চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

ইমোতে বন্ধুত্ব, বাসায় দাওয়াতে গিয়েই হারালেন সর্বস্ব!

অনলাইন ডেস্ক

৫ জুন, ২০২১ | ২:০৯ অপরাহ্ণ

মোবাইল অ্যাপ ইমোর মাধ্যমে পরিচয়, পরে বন্ধুত্ব। ধীরে ধীরে আত্মীয়ের মতো ব্যবহার করে মন জয় করে বাসায় দাওয়াত। দাওয়াতে রাজি হয়ে বাসায় গেলেই হতে হয় জিম্মি, হারাতে হয় সর্বস্ব। মারধর করে আদায় করা হয় মুক্তিপণও। সেই সঙ্গে সাদা কাগজে নেওয়া হয় স্বাক্ষর। এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে রাজধানীর সাভারের আশুলিয়ায়। এ ঘটনার শিকার যুবকের মেসেজ পেয়ে নারীসহ ৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ।

তবে ঘটনাটি প্রায় এক মাস আগের। সম্প্রতি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে মোবাইল ফোনে মেসেজের মাধ্যমে অভিযোগ পাঠান ভুক্তভোগী ওই যুবক। এই মেসেজের তথ্যকে গুরুত্ব দিয়ে আশুলিয়ার বাইপাইল ও নয়ারহাট এলাকায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে নারীসহ ৪ জনকে আটক করা হয়।

আটককৃতরা হলেন- টাঙ্গাইলের সিলিমপুর গ্রামের হাসি আক্তার (২৮), নাটোরের তোপাপুকুর গ্রামের মৃত ইউনুস আলীর ছেলে শফিকুল ইসলাম (৩৫), পাবনার পয়রান গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে হৃদয় (১৮) ও টাঙ্গাইলের পাইসানা উত্তরপাড়া গ্রামের বাবি কাদের খানের ছেলে ফিরোজ আল মামুন (২৭)। আটককৃতদের বিরুদ্ধে একাধিক মাদক মামলা রয়েছে। তবে এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর অনুরোধে তার নাম-পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে।

শুক্রবার (৪ জুন) রাতে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক ইকবাল হোসেন।

পুলিশ জানায়, ভুক্তভোগীর সঙ্গে মোবাইলের ইমো অ্যাপের মাধ্যমে বন্ধুত্ব করেন প্রতারকরা। পরে কৌশলে বাসায় ডেকে নিয়ে মারধর করে ভুক্তভোগী ওই যুবকের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা ও মোবাইল ফোনসহ গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র রেখে দেন। সম্মানের দিকে তাকিয়ে কাউকে কিছু না বলে সেখান থেকে চলে আসেন ভুক্তভোগী। এর কয়েক দিন পর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে মেসেজ দেনওই যুবক।

সেই মেসেজের মাধ্যমে পাওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে প্রথমে আশুলিয়ার নয়ারহাট এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে শফিকুলকে আটক করা হয়। তার দেওয়া তথ্যমতে অভিযুক্ত নারী হাসিকে আটক করা হয়। তাদের সঙ্গে নিয়ে বাইপাইলের কোহিনুর গেটে অভিযান চালিয়ে হৃদয় ও ফিরোজ আল মামুনকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় আরও দুইজন পলাতক রয়েছে।

মেসেজে ভুক্তভোগী যুবক লেখেন, স্যার, কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে একটা মেয়ের (মূলত মহিলা) ইমোতে পরিচয় হয়। একপর্যায়ে আত্মীয়ের মত ব্যবহার করতে থাকেন। আমাকে দাওয়াত দেন। আমি রোজা তাই যেতে চাইনি, পরে আমাকে ইফতারির জন্য দাওয়াত দেয়। আমি গেলে পরে আমাকে ওই মহিলা আর চারজন ছেলে একটা রুমে প্রচণ্ড মারধর করে। পরে আমার মুক্তিপণ দেড় লাখ টাকা বিকাশ দিয়ে নিয়ে নেয়। ছাড়ার আগে আমি যেন কোনো স্টেপ নিতে না পারি তাই আমাকে দিয়ে একটা সাদা স্ট্যাম্প পেপারে সাইন নেয় এবং আমার সামনে কনডমের পেকেট রেখে কয়েকটি ছবি তুলে রাখে। ওই মহিলার ছবি আর চারজন ছেলের একজনের ছবি আছে আমার কাছে। দয়া করে আমার ব্যাপারটা একটু গোপন রাখবেন হয়তো তারা জানলে আমার ক্ষতি করবে। স্যার আমি খুব ভয়ের সঙ্গে অভিযোগ করছি। আমার সঙ্গে থাকা মোবাইল J5 (2016), ব্যাগ এর ভেতরে মূল্যবান কিছু জিনিস ওরা রেখে দিয়েছে। আমি জানি এখানে আমি বাসায় গিয়ে অপরাধ করেছি। সেজন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। কীভাবে কী হয়ে গেল আমি এখনো ভাবতে পারছি না। আমাকে ক্ষমা করবেন।

এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইকবাল হোসেন বলেন, প্রত্যেকের আশেপাশে কারা বসবাস করেন, কীভাবে বসবাস করেন, কে কী করছেন সেই বিষয়ে সবার নজর রাখা উচিত। আশেপাশের কোথাও কোনো অপরাধ সংগঠিত হলে তাৎক্ষণিকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো উচিত। প্রয়োজনে তথ্যদাতার পরিচয় সম্পূর্ণ গোপন রাখা হবে। আটকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।

পূর্বকোণ/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট