চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ভুয়া নিলাম কাগজে চলছে দ্রুতগতির মোটরসাইকেল

নাজিম মুহাম্মদ 

৫ মে, ২০২১ | ১২:৫৭ অপরাহ্ণ

আমদানি-নিষিদ্ধ দ্রুতগতির মোটরসাইকেল প্রকাশ্যে চলছে সড়কে। প্রশাসনের চোখ এড়াতে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে সীমান্ত পার করে আনা এসব মোটরসাইকেল সড়কে নামানো হচ্ছে কাস্টমস নিলামের ভুয়া রেজিস্ট্রেশন নম্বরে। বাজারমূল্যের অর্ধেক দাম হওয়ায় যুবকদের কাছে দিন দিন এ মোটরসাইকেলের চাহিদা বাড়ছে।

পুলিশের অনেক সদস্য এ ধরনের মোটরসাইকেল ব্যবহার করছেন দিব্যি। দ্রুতগতির এসব মোটরসাইকেলের সাথে ট্রাফিক সার্জেন্টদের মোটরসাইকেলের পাল্লা দেয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন ট্রাফিক সার্জেন্ট। ১৬০ সিসি (কিউবিক সেন্টিমিটার) ইঞ্জিনের বেশি মোটরসাইকেল সড়কে চলাচলের নিয়ম না থাকলেও অবৈধপথে আসা প্রতিটি মোটরসাইকেল ১৮০ থেকে ২০০ সিসির।

সংঘবদ্ধ একটি সিন্ডিকেট বেনাপোল ও কুমিল্লা সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারত থেকে এসব মোটরসাইকেল সীমান্ত পার করে আনা হচ্ছে দেশে। পরবর্তীতে বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা মোটরসাইকেল ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।  নগরীর আগ্রাবাদ ও মুরাদপুর এলাকার বেশ কয়েকজন মোটরসাইকেল ব্যবসায়ী জানান, সীমান্ত পার করে আনা মোটরসাইকেলগুলো ‘বর্ডারক্রস’ গাড়ি হিসাবে চিহ্নিত। বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেট শুল্কফাঁকি দিয়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে  মোটরসাইকেলগুলো নিয়ে আসছে।

ভুয়া রেজিস্ট্রেশন নম্বর লাগিয়ে এসব মোটরসাইকেল নগরীর সড়কে চলছে অবাধে। শো রুমের চেয়ে অর্ধেক দামে মোটরসাইকেলগুলো বিক্রি হওয়ায় প্রকৃত মোটরসাইকেল ব্যবসায়ীরা আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি চট্টগ্রাম অঞ্চলের সহকারী পরিচালক  মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম জানান, দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ১৬০-এর চেয়ে বেশি সিসির মোটরসাইকেল আমদানি করা হয় না। কারণ সর্বোচ্চ ১৬০ সিসির মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন দিয়ে থাকে বিআরটিএ।

তৌহিদুল ইসলাম বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে স্পষ্টভাবে নিদের্শনা দেয়া আছে, নিলামে দেয়া গাড়ি কখনো রেজিস্টেশন নম্বর দেয়া যাবে না। কোনো গাড়ি নিলামে দেয়া হলে সেই গাড়ির যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু ঐ গাড়ি সড়কে চালানো যাবে না। তবে  আদালত  থেকে একটি গাড়ি কী হিসাবে নিলাম দিয়েছে তা দেখতে হবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মোটরসাইকেলগুলো অকেজো হিসাবে নিলাম দেয়। 

আর অকেজো হিসাবে নিলামে নেয়া কোন যানবাহনকে রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেয়া হয় না।  নিলামের গাড়ি  রেজিস্ট্রেশনের জন্য খুব একটা আমাদের কাছে আসে না। ১৬০ এর চেয়ে বেশি সিসির মোটরসাইকেল যেহেতু আমদানি-নিষিদ্ধ, সেক্ষেত্রে বেশি সিসির বাইক নিলাম না দেয়া উচিত বলে জানান বিআরটিএ’র সহকারী-পরিচালক। পুলিশ চাইলে অভিযান চালিয়ে এ ধরনের মোটরসাইকেল আটক করতে পারে।

জানতে চাইলে নগর ট্রাফিক পুলিশের উত্তর জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ আলী হোসাইন জানান, ২০০ সিসি মোটরসাইকেল অনুমোদনের ব্যাপারে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে একবার  আলোচনা হয়েছিলো। তবে বিষয়টি ফাইনাল নয়। আর নিলামের কাগজ দিয়ে কখনো রেজিস্ট্রেশন নম্বর নেয়া যাবে না। অনেকে আছেন ভুয়া নিলামের কাগজ দিয়ে মোটরসাইকেল ব্যবহার করছে। অকশন কিংবা নিলাম লিখা বেশ কিছু মোটরসাইকেল ইতিমধ্যে আমরা আটক করেছি।

ডিসি আলী  হোসাইন বলেন, পুলিশ সদস্যদের ইতিমধ্যে এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারা যেন শো রুম থেকে গাড়ি কিনেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরী ও জেলায় ‘কাস্টমস নিলাম’, ‘অকশন’ লেখা আমদানি-নিষিদ্ধ মোটরসাইকেল ব্যবহার করছে উঠতি বয়সী যুবকরা। গাড়িগুলোর অধিকাংশ ১৮০ থেকে ২০০ সিসির। পাশাপাশি পুলিশের অনেক কর্মকর্তাও একই ধরনের খ্যাতনামা ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল ব্যবহার করছেন।

বাজারে ইয়ামাহা কোম্পানির একটি আর ওয়ান ফাইভ গাড়ির মূল্য চার লাখ টাকা হলেও কাস্টম নিলামের কাগজসহ একই মানের গাড়ি দুই লাখ ৪০ হাজার টাকায় অনায়াসে পাওয়া যাচ্ছে। একইভাবে এক লাখ ৯২ হাজার টাকা দামের এপাসি এক লাখ ২০ হাজার, দুই লাখ ৯০ হাজার টাকা দামের ফেজার এক লাখ ৬০ হাজার, দুই লাখ ৭৫ হাজার টাকা দামের এফজেডএস এক লাখ ৪৫ হাজার টাকায় সরবরাহ করা হয় ভুয়া কাস্টম নিলামের কাগজ দেখিয়ে। নিলামের গাড়ি স্বাভাবিকভাবে পুরাতন হয়ে থাকে। কিন্তু কাস্টম নিলাম লেখা সম্বলিত এসব মোটরসাইকেল সদ্য বাজার থেকে কেনা চকচকে নতুন। নিলামের গাড়ি রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেয়ার নিয়ম না থাকলেও কাস্টম নিলাম লেখা  মোটরসাইকেল এফজেডএসের ক্ষেত্রে ৩৫  থেকে ৪০ হাজার,  আর ওয়ান ফাইভ, ফেজার, জিক্সার পালসার এপাসি ৭০ হাজার টাকা দিলে রেজিস্ট্রেশন নম্বরও  পাওয়া যায় অনায়াসে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট