চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

দ্রুত জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধে ব্যবস্থার দাবি

মাতামুহুরীর ২০ গ্রামে ভাঙনের আশঙ্কা

আরফাতুল মজিদ, কক্সবাজার

১৯ আগস্ট, ২০২১ | ১২:১০ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারের চকরিয়া মাতামুহুরী নদীর উত্তর পাশে অব্যাহত ভাঙনে প্রতিনিয়ত বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি। ইতিমধ্যে বহু ঘর ও ফসলি জমি নদী গর্ভে চলে গেছে। ঘরবাড়ি হারানো অনেক পরিবার ভূমিহীন হয়ে বর্তমানে নিঃস্ব। চলমান বর্ষায় ভাঙনের আশঙ্কা রয়েছে ২০টি গ্রামসহ বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

বিলীনের পথে মসজিদ-মাদ্রাসাও। দ্রুত সময়ে জিও ব্যাগ স্থাপনের মাধ্যমে প্রায় ৩ কিলোমিটার ভাঙন রোধ করতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে এলাকাবাসী পানি উন্নয়ন বোর্ড বরাবরে আবেদনও করেছে। আবেদনে সুপারিশও করেছেন স্থানীয় সাংসদ জাফর আলম।

আবেদন সূত্রে জানা গেছে, চকরিয়া কৈয়ারবিল ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নং ওয়ার্ডের পূর্ব সীমানা থেকে ৯ নং ওয়ার্ডের দ্বীপকূল পাড়া পুরাতন কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ পর্যন্ত ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। সাম্প্রতিক বন্যায় ৫টি ঘর সম্পূর্ণ নদীতে বিলীন হয়ে যায়। ক্ষতি হয়েছে কৃষিজমি ও ফসলের। হুমকিতে রয়েছে দ্বীপকূল পাড়া, ছোঁয়ালিয়া পাড়া, ধুপি পাড়া, শীল পাড়া, হিন্দু পাড়া, টুনু সিকদার পাড়া, কৈয়ারবিল প্রপার, মুহুরী পাড়া, মিয়াজী পাড়া, চড়ারকূল, জালিয়া পাড়া ও পূর্বে হিন্দু পাড়া।

এসব এলাকায় রয়েছে কৈয়ারবিল উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৮ নং ওয়ার্ডের মাকজুলুলুম মাদ্রাসা, আলহেরা মসজিদ ও এবতেদায়ী মাদ্রাসা, পশ্চিম কৈয়ারবিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ইউনিয়ন পরিষদ ভবন। চলমান বর্ষা ও বন্যায় এসব এলাকা ও মসজিদ-মাদ্রাসাসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ভাঙনের কবলে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের চরপাড়ার পূর্ব সীমানা থেকে ৪ নং ওয়ার্ড রোস্তম আলী চৌধুরী সড়ক পর্যন্ত এলাকায় সাম্প্রতিক বন্যায় ব্যাপক ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাম্প্রতিক বন্যায় মাতামুহুরী নদীতে বিলীন হয়ে যায় কৈয়ারবিল ৯ নং ওয়ার্ডস্থ দ্বীপকূল এলাকার শিব্বির আহমদ, সোনা মিয়া, কামাল হোসেন, রোকেয়া বেগম, মো. হোসেন, মনজুর আলম, নুর নাহার ও মো. মানিকের বসতবাড়ি। নদীগর্ভে ভিটেবাড়ি হারিয়ে তারা এখন নিঃস্ব। বসতভিটে হারানো শিব্বির আহমদ বলেন, সম্প্রতি বন্যায় আমার ঘরসহ প্রায় ১০টি বসতভিটে নদীতে বিলীন হয়। এখন পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিয়েছি এক আত্মীয়ের বাড়িতে। নদীর তীরে স্থায়ী কোন বাঁধ না দেওয়ায় বেশি দুর্ভোগে পড়েছে কৈয়ারবিল ইউনিয়নের মানুষ।

গত কয়েক বছরে নদী ভাঙনের কবলে পড়ে শুধু দ্বীপকূল এলাকা থেকে অন্যত্র চলে যান নুর আহমদ, রফিক আহমদ, ইসহাক মিয়া, আবুল কালাম, ঠিকাদার নজির আহমদ দিদার, শাহাব উদ্দিন ও আব্দুল্লাহ আল নোমানসহ বহু পরিবার। এখনো তারা নদী ভাঙনের আতঙ্কে রয়েছে। দ্বীপকুল এলাকার বাসিন্দা ঠিকাদার নজির আহমদ দিদার বলেন, কয়েক বছর আগে আমার বসতভিটেও নদীতে বিলীন হয়ে যায়।

এরপর নদীর তীর থেকে একটু দূরে এসে ঘর তৈরি করি। কিন্তু এখনো দুশ্চিন্তা যায়নি। চলমান বর্ষা ও সম্প্রতি বন্যায় নদীর তীর ভেঙে আবারও বাড়ির পাশে চলে এসেছে। এখন নতুন করে আতঙ্কে আছি। প্রায় ৬০ লাখ টাকা ব্যয় করে গত বছর মসজিদের কাজ শেষ হয়েছে। এখন মসজিদের দক্ষিণ পাশের বাউন্ডারি নদী ভাঙনের কবলে পড়ে ধসে পড়েছে।

চকরিয়া ৯ নং লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা কাইছার বলেন, সম্প্রতি বন্যায় নদী ভাঙনে আমার ইউনিয়নের ১০টির মতো বসতঘর বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া আধা কিলোমিটার ফসলি জমি একেবারে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। হুমকিতে রয়েছে আরো বসতবাড়ি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

ব্লক স্থাপনের মাধ্যমে যদি স্থায়ী বাঁধ দেওয়া যায় তাহলে রক্ষা পাবে অনেক গ্রাম। এ বিষয়ে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী বলেন, সাম্প্রতিক বন্যায় মাতামুহুরীর যেসব এলাকায় পানি ছিল ও বাঁধ ভেঙে গিয়েছিল, সবজায়গা পরিদর্শন করেছি ও মনিটরিংও করা হয়েছিল। তাছাড়া পানি কমে না যাওয়ায় কাজ শুরু করতে পারিনি। যে চারটি জায়গায় ভেঙে গিয়েছিল বর্তমানে সেখানে কাজ শুরু হয়েছে জিও ব্যাগ দিয়ে। আর দু’টি জায়গায় চকরিয়া পৌর রক্ষা বাঁধ ক্ষতি হয়েছে; সেগুলোর কাজও শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে ভাঙন রোধে প্রতিরক্ষা বাঁধ বাস্তবায়ন করতে প্রকল্প সাবমিট করা হয়েছে।

পূর্বকোণ/সাফা/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট