চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

স্বীকৃত চারটি স্থানেও নেই গেইট

অরক্ষিত রেল ক্রসিংয়ে মৃত্যুফাঁদ

এনায়েত হোসেন মিঠু, মিরসরাই

২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ | ১২:০২ পূর্বাহ্ণ

পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের চট্টগ্রাম অংশের মিরসরাই উপজেলার অরক্ষিত ৩০ কিলোমিটারজুড়ে প্রায় অর্ধশত লেভেল ক্রসিংই যেন মৃত্যুফাঁদ। এসব ক্রসিংয়ে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটলেও নেয়া হচ্ছে না কার্যকর পদক্ষেপ। তবে সম্প্রতি বিশেষ একটি প্রকল্পের আওতায় বৈধ লেভেল ক্রসিংগুলোতে ইন্টারলগিং সিস্টেম কার্যকর করার কথা থাকলেও এখানে তার বালাই নেই।

জানা গেছে, মিরসরাইয়ের ধুমঘাট রেলসেতু থেকে দক্ষিণের বারৈয়াঢালা পর্যন্ত গড়ে উঠেছে অন্তত ৫০টি অবৈধ লেভেল ক্রসিং। চোরাই কাঠ ও পণ্য পরিবহনের স্বার্থে চোরাকারবারিরা এসব ক্রসিং তৈরি করেছে বলে নিশ্চিত করেছে স্থানীয় লোকজন। এসব ক্রসিং বন্ধে বিভিন্ন সময় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ হালকা পদক্ষেপ নিলেও তা কার্যকর হয়নি।

মিরসরাইয়ের চিনকির আস্তানা রেল স্টেশনের কর্মকর্তারা জানান, মিরসরাই এলাকার ৩০ কিলোমিটার রুটে কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত লেভেল ক্রসিং রয়েছে মাত্র সাতটি। এর বাইরে মানুষের তৈরি ক্রসিং রয়েছে অনেক। এগুলো বন্ধে বারবার কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ নিলেও প্রভাবশালীদের কারণে কার্যকর হয় না।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৈধ লেভেল ক্রসিংগুলোর মধ্যে বারৈয়ারহাট, বিএসআরএম গেইট, মহামায়া ব্যতীত বাকি চারটিতে কখনো গেইটম্যান নিয়োজিত থাকে না। অবৈধ ক্রসিংগুলো দিব্যি ব্যবহার করছে চোরাকারবারি থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ।

সম্প্রতি মিরসরাই-ফটিকছড়ি সদর সংযোগ সড়কের আমবাড়িয়া লেভেল ক্রসিং এলাকায় সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় এখানে গেটও নেই গেটম্যানও নেই। অথচ এ সড়কে প্রতিদিন অসংখ্য যাত্রীবাহী ও মালবাহী যানবাহন চলাচল করে।

স্থানীয়রা জানায়, এখানে কখনো গেট বা গেটম্যান দেয়া হয় না। মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনা ঘটলে রেলের লোকজন এসে গাড়ি চলাচল বন্ধ করার চেষ্টা চালায়। প্রায় একই রকম পরিস্থিতি বড়তাকিয়া স্টেশন এলাকার লেভেল ক্রসিংয়ে। এখানেও গেটম্যান নিয়োজিত থাকে না। অথচ দিনরাত ছোট যানবাহন চলাচল করছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের একটি স্টেশনের একজন স্টেশন কর্মকর্তা জানান, বিভিন্ন সময় চোরাকারবারিদের প্রতিরোধে অবৈধ ক্রসিংগুলোতে লোহার খুঁটি দিয়ে ঘিরে রাখলেও রাতের অন্ধকারে ফেলে দেয়া হয়। এদিকে অনুমোদিত সাতটি লেভেল ক্রসিংয়ের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বারৈয়াহাট লেভেল ক্রসিং। এখানে বেশ কয়েকবার দুর্ঘটনায় একাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ এক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় এক চিকিৎসকসহ দুইজন। ওইসময় ১৫ জন আহত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এর আগেও অসংখ্য প্রাণহানি হয়েছে এখানে। তার মধ্যে বছর দুয়েক আগে একটি যাত্রীবাহী বাস দুর্ঘটনার শিকার হয়। সেসময় প্রাণ হারান দুই ব্যক্তি। আহত হন অন্তত ৩০ জন। এছাড়া গত ৫ বছরে এখানকার ক্রসিংয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছে অন্তত ২০ জন।

মিরসরাইয়ের চিনকি আস্তানা রেল স্টেশনের ইনচার্জ মঈনুল হুদা জানান, একসময় বারইয়ারহাট লেভেল ক্রসিংয়ে ইন্টারলগিং সিস্টেম ছিলো। তবে ডবল হওয়ার পর থেকে এটি উভয় লাইনে যুক্ত করা হয়নি। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছি। কিন্তু এখনো এটি হয়নি। অবৈধ লেভেল ক্রসিং সম্পর্কে মঈনুল হুদা বলেন, যে যেভাবে পারছে রেললাইনের ওপর দিয়ে পারাপার করছে। ডিপার্টমেন্ট আর কত ব্যবস্থা নেবে। ব্যবস্থা নিলেও আবারো গাড়ি নিয়ে যাতায়াত করে।

এদিকে, রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের লেভেল ক্রসিং গেটসমূহের পুনর্বাসন ও মান উন্নয়নে ২০১৫ সালে একটি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। যার মেয়াদ শেষ হয় চলতি বছর ৩০ জুন। প্রকল্পটির আওতায় মিরসরাইয়ের বৈধ লেভেল ক্রসিং গেটগুলো ইন্টারলগিং সিস্টেম চালু করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভাগীয় প্রকৌশলী-৩ (ঢাকা) ও পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের লেভেল ক্রসিং গেট পুনর্বাসন ও মান উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শেখ নাইমুল হক। তিনি বলেন, প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২১ সাল পর্যন্ত থাকলেও তার আগে ২০১৯ সাল নাগাদ বেশিরভাগ লেভেল ক্রসিং ইন্টারলগিং সিস্টেমের আওতায় আনা হয়েছে।

রেলওয়ের কর্মকর্তা ইন্টার লগিং সিস্টেম চালু করার কথা জানালেও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মিরসরাইয়ে কোথাও কোন লেভেল ক্রসিংয়ে ইন্টার লগিং সিস্টেম চালু হয়নি।

পূর্বকোণ/সাফা/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট