চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

করোনায় বাসা ভাড়া: ভবনে ভবনে এখনও ‘টু-লেট’

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন 

৪ এপ্রিল, ২০২১ | ১:৩১ অপরাহ্ণ

সমীর দাশ (ছন্মনাম)। চাকরি করতেন একটি বেসরকারি কোম্পানিতে। অন্তত ২০ বছর ধরে বসবাস করে আসছিলেন নগরীর ঘাটফরহাদবেগ এলাকায়। অনেকটা স্বচ্ছলভাবে জীবনযাপন করে আসছিলেন। কিন্তু গত বছর করোনায় তার জীবনে ছন্দপতন ঘটে। হন চাকরিচ্যুত। পড়েন চরম আর্থিক সংকটে। সাত মাসের বাসা ভাড়া বাকি, সন্তানের পড়াশোনা ও সংসার খরচ-সবমিলে চোখে অন্ধকার দেখেন তিনি। বকেয়া বাসা ভাড়ার বিষয়টি থানা-পুলিশ পর্যন্ত গড়ায়।  গত নভেম্বর মাসে নগরীর বাসায় ছেড়ে বোয়ালখালীতে নিকটাত্মীয়ের বাড়িতে ঠাঁই নেন।

শুধু সমীর দাশ নন, গত বছর করোনায় চাকরিচ্যুত ও ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে কয়েক হাজার মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে আশ্রয় নিয়েছেন। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকজন বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। নগরীর বাসা ছেড়ে গ্রাম বা অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। 

কাতালগঞ্জ আবাসিক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জসিম উদ্দিন পূর্বকোণকে বলেন, ‘এই আবাসিক এলাকায় ৪০টি আবাসিক প্লট ও ১০টি অনাবাসিক প্লট রয়েছে। বিশেষ করে সন্তানদের পড়াশোনার জন্য এই আবাসিককে প্রাধান্য দেয় অভিভাবকেরা। গত বছর লকডাউনের পর থেকে স্কুল কলেজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে অনেক লোক গ্রাম বা নিজ বাড়িতে চলে যায়।’ তিনি দাবি করেন, গত বছরের পর এখনো প্রায় ৩০ শতাংশ বাসা খালি রয়েছে। তিনি বলেন, বাসা ভাড়া হচ্ছে ২০-২৫ হাজার টাকা। চাকরি বা সন্তানদের পড়াশোনার জন্য বাসা ভাড়া নেন অধিকাংশ লোক। আয়-রোজগার কমে যাওয়ায় এবং স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় এখনো অনেকেই শহরমুখী হননি। তাই অনেক বাসা এখনো খালি পড়ে রয়েছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা, পাঁচলাইশ, কাতালগঞ্জ, চকবাজার, বহদ্দারহাট এলাকাসহ বিভিন্ন আবাসিকের ভবনে ভবনে ঝুলছে ‘হাউস টু লেট’ বা ‘বাসা ভাড়া দেওয়া হবে’ সাইনবোর্ড। প্রায় বাসার গেটে এই ধরনের লেখা ছোট ছোট সাইনবোর্ড ঝুলছে। গত বছর করোনা সংক্রমণ মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় ২৬ মার্চ থেকে শুরু হয় লকডাউন। সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। কর্মহীন হয়ে অনেকেই গ্রামে চলে যান। করোনার পর জনজীবন কিছুটা সচল হলেও ‘টু-লেট’ বা ‘বাসা ভাড়া’ দেওয়া হবে-এর বড় ধরনের পরিবর্তন হয়নি। এখনো নগরীর বিভিন্ন আবাসিক, অন্যান্য স্থানে বাসা খালি দেখা যায়।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিজীবী মো. হাসান উল হক বলেন, করোনা সংক্রমণের পর প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন চাকরিচ্যুত হয়। অনেকের বেতন কমে যায়। আয় কমলেও সংসার খরচ উল্টো বেড়েছে। ভোগ্যপণ্যের দাম শুধু বাড়ছেই। মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। তাই গ্রামে ফিরে যাওয়া লোকজন আর শহরে ফিরতে পারছেন না।’

ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অর্থনীতিবিদ প্রফেসর সিকান্দর খান বলেন, ‘উন্নয়নের ধারায় উন্নত জীবন ও আয়-রোজগারের খোঁজে মানুষ শহরে আসে। আয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে না পারায় অনেক মানুষ এখনো শহরে ফিরতে পারেননি।’ করোনার প্রথম ধাক্কার মাঝখানে কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসছিল। মানুষ শহরে আসতে শুরু করেছিল। এভাবে ৬ মাস সময় পেলে শহর জমে যেত। এখন তো আবার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। মনে হচ্ছে, মানুষ আবারও দুদর্শায় পড়ে যাবে।

পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকা কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. আবু সাঈয়েদ সেলিম পূর্বকোণকে বলেন, ‘পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায় চিকিৎসক সংক্রান্ত লোকজনের বসবাস বেশি। এছাড়াও শিক্ষা ও চিকিৎসাসেবার সুবিধার কারণে মানুষ পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায় বসবাস করতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন। কর্মক্ষেত্রের কারণে অধিকাংশ বাসিন্দাকে ভাড়া বাসায় থাকতে হয়। তাই অন্যান্য আবাসিকের তুলনায় এখানে বাসা খালি থাকছে না।

তবে ওই এলাকার কামরুল হাবিব নামে এক বাড়িওয়ালা বলেন, পাঁচ মাস ধরে তার দুটি প্ল্যাট খালি রয়েছে। অথচ অন্য সময়ে খালি থাকত না। টু লেট সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেওয়ার পর পরই ভাড়াটিয়া পাওয়া যেত।

চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা কল্যাণ সমিতির (বি ব্লক) সভাপতি এডভোকেট এডভোকেট জিয়াউদ্দিন আহাম্মদ পূর্বকোণকে বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, ব্যবসা-বাণিজ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ও চাকরি হারিয়ে অনেকেই গ্রামে ফিরে গেছেন। দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। তাই সরকার বাড়িওয়ালাদের প্রণোদনার মাধ্যমে বাড়ি ভাড়ায় ছাড়ের সুযোগ করে দিলে দুই পক্ষই উপকৃত হবে।

বহদ্দারহাট এলাকার একটি ভবনের মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, করোনা সংক্রমণের পর অনেক ভাড়াটিয়া বাসা ছেড়ে চলে গেছেন। অনেকেই বকেয়া ভাড়া পরিশোধ করতে পারেননি। ভাড়া আদায় করতে না পারায় বড় অঙ্কের গ্যাসের বিল আটকে যায়। তা নিয়ে এখন বিপত্তিতে পড়েছি।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট