চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদে এবারও নেই ধনী-গরীব সম্মিলন

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন 

৫ মে, ২০২১ | ১:১৭ অপরাহ্ণ

২২ বছর ধরে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদে চলে আসছে সম্মিলিত ইফতারের আয়োজন। প্রতি বছর রোজায় এক কাতারে মিলিত হতেন ধনী-গরীব, ফকির-মিসকিন। একসঙ্গে বসে করতেন ইফতার। করোনাভাইরাসের কারণে গেল বছর হয়নি সেই সম্প্রীতির মেলবন্ধন। একই কারণে এবারও হল না ধনী-গরীবের সেই মহাসম্মিলন।

প্রতি বছর  প্রথম রোজায় থেকে শুরু করে শেষ রোজা পর্যন্ত নগরীর আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদে ইফতারের আয়োজন করা হতো। ছোলা, মুড়ি, পেঁয়াজু, জিলাপি, খেজুর, শরবতসহ নানা পদে আয়োজন থাকতো সেই ইফতারিতে। আসরের নামাজের পর থেকে ইসলামী বয়ান, দোয়া-মাহফিল চলত ইফতারের আগ পর্যন্ত। ধনী-গরিব, ফকির-মিসকিন সব শ্রেণির মানুষ এক কাতারে বসে ইফতার করতেন। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত। 

আয়োজকেরা জানান, পবিত্র মক্কা-মদিনার আদলে এভাবে ইফতারের রেওয়াজ চালু করা হয় ১৯৯৭ সালের দিকে। মসজিদের খতিব সৈয়দ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন তাহের জাবেরী আল-মাদানীর চিন্তাভাবনা থেকে ইসলামের সম্প্রীতির মেলবন্ধন শুরু হয় শাহী জামে মসজিদে। বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও দানশীল ব্যক্তিদের সহায়তায় ২২ বছর ধরে চলে আসছিল এ আয়োজন। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণ আতঙ্কে সরকারের বিধিনিষেধের কারণে গত বছর রোজায় হয়নি ধনী-গরিবের মেলবন্ধন। 

আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদে দীর্ঘদিন ধরে ইফতার করতেন এমন কয়েকজন বললেন, এখানে ধনী-গরিবের বিভাজন মিটিয়ে এক কাতারে বসে ইফতার খাওয়ার রেওয়াজ ছিল। এটা অনেক সওয়াবের। পবিত্র মক্কা-মদীনায় এই রেওয়াজ রয়েছে। পরিবারের সবাই ঘরে ইফতার করার জন্য বলতেন। কিন্তু মসজিদে এলে আলাদা একটা শান্তি পেতাম। ৪-৫ বছর ধরে ইফতার করে আসছি। এ বছর মসজিদে ইফতার করতে না পারায় মন কাঁদছে।

এখানে ধনী-গরীব এক পাতে বসে ইফতার করত। ছিল ভ্রাতৃত্ববোধ। তা এবার মিস করছি। ভেদাভেদ ভুলে সওয়াবের আশায় প্রতি রোজায় ইফতার করতে হাজির হতেন তারা। খতিবের একান্ত সচিব হাসান মুরাদ বলেন, ‘প্রতিবছরই ইফতারের জন্য কয়েকজন বিত্তবান সহযোগিতা করে আসছিলেন। কিন্তু তাঁরা কেউই নিজেদের পরিচয় জানাতেন না।’ এবারও আমাদের আয়োজনের জন্য প্রস্তুত ছিলাম। অনুদানদাতাদের প্রস্তুত থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে গতবারের মতো এবারও আমরা ইফতার আয়োজন থেকে বিরত রয়েছি।

তিনি বলেন, বাবুর্চি ও তাদের সহযোগী মিলিয়ে ৩০-৪০ জন মানুষ দীর্ঘদিন ধরে এখানে ইফতারি তৈরি করতেন। তাদের এবারও প্রস্তুত রাখা হয়। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সরকারের নির্দেশনা মেনে আয়োজন বন্ধ করা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রতিবছর ৩-৪ হাজার লোক এখানে ইফতার করতেন। সমাজের নিম্নবিত্ত মানুষ থেকে শুরু করে উচ্চবিত্ত মানুষরাও শরিক হতেন। ছিলেন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র, স্বল্প আয়ের মানুষ, ভিক্ষুক, চাকরিজীবী এবং বড় ব্যবসায়ীরাও। অনেক বিত্তবান সাথে নিয়ে আসতেন নানা ধরনের ইফতারসামগ্রীও। আসরের নামাজের পর হতেই সারিবদ্ধভাবে রোজাদাররা সুশৃঙ্খলভাবে বসে পড়তেন। মাইকে ইসলামী মাসালা-মাসায়েল সম্পর্কিত ওয়াজ নসিহত করা হত।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট