চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

মাতৃদুগ্ধ অমিয় সুধা

৩১ জানুয়ারি, ২০২০ | ৪:৪৫ পূর্বাহ্ণ

ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুস্থ-সবল হিসেবে গড়ে তুলতে শিশুকে মাতৃদুগ্ধ পানের বিকল্প নেই। কিন্তু অজ্ঞতা ও সচেতনতার অভাবসহ নানা কারণে বিষয়টি তেমন গুরুত্ব পাচ্ছে না সবার কাছে। ফলে নবজাতক শিশুকে কৌটার দুধ খাওয়ানোর যুক্তি অবান্তর হলেও সাধারণ মানুষ সে দিকেই ঝুঁকে থাকে। শিশুর সুস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হলেও কৌটার দুধ বা ফর্মুলা গুঁড়ো দুধের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে অনেকেই। আবার শিশুর জন্যে শালদুধ অতি জরুরি হলেও নানা কুসংস্কার ও অজ্ঞতার কারণে অনেকেই শালদুধ দেয় না নবজাতককে। চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদদের মতে, জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে শালদুধ খাওয়ালে নবজাতকের মৃত্যুর হার ৩১ শতাংশ পর্যন্ত রোধ করা সম্ভব। কিন্তু এ বিষয়ে সাধারণ মানুষদের অনেকেরই ধারণা নেই। উপরন্তু তারা মনে করে থাকে শালদুধ শিশুর জন্যে ক্ষতিকর। ফলে দেশের নবজাতকদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশই মায়ের দুধের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এতে তারা নানা রোগেও আক্রান্ত হয়। এ ধরনের চিত্র স্বাস্থ্যবান জাতি গড়ার পথে অন্তরায়।

নবজাতকের সুস্থ-সুন্দর করে বেড়ে ওঠার জন্য মাতৃদুগ্ধ অপরিহার্য। আমাদের একটি প্রচার আছে, একটি বাচ্চার জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে মাতৃদুগ্ধ পান করাতে হবে। এক ঘণ্টা সময়টা বলা মানে হলো মানুষকে সচেতন করার জন্য। বাস্তব বিষয় হলো, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। কারণ প্রথম যে দুধ বের হয়, শালদুধ, একে বলা হয় শিশুর প্রথম টিকা। যেহেতু সেটি লিভিং সেল হিসেবে বাচ্চার শরীরে যায়, এ ক্ষেত্রে একে আমরা জীবন্ত টিকাও বলতে পারি। এটি ওই শিশুটিকে অনেক রোগের হাত থেকে রক্ষা করে; রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে। যে শিশু জন্মের পর থেকে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শুধু মায়ের দুধের ওপর বেঁচে থাকবে, ওই শিশুর অনেক রোগ কম হয়। মায়ের শরীরে দুধটা শিশুর জন্য এমনভাবেই তৈরি হয়, এটা সম্পূর্ণ পুষ্টিগুণসম্পন্ন। সব ধরনের খাবার এর মধ্যে রয়েছে। এ ছাড়া এর মধ্যে একটি বিশেষ প্রোটিন ও আমিষ আছে। এ জিনিসটি এখন পর্যন্ত সাপ্লিমেন্ট করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু দুঃখজনকভাবে দেশে মাতৃদুগ্ধ দানের হার আশানুরূপ নয়।
নানা গবেষণা রিপোর্ট বলছে, অপুষ্ট মা, বেকার বা কম উপার্জনের বাবা-মা, কম পারিবারিক আয়, শিশুকে বুকের দুধ না খাওয়ানো, অপর্যাপ্ত পয়ঃব্যবস্থা, খাদ্যনিরাপত্তাহীনতাসহ নানা কারণে দেশে অপুষ্টির ঝুঁকি বাড়ছে। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেও অপুষ্টির প্রকোপ অনেক বেশি। প্রাপ্তবয়স্ক একজন বাংলাদেশি চাহিদার চেয়ে দৈনিক গড়ে ২৪০ কিলোক্যালরি শক্তি কম গ্রহণ করেন। ধনী-গরিব উভয় শ্রেণির মানুষের মধ্যেই এ সমস্যা প্রকট। এক পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, আশ্চর্যজনকভাবে সমাজের সবচেয়ে ধনিক শ্রেণির ১৫ দশমিক ৪ শতাংশ শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে। আর সবচেয়ে দরিদ্র শ্রেণির ২১ দশমিক ১ শতাংশ শিশু অপুষ্টির শিকার। পুষ্টিবিদদের মতে, ত্রুটিপূর্ণ খাদ্যাভ্যাসের কারণে ধনিক শ্রেণিতে অপুষ্টি দেখা দেয়। পুষ্টি ঠিক রাখতে ঠিক সময় অন্তর বৈচিত্র্যপূর্ণ মানসম্পন্ন পর্যাপ্ত খাবার শিশুকে খাওয়াতে হয়। সচেতনতার অভাবে ধনিক পরিবারের অনেকে তা খাওয়ান না। আর দরিদ্ররা অর্থের অভাবে তা খাওয়াতে পারেন না। পুষ্টিবিদদের মতে, নবজাতককে ছয় মাস পর্যন্ত একমাত্র মায়ের দুধই খাবার হিসেবে দিতে হবে। তবে ছয় মাস বয়সের পর শিশুর উচ্চতা ও ওজন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মায়ের দুধের পাশাপাশি বাড়তি খাদ্যের দরকার হয়। এ বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা গেলে শিশুর পুষ্টিঘাটতি অনেকটাই কমে যাবে।

শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য মায়ের দুধের কোনো বিকল্প নেই। ছয় মাস পর্যন্ত শিশুর জন্য মায়ের দুধই একমাত্র পরিপূর্ণ ও নিরাপদ খাবার। এ বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে যুৎসই কর্মসূচি থাকা দরকার। সরকারের উচিত একটি সুস্থ প্রজন্মের স্বার্থে এ ব্যাপারে জোরালো পদক্ষেপ নেয়া। পবিত্র কুরআন শরিফের সূরা বাকারার ২৩৩ আয়াতে শিশুকে দুই বছর পর্যন্ত মায়ের দুধ খাওয়ানোর নির্দেশনা আছে। এটি নবজাতকের জন্মগত অধিকার হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এ বিষয়ে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা দরকার। নবজাতকের এই অধিকার সুনিশ্চিত করতে রাষ্ট্রের নানামুখী পদক্ষেপের পাশাপাশি সমাজের সচেতন মানুষদেরও জনগণকে সচেতন করতে ভূমিকা রাখা দরকার।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট