে অজুহাত করে প্রায় সব নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। অথচ বন্যার সাথে সম্পর্ক আছে কাঁচাবাজারের গুটিকয়েক পণ্য মাত্র। কিন্তু বাজারের নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের দাম এখন অস্বাভাবিক। বেশ কিছু আমদানি পণ্যের দামও অস্বাভাবিক বেড়েছে, যার সঙ্গে বন্যার কোনো সম্পর্ক নেই। বন্যায় সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়লেও অসাধু ব্যবসায়ীরা এটিকে মুনাফা লাভের মওকা হিসেবে বেছে নিয়েছেন বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলোর নির্লিপ্তার সুযোগে। নিত্যপণ্যের বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীদের এ ধরনের দাপট নিঃসন্দেহে ন্যাক্কারজনক। মুনাফাশিকারিদের এমন তৎপরতা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী চাল, ডাল, তেল, চিনি, মাছ-মাংস, শাক-সবজি সব ক্ষেত্রেই রয়েছে মুনাফাশিকারিদের কালো হাত। অসাধু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্মে অস্থির হয়ে ওঠেছে নিত্যপণ্যর বাজার। দিনকয়েক আগেও বাজারে যে কাঁচা মরিচের দাম ছিল কেজিপ্রতি ৬০ টাকা এখন সেই কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। শসাসহ অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। বন্যার দোহাই দিয়ে অস্বাভাবিক দাম বাড়ানো হয়েছে কাঁচা পেঁপে, কাঁচকলা, আলু, কুমড়া, বেগুন, ঝিঙে, টমেটো, কচুমুখি, পটোল, ঢ্যাঁড়স ইত্যাদি সবজিপণ্যেরও। অথচ এসব সবজি শুধু বন্যাদুর্গত এলাকায় জন্মায় না, সারাদেশেই উৎপাদিত হয়। ডিম, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ, মসলা, মুরগি, গরু ও খাসির মাংস, ভোজ্যতেলের দামও বেড়েছে। কোনো কারণ ছাড়াই বেড়েছে বিভিন্ন আমদানী পণ্যের দামও। পণ্যের দাম বাড়ার জন্য অতিবৃষ্টি, বন্যা ও বেহাল সড়ক যোগাযোগব্যবস্থাকে দায়ী করা হচ্ছে। এ অজুহাতের কিছুটা বাস্তবতা আছে সত্য, কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে যেসব পণ্য বন্যাকবলিত এলাকার বাইরে উৎপন্ন হয় কিংবা বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়, সেসব পণ্যের দাম বাড়ানোর কী যুক্তি থাকতে পারে? এই পরিস্থিতি কতটা উদ্বেগজনক অবস্থাকে স্পষ্ট করে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এটাকে কোনোভাবেই স্বাভাবিক বাজারচিত্র বলা যায় না।
বন্যার কারণে দেশের একটি বিশাল জনগোষ্ঠী সহায় সম্বল হারিয়ে এখন নিত্য অভাব অনটনকে মোকাবেলা করে জীবনযাপন করছে। এ অবস্থায় নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টার কোনো বিকল্প থাকতে পারে না। সব বিবেচনায় নিয়ে সরকারের উচিত হবে এখনই বাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। জানা গেছে, ভোক্তা পর্যায়ে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্যগুলো ট্রাকে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (টিসিবি) এ নির্দেশনা দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সন্দেহ নেই এটি ইতিবাচক। তবে অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা হচ্ছে, নানা কারণে বাজারে টিসিবি’র তেমন প্রভাব পড়ে না। উপরন্তু নি¤œমানের কারণে সাধারণ মানুষ টিসিবি’র পণ্যও তেমন কিনতে চায় না। এ ক্ষেত্রে বাজার মনিটরিংয়ের বিকল্প নেই। ব্যবসায়ীদের সাধারণ মানুষের প্রতি উদার হওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। অতীতেও রমজানের ও কোরবানীর ঈদের আগে বহুবার এ ধরনের আহবান জানানো হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ব্যবসায়ীরা তা আমলে নেয় না। এবার যে তার ব্যতিক্রম হবে তা বলা মুশকিল।
সঙ্গতকারণেই বাজার নিয়ন্ত্রণে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর উচিত হবে সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। যদি যথাযথ মনিটরিং নিশ্চিত করে বাজারকে ভোক্তাবান্ধব করা যায়, তাহলে ভোক্তারা মুনাফাশিকারিদের স্বার্থের কাছে জিম্মি হবে না। দাম নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি অসাধু বিক্রেতারা যাতে সুযোগ পেলেই বাসি-পচা পণ্য, খারাপ পণ্য ভোক্তাদের গছিয়ে দিতে না পারে, ওজনে কম না দিতে পারে, তাও নিশ্চিত করতে হবে। ভোক্তাবান্ধব বাজার সৃষ্টির জন্যে অসৎ ও প্রতারক ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করাও জরুরি। আমরা আশা করতে চাই, ক্রেতাস্বার্থ সংরক্ষণ করতে সুষ্ঠু বাজারব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপই নেবে সরকার। এ ক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত ফল পেতে সরকারের পাশাপাশি সৎ ব্যবসায়ী, সৎ ব্যবসায়ী নেতা, সৎ রাজনীতিক, ইমাম, আলেম-উলামা, বিভিন্ন ধর্মীয় পুরোহিত, সাংবাদিক, সমাজপতি এবং মহল্লাপ্রধানসহ সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট