চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

ঝরে পড়ার আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের

মাধ্যমিকে উপস্থিতির হার অর্ধেক

ইমরান বিন ছবুর  

২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১ | ১২:২৯ অপরাহ্ণ

দীর্ঘ ১৮ মাস পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললেও সেখানে উপস্থিতির হার আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। নগরীর বিভিন্ন বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার ৫০ ভাগের নিচে নেমে এসেছে। যেখানে করোনার আগেও উপস্থিতির হর ছিল প্রায় ৭৫ থেকে ৮০ ভাগের উপরে। নগরীর সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন স্কুল সরেজমিন পরিদর্শন করে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। বিদ্যালয় খোলার পর শিক্ষার্থীদের এমন উপস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন খোদ শিক্ষকেরাও।

অন্যদিকে, বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীরা ঝড়ে পড়ছে কি-না তাও ভাবনার বিষয় মনে করছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা।

গতকাল বৃহস্পতিবার নগরীর চারটি স্কুলের উপস্থিতির তথ্য সংগ্রহ করেন এ প্রতিবেদক। একটি সরকারি, একটি বেসরকারি, ও দু’টি সিটি কর্পোরেশন (বালক ও বালিকা) স্কুলের উপস্থিতির তথ্য সংগ্রহ করা হয়। নগরীর চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল, কাজেম আলী স্কুল এন্ড কলেজ, বলুয়ারদিঘী সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, লামাবাজার এ এ এস সিটি কর্পোরেশন বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, বিদ্যালয় খোলার প্রথমদিন উপস্থিতির সংখ্যা উল্লেখযোগ্য থাকলেও তা ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে। এরমধ্যে সবচেয়ে কম উপস্থিতির সংখ্যা দেখা যায় দশম শ্রেণি ও ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের। এ চারটি স্কুলে গত চারদিনে ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার ছিল ৪২ দশমিক ৬ শতাংশ। যেখানে কাজেম আলী স্কুলে উপস্থিতির হার হচ্ছে ৪০ দশমিক ২১ শতাংশ, বলুয়ারদিঘী বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার হচ্ছে ৪৮ দশমিক ৮০ শতাংশ, লামাবাজার বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার হচ্ছে ২৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ এবং চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে উপস্থিতির হার হচ্ছে ৫৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ।

একইভাবে, ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের (দশম শ্রেণি) উপস্থিতির হার ছিল ৪৮  শতাংশ। যেখানে কাজেম আলী স্কুলে উপস্থিতির হার হচ্ছে ৪১ দশমিক ৯৪ শতাংশ, বলুয়ারদিঘী বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার হচ্ছে ৬৩ দশমিক ২১ শতাংশ, লামাবাজার বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার হচ্ছে ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ এবং চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে উপস্থিতির হার হচ্ছে ৪৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ।

এছাড়া, ষষ্ঠ শ্রেণিতে গড়ে উপস্থিতির হার ৫৫ শতাংশ। সেখানে কাজেম আলী স্কুলে উপস্থিতির হার হচ্ছে ৪৬ দশমিক ৭ শতাংশ, বলুয়ারদিঘী বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার হচ্ছে ৫৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ, লামাবাজার বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার হচ্ছে ৪৮ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে উপস্থিতির হার হচ্ছে ৭১ দশমিক ৪২ শতাংশ।

শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির সংখ্যা কমার কারণ জানতে চাইলে লামাবাজার এ এ এস সিটি কর্পোরেশন বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক মো. শাহাদাত হোসাইন মাহমুদ বলেন, করোনার আগে আমাদের উপস্থিতির হার ছিল প্রায় ৮০ ভাগের মত। কিন্তু গত ১২ তারিখ থেকে বিদ্যালয় খোলার পর প্রথম কয়েকদিন শিক্ষার্থী আসলেও ক্রমান্বয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার আশঙ্কাজনকভাবে কমতে শুরু করেছে। অনেক শিক্ষার্থী বিভিন্ন অযুহাত দেখিয়ে স্কুলে আসছে না।

একই কথা বলে বলেন বলুয়ারদিঘী সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক মো. ফরিদ উদ্দীন। তিনি জানান, যেদিন কোন এসাইমেন্ট দেয়ায় তারিখ থাকে, ওদিন কিছুটা উপস্থিতি দেখা যায়। অন্যথায়, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির সংখ্যা কম।

কাজেম আলী স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) সানজিদা মোখতার তানজিন বলেন, দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে না আসায় শিক্ষার্থীদের মাঝে এক ধরণের নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি হয়েছে হয়তো। যার কারণে শিক্ষার্থীরা শ্রেণি কক্ষে আসছে না। তবে শ্রেণিকক্ষে উপস্থিতি বাড়াতে আমরা শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দিচ্ছি।

জানতে চাইলে শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব প্রফেসর হাসিনা জাকারিয়া বলেন, কী কারণে শ্রেণি কক্ষে উপস্থিতির হার কমে গেছে তা আমাদের জানতে হবে। দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের মাঝে কোন নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি হয়েছে সেটা দেখার বিষয়। অন্যদিকে, বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীরা শিক্ষা থেকে ঝড়ে পড়ছে কি-না তাও ভাবনার বিষয় মনে করছেন এই শিক্ষাবিদ।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট